ভূগর্ভস্থ একটি কক্ষ। সেখানে রাখা একের পর এক তাক। তাকে সারি করে রাখা সাজানো সাদা পাত্র। প্রতিটিতে আলাদা নম্বর সেঁটে দেওয়া। কী আছে পাত্রগুলোর ভেতরে? শুনলে অবাক হতেই হবে। প্রতিটি পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে মানুষের মস্তিষ্ক। তা–ও আবার এক–দুটি নয়, ৯ হাজার ৪৭৯টি!
ওই কক্ষের অবস্থান ডেনমার্কের ইউনিভার্সিটি অব ওডেন্সে। মস্তিষ্কগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে মানসিক রোগীদের মরদেহ থেকে। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে এই কাজ শুরু হয়। চলে আশির দশক পর্যন্ত। ডেনমার্কের খ্যাতনামা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এরিক স্টমগ্রেন তাঁর জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন মস্তিষ্কগুলো সংগ্রহ করে।
মনোরোগবিদ্যার ইতিহাস বিশেষজ্ঞ জেসপার ভ্যাকজি ক্রাগের ভাষ্যমতে, ওই মস্তিষ্কগুলো গবেষণার জন্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। এরিক স্টমগ্রেন ও তাঁর সহযোগীদের বিশ্বাস ছিল, সেগুলো থেকে তাঁরা মানসিক রোগের বিষয়ে তথ্য পাবেন।
মস্তিষ্কগুলো সংগ্রহ করা হতো ডেনমার্কের বিভিন্ন মনোরোগ হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মরদেহ থেকে। তবে এ কাজে ওই রোগী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হতো না। কারণ, সে সময় মানসিক রোগীদের অধিকারের বিষয়টি মোটেও গুরুত্ব পেত না।
ইউনিভার্সিটি অব ওডেন্সে মস্তিষ্কের ওই সংগ্রহশালার পরিচালক মার্টিন ওয়াইরেনফেল্ডৎ নেইলসেন। তিনি বলেন, সে সময়ে ডেনমার্কে মানসিক রোগ নিয়ে যাঁরা মারা গিয়েছিলেন, তাঁদের সবার ময়নাতদন্ত করে মস্তিষ্ক সংগ্রহ করা হয়েছিল।
তবে দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই রোগীদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন হয় ডেনমার্ক। ময়নাতদন্তের পদ্ধতিতেও আনা হয় পরিবর্তন। এসবের জেরে ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে মস্তিষ্ক সংগ্রহ বন্ধ করা হয়। এরপর বিতর্ক ওঠে আগে থেকে সংগ্রহে থাকা বিপুল পরিমাণ মস্তিষ্কগুলোর কী হবে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া, সেগুলো গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা হবে।