বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে বিচারিক ক্ষমতা চায় ইউজিসি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে তদন্তের পাশাপাশি বিচারিক ক্ষমতা চায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিশনের ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনে উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে প্রতিবেদনটি পেশ করবেন ইউজিসির ৯ সদস্যের একটি দল।

ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়েছে, পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়মের জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ করার বা বিচারিক ক্ষমতা নেই ইউজিসি’র। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি, সনদ বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম ইত্যাদি হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা ইউজিসি’র থাকা প্রয়োজন। ইউজিসি বিভিন্ন অনিয়মের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ এবং দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইউজিসি’র সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতেও পারে, আবার নাও পারে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক সময় লেগেও যায়। নিজেই যেন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে সেজন্য ইউজিসিকে ক্ষেত্রবিশেষে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করা যেতে পারে। 

এতে আরও বলা হয়েছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে প্রায়শই স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ জাতীয় গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং যোগ্য জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে একটি স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য ইউজিসি প্রণীত নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের শিথিলতা প্রসঙ্গে ইউজিসির সুপারিশে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স ও সময়ের বাধ্যবাধকতা শিথিল করা যেতে পারে। এছাড়া, ভর্তি পরীক্ষায় একাধিকবার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা যেতে পারে। উচ্চমাধ্যমিক শেষ করার পরে কোনো শিক্ষার্থী যেকোনো সময় ভর্তির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। একইভাবে, একজন শিক্ষার্থীকে বিষয় পরিবর্তন করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান করতে হবে উল্লেখ করে সুপারিশে বলা হয়েছে, কোন বিভাগে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কি হবে সেটি উল্লেখ করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। কোনো শাখায় ৪০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। একই সঙ্গে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের অনধিক তিন মাসের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সনদ জালিয়াতি প্রতিরোধ করতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। ফ্রন্টিয়ার প্রযুক্তির সহায়তায় সার্টিফিকেট ব্লকচেইন রিপোজিটরিতে সংরক্ষিত হবে। হার্ডকপি সার্টিফিকেটে কিউ আর কোড যোগ করা হবে। এর ফলে, স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন/ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে খুব সহজে সনদ যাচাই করা যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি জটিলতা নিরসনে সরকার প্রয়োজনে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করা যেতে পারে সুপারিশে বলা হয়েছে, ভর্তি পরীক্ষার শিডিউল তৈরিসহ শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা ও পছন্দের ওপর ভিত্তি করে ভর্তিপরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করবে এ কমিশন। এছাড়া, এই কমিশন মেধাক্রম, ভর্তি, অবস্থান নিরূপণও করবে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে সুস্পষ্ট নীতিমালা, উপাচার্য নিয়োগের ইউজিসির হস্তক্ষেপ, শিক্ষার্থীদের নৈতিক অধঃপতন ঠেকাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি যুক্ত করা, সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট গঠন করা, সমুদ্র সম্পদের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিশেষায়িত গবেষণা পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশেষ গবেষণা তহবিল সরবরাহ করাসহ মোট ১৭ টি সুপারিশ করার কথা রয়েছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029199123382568