বিষণ্ন পৃথিবী বিদীর্ণ জীবন

কে জি মোস্তফা |
আমাদের শৈশব-কৈশোরে প্রকৃতি দরাজ হাতে উন্মুক্ত করে দিতো তার সম্পদ। নিসর্গ  ছিল কত বাক্সময়। বড় বড় গাছে ঢাকা বনপথ, মাঝে মাঝে পাখির ডাক। আকাশজুড়ে বিছিয়ে থাকতো ঘননীল সন্ধ্যা। ফুটে থাকতো কত নামী-অনামী লাল নীল গোলাপি হলুদ ফুল। পরম মমতায় ফুলের গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা। অসীম অনন্ত প্রকৃতির বুকে অনুচ্চারিত অব্যক্ত অনুভূতির সে এক নীরব প্রকাশ। সেই সব দৃশ্য প্রাণ-মন ভরে রাখতো। সেই টিয়া গ্রাম ফিঙে নদী আজ আর নেই। এখন সে সব এক মৃত সময়ের ‘এলিজি’। 
 
সম্প্রতি গবেষকরা বলেছেন, বনাঞ্চল নষ্ট করে ও বন্যপ্রাণী শিকার ও ভক্ষণ করার ফলে প্রাণীর বহন করা জীবাণু ক্রমাগত মানুষ ও গবাদি পশুর  সংস্পর্শে চলে আসছে। আর এতে নতুন নতুন জীবাণুর সৃষ্টি হচ্ছে এবং নতুন সংক্রামক রোগের প্রায় ৭০ শতাংশ বিভিন্ন প্রাণী থেকে উৎপত্তি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কোভিড ১৯, সার্স, বার্ডফ্লু, ইবোলা, এইচআইভি প্রভৃতি।
সে যাইহোক, একসময় আমাদের রাজধানী ঢাকা থেকে ঘুরে গিয়ে এক বিদেশি নাকি মন্তব্য করেছেন, ঢাকা শহর ইঁটের তৈরি এক বস্তিশহর। মনে পড়ে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার চরণ, ‘ইঁটের পর ইঁট, মাঝখানে মানুষ কীট’। অস্বীকার করার উপায় নেই আজকাল এটাই আমাদের শহুরে জীবনে এক নিদারুণ বাস্তবতা।
 
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে, এবং ইদানীং গ্রামগঞ্জে ইঁটের পর ইঁট এমনভাবে গাঁথা হচ্ছে, এমনভাবে যত্রতত্র আকাশচুম্বী ভবন নির্মিত হচ্ছে, মাঝখানে মানুষের অবস্থা দাঁড়িয়েছে কীটেরই মতন। উইপোকা যখন টিবি তৈরি করে তখন তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে, যাতে বসবাসের স্বাচ্ছন্দ্য এবং নিরাপত্তা সমস্যা না হয়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তাদের সেই পরিকল্পনা প্রায় অপরিবর্তিত আকারে সঞ্চারিত হয়ে আসছে। 
 
আমরা সামাজিক মানুষ। সামাজিক মানুষ যখন বসতি নির্মাণ করে তখন তাদেরও মনে থাকে সচেতন কিছু ইচ্ছা। ইচ্ছাগুলো হচ্ছে সম্পদ আর স্বাচ্ছন্দ্যের। কিন্তু একসময় দেখা যায় ওই সম্পদ আর স্বাচ্ছন্দ্য জমা হতে হতে বিশাল এক বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেই বোঝার নিচে চাপা পড়তে থাকে সাধারণ মানুষ। মানুষের জীবনে এটা এক ধরনের নির্বাসন। এই নির্বাসনের সমস্যাটা যদি মানুষ বুঝতো তবে বৃহত্তর সমাজের পক্ষে অনেকটা কল্যাণকর হতো। 
 
আসলে রাশি রাশি সম্পদ ও স্বাচ্ছন্দ্য জড়ো করতে গিয়ে বর্তমান যুগের মানুষ তার পশ্চাৎপট খুইয়েছে। সেই পশ্চাৎপট হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতিকে মানবসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবা যায় না, প্রতিপক্ষও ভাবা যায় না। কেননা মানুষ প্রকৃতির সন্ততি। সন্ততি শব্দটার মূলগত অর্থ নিরবচ্ছিন্নতা বা ধারাবাহিকতা। অর্থাৎ প্রকৃতির সাথে মানুষ অচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। কিন্তু ইদানিং মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে সৃষ্ট এক বিরোধপূর্ণ সম্পর্ক পৃথিবীর পরিবেশকে বিপদজনক পরিণতির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক শিল্প-সভ্যতা নিঃশেষ করে দিচ্ছে পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ বনভূমি এবং বন্যপ্রাণী। দূষিত করছে বাতাস ও পানি।
বিগত দু‘শ বছর ধরে বিশ্বব্যাপী লাগামছাড়া শিল্পায়নের কারণে বায়ুমণ্ডলে ব্যাপকভাবে বিষাক্ত কার্বন ডাইক্সাইড গ্যাস নির্গত হয়ে আসছে। আন্তর্জাতিকভাবে ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অধিকাংশ ক্ষেত্রে কলকারখানা গড়ে না ওঠায় এ বিপত্তি। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে পুরাতন রুগ্ন শিল্প কারখানাগুলো আর্থিক অনটনের কারণে যেমন দূষণরোধী প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারছে না, তেমনি নতুন কারখানা গড়ার ক্ষেত্রে আইনকানুন সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না। তাছাড়া আমাদের কৃষি ব্যবস্থা এখনও পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত নয়। ফলে বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ সামলাতে কোপ পড়েছে অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর ওপর। 
 
অপরদিকে বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের কর্মসূচিতে রয়েছে ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংরক্ষণের আওতায় থাকছে শুধু বৃহদাকার মেরুদণ্ড প্রাণীদের, বিশেষ করে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের। কিন্তু অমেরুদণ্ডী ছোট ছোট প্রাণীদের রক্ষার তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। অতিক্ষুদ্র প্রাণীরা তো রয়ে গেছে ধর্তব্যের বাইরে। একইভাবে অরণ্যের বৃহৎ প্রজাতির বৃক্ষ তাদের অর্থনৈতিক গুরুত্বের জন্য সংরক্ষিত হচ্ছে, কিন্তু ছোট ছোট উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম ক্রমশ পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। 
 
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে জৈব-বৈচিত্র্যের ওপর। জৈব-বৈচিত্র্যের সংরক্ষণ বলতে বোঝায় মানুষসহ যাবতীয় প্রাণী, উদ্ভিদ, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং সর্বপ্রকার জেনেটিক উপদানের যথাযথ সংরক্ষণ।
বলা বাহুল্য, মানুষ প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সম্পর্কটা মোটেও মানুষ বনাম প্রকৃতি নয়। জৈব-তত্ত্ব অনুযায়ী পৃথিবীতে জীবের সৃষ্টি বা অবলুপ্তি নির্ভর করে ’যোগ্যতমের উদবর্তনে’র ধারায়। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, মানুষ হবে কোনো জীবের বিলুপ্তির কারণ। শুধু পরিবেশের লাবণ্যের জন্যে নয়, আত্মরক্ষার তাগিদেও মানুষকে হতে হয় প্রকৃতিপ্রেমী তথা প্রাণীপ্রেমী। 
প্রকৃতির সাথে মানুষের, প্রাণের সাথে অপ্রাণের, এই যে ধারাবাহিকতা- আধুনিক পরিবেশ বিজ্ঞানে তা স্বীকৃত। আকাশ আর মাটি, সমুদ্র আর বাতাস, উদ্ভিদ আর প্রাণীজগৎ, সবকিছু মিলেমিশে পৃথিবী নামক আমাদের এই গ্রহটি আপন কক্ষপথে আবর্তিত। প্রাণ আর অপ্রাণ মিলেই এ পৃথিবী। এর প্রতিটি খণ্ডাংশ অন্য সমস্ত অংশের সাথে খুবই সক্রিয়ভাবে যুক্ত। কোনো কারণে এক অংশে যদি কোনো বদল আসে কিংবা আলোড়নের সৃষ্টি হয়, তার প্রভাব অচিরেই অন্য অংশে গিয়ে পড়বে। এক অংশে যদি কোনো আঘাত আসে তবে সমস্ত গ্রহটাই সাড়া দেবে তাতে। যেমন কম্পিউটারের কোনো একটি সূক্ষ্মাংশ বিগড়ে গেলে গোটা যন্ত্রই বিকল হয়ে যায়, তেমনি মানুষ, মাটি, জল, বায়ু সবকিছু নিয়ে পৃথিবী পরস্পরের উপর নির্ভরশীল, পরস্পর ভারসাম্যময় এক পরিবেশ বিরাজমান। কোথাও এতটুকু আঘাত লাগলে ছিন্ন হয়ে যাবে ইকোলজির বন্ধন। জলবায়ু তাপমাত্রা আর্দ্রতা ও অম্লতার পরিমাণের সামান্যতম হেরফের পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন এমনকি লুপ্ত হয়ে যেতে পারে। 
 
সুতরাং আজ এটা স্পষ্ট যে, মানবজাতির অস্তিত্বের প্রশ্নে প্রকৃতির সাথে সংঘাত নয়, বরং পৃথিবীর অন্যান্য প্রাণী ও কীটপতঙ্গের সাথে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থান বজায় রেখে আমাদের চলতে হবে। 
বলা বাহুল্য, পরিবেশের সাথে উন্নয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। নাহলে সমস্যা হবে মানুষেরই। যদিও বায়ুপ্রবাহে মাটি থেকে প্রচুর ধূলিকণা উঠে আসে এবং নানাপ্রকার রোগজীবাণু, ভাইরাস ইত্যাদি বাতাসে ভেসে বেড়ায়, সাথে প্রচুর উল্কাভস্ম এবং সমুদ্র থেকে ভেসে আসা অজস্র লবণকণা। প্রকৃতিতে অবশ্য স্বাভাবিকভাবে এ রকম বায়ুদূষণ সবার অলক্ষ্যে সতত ঘটে চলেছে। 
 
কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্রুত প্রসারের ফলে আজকাল বায়ুদূষণের মাত্রা বহুগুণ বেড়ে গেছে। কল-কারখানা, যানবাহন ইত্যাদিতে পেট্রোল কয়লা মোবিল পোড়ানো থেকে নির্গত ধোঁয়া, সালফার ডাইঅক্সাইড, হাইড্রো কার্বন বাষ্প, সীসা, নাইট্রোজেন অক্সাইড ইত্যাদি মুক্ত বাতাসকে প্রতিনিয়ত বিষিয়ে তুলছে। ধোঁয়া আর কুয়াশার মিশ্রণে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হচ্ছে তার দাপটও কম নয়। এটা শ্বাস-প্রশ্বাসে বিঘ্ন ঘটায়। 
 
ধোঁয়াশার মধ্যে কিছু ওজোনগ্যাসও থাকে যা উদ্ভিদের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকারক। বায়ুদূষণ আধুনিক মানুষের দোরগোড়ায় নেকড়ে বাঘ হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। বায়ুদূষণের এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া একান্তভাবে কাম্য, তা যে কোন মূল্যেই হোক। 
বায়ুদূষণ প্রতিরোধে বনানী বা গাছপালার ভূমিকা অনস্বীকার্য। গাছপালা হচ্ছে প্রাণের প্রতিনিধি। 
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, জাপানিরা বাগান তৈরি বা উদ্যান রচনাকে উঁচু দরের শিল্পকলা মনে করে। মাটির পৃথিবীকে ঘিরে তারা মস্তবড় একটা ত্রিমাত্রিক পট তৈরি করে যাতে বাসিন্দাদের মনে বস্তুগত এবং চিত্তগত অবকাশের বোধ জাগে। ইঁট-কাঠ তো মানুষের রাষ্ট্রিক তথা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঘনীভূত চেহারা। কিন্তু জাপানিদের হাতে আকাশ মাটি গাছপালা একযোগে কথা বলে ওঠে। আকাশ তো সর্বত্রই আছে। আকাশকে কেন আড়াল রাখা হবে। প্রান্তর যেখানে ক্রমশ সংকুচিত হয়ে আসছে, সেখানে আকাশকে যথাসম্ভব অক্ষত রাখা দরকার। আকাশ তো শুধু স্কাই নয়, তার অন্য একটা প্রতিশব্দ স্পেস। আকাশকে অনুভবের প্রয়োজন মানুষ তথা প্রাণীমাত্রেরই রয়েছে। সেটা তার সর্বাঙ্গীণ স্বাস্থ্যের পক্ষে অপরিহার্য। 
 
নতুন যুগের বিভিন্ন নির্মিত প্রতিবেশের মধ্যে বৈচিত্র্য যতই থাকুক, এক জায়গায় কিন্তু মিল থাকতে হবে। সেটা হলো ত্যাগ আর ভোগের সামঞ্জস্য বিধানের তাগিদ। 
 
যাইহোক, পরিবেশ ও প্রতিবেশ শুধু ইঁটকাঠের তৈরি হলে হবে না। তার পেছনে থাকতে হবে একটা গোটা সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা, ভালোমন্দ বোধ, রুচি আর আদর্শ। কিন্তু সমাজের কল্যাণকর চিন্তার মধ্যে যদি গোড়াতেই গলদ থাকে, সবকিছুকে ছাপিয়ে যদি সেখানে কেবল ভোগ আর সুখ প্রাধান্য পায়, তা হলে সেই ভোগের উচ্ছ্বিষ্ট স্বরূপ আবর্জনা জমতে থাকবে। আর সেই আবর্জনায় ইঁটের পরে ইঁট স্তূপীকৃত হয়ে তার মধ্যে চাপা পড়ে যাবে মানুষরূপী কীট।                   
বলাবাহুল্য ,বিশ্বপ্রকৃতি কঠিন ঋজু নিয়মে চলে। আমাদের গ্রহের নাম পৃথিবী। মানুষের জন্যে উন্মুক্ত উদার আকাশের অনাবিল নীলিমা যেন উদাসীন জীবনের পাঠ। প্রকৃতি কৃত্রিমতা বোঝে না। শহুরে ভদ্রতা-সভ্যতা জানে না। নিজেকে সাজানোর জন্যে তার প্রয়োজন হয় না কোনো প্রসাধনের।
 
আজকের পৃথিবীর আসল বিপদ শুধু প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়, বরং মানুষের নিজের হাতে তৈরি করা বিশ্বজোড়া পণ্যসর্বস্বতার জাল, যা তাকেই একদিন ধ্বংস করে দেবে। আধুনিক বিজ্ঞান -প্রযুক্তি যেমন ক্রমাগত উৎপাদনক্ষম করে তুলেছে সমাজকে, তেমনই মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে তার আত্মসত্তা থেকে, প্রকৃতি ও পরিপার্শ্ব থেকে।
 
বর্তমানে পৃথিবীর কণ্টকাকীর্ণ বাস্তবতায় ক্লান্ত ও বিদীর্ণ মানুষের জীবন। বিশ্বায়নের সংস্কৃতি, নগরায়নের সভ্যতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা এ সময়ের এক জ্বলন্ত সমস্যা। ক্রমাগত বিপর্যস্ত হতে হতে সেই আদিম ও পরিচ্ছন্ন নিস্তব্ধ প্রকৃতি এখন বিপন্ন। 
 
পরিবেশদূষণ, জলবায়ুর পরিবর্তন তথা প্রকৃতির সর্বনাশ ও পৃথিবীর সম্ভাব্য ধ্বংসের আশংকা নিয়ে অধুনা  বিশ্বব্যাপী তোলপাড় চলছে। পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে দেশ-বিদেশে চলছে ব্যাপক আলোচনা । 
 
সেই বহুকাল আগে জলবায়ূর পরিবর্তন কিংবা পরিবেশদূষণ সম্পর্কে যখন মানুষের মনে কোনো দুশ্চিন্তা  ছিল না, তখন ‘জুল সুপুরভই’ নামে একজন কবি জলবায়ুর পরিবর্তন সম্পর্কে আগাম একটি বেদনাময় গাথা রচনা করে গেছেন।  জন্ম তাঁর সুদূর উরুগুয়েতে, ১৯০৫ সালে।  কবিতাটির বাংলা অনুবাদ-
 
একদিন এই পৃথিবীতে আর কিছুই থাকবে না 
শুধু এক অন্ধ অবস্থান যেখানে শুধু
বিভ্রান্তিকর দিন আর রাত্রি ঘোরে
বিশাল আকাশের নিচে যেখানে ছিল সুউচ্চ পর্বতমালা
সেখানে একটি পাহাড়ও নেই, এমনকি একটি গিরিখাতও না।
 
পৃথিবীর সমস্ত প্রাসাদ ও বাড়িগুলির মধ্যে
শুধু টিকে থাকবে একটি মাত্র বারান্দা
এবং এই বিশ্বের মানব জাতির মানচিত্রে
শুধু একটি বিষাদ যার মাথায় আচ্ছাদন নেই।
ভূতপূর্ব বঙ্গোপসাগরের চিহ্ন থাকবে না 
বাতাসের সামান্য লবণাক্ত স্বাদে
একটা মায়াময় উড়ন্ত মাছ জানবে না 
সমুদ্র কেমন দেখতে ছিল।
 
একদা যেখানে অরণ্য ছিল সেখানে ভেসে উঠবে 
একটা পাখির গান, কেউ তাকে 
দেখতে পাবে না, বুঝতে পারবে না, শুনতেও পাবে না 
শুধু ঈশ্বর শুনবেন মন দিয়ে এবং বলবেন-
আরে এ যে একটা ‘পিউ কাঁহা’ পাখি।
 
কবিতাটি পড়লে মনে হয়, সেইসময় কবির মনে সন্দেহ জেগেছিল, এমন একদিন আসবে যখন তাঁর সন্তানেরা পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিতে পারবে না। 
                       
বস্তুত বায়ূমণ্ডলের আজ শ্বাসরোধকারী অবস্থা। উন্নত দেশের তুলনায উন্নয়নশীল দেশের জনগণকে ভুগতে হচ্ছে বেশি। মানুষের প্রতিদিনের অবিবেচক কর্মকাণ্ডের পরিণামে সৃষ্ট ক্ষতিকর পদার্থ ও দূষণ ক্রমবর্ধমান। জল-স্থল-অন্তরীক্ষ ছাড়িয়ে দূষণ এখন ঢুকে পড়েছে মানবমনের গভীরে। মনে রাখা দরকার, বৃষ্টি ও বনভূমি পৃথিবীর ফুসফুস। কিন্তু বিবেকবর্জিত কিছু কিছু মানূষ নিজেদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বন্ধক রেখে অকাতরে গাছপালা বন উজাড় করে দূষণ ঘটিয়ে চলেছে।
 
লেখক : কে জি মোস্তফা, গীতিকার, কবি, কলামিস্ট

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030369758605957