অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে বিসিএস দিয়েছিলেন পিএসসির বর্তমান চেয়ারম্যান মো: সোহরাব হোসাইন। আর অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে শিক্ষার্থীরা এখনও বিসিএসের জন্য আবেদন করতে পারবেন। অ্যাপিয়ার্ড মানে শিক্ষার্থী তার সব লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এই মর্মে বিশ্ববিদ্যালয় পিএসসির কাছে একটি লিখিত দেবে। এমনটাই বলছিলেন পিএসসির হাত ধরে সরকারি চাকরি জীবন শুরু করা মো: সোহরাব হোসাইন। তিনি এখন সেই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান। সম্প্রতি কয়েকজন সাংবাদিকের সঙ্গে আলোচনাকালে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। দৈনিক শিক্ষার পাঠকের জন্য চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
“আমি নিজেও অ্যাপিয়ার্ড দিয়ে বিসিএস দিয়েছিলাম। আমি সূর্যসেন হলে থাকতাম, সেখান থেকে হল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়েছিল,’ যোগ করেন তিনি।
সোহরাব হোসাইন বলেন, সরকারি কর্ম কমিশন তথা পিএসসির চেয়ারম্যান হওয়া আমার প্রত্যাশা ও যোগ্যতার তুলনায় বিশেষ পাওয়া। সরকার আমার প্রতি যে আস্থা রেখেছে, যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে তা রক্ষায় আমি সচেষ্ট থাকব। পিএসসির যে সম্মান ও জনআস্থা রয়েছে, তা আরও এগিয়ে নিতে আমি সহকর্মীদের নিয়ে চেষ্টা করব।
পিএসসি কেবল বিসিএস পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিই দেয়নি। ইতোমধ্যে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২১৫৫ সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য ভাইভা নিয়েছে। আরও কয়েকটি পদের জন্যও ভাইভা নেওয়া হয়েছে।
৪২তম বিসিএস বিশেষ হবে। কেবল চিকিৎসকদের জন্য। আর ৪৩তম বিসিএস সাধারণ।
সোহরাব হোসান বলেন, এমন যেন না হয় যে করোনা সংক্রমণের মধ্যে কারও বয়স ৩০ হয়ে গেল অথচ সে আবেদন করতে পারল না। বয়স শেষ হওয়ার আক্ষেপটা যাতে না থাকে। একই সঙ্গে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা সচল থাকলে যারা ইতোমধ্যে স্নাতক হয়ে যেত অর্থাৎ চাকরির জন্য আবেদন করতে পারত, তাদের বিষয়টিও আমরা দেখেছি। সে জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দ্রুত নিয়ে নেয়, সে বার্তাও ইউজিসির মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতোমধ্যে পরীক্ষা নিচ্ছে বলে আমরা সংবাদমাধ্যমে দেখছি।
পিএসসির কাছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ৪৩তম বিসিএসের আবেদনের সময় বাড়াতে চিঠি দিয়েছে, সেটা নিশ্চয়ই দেখবেন বলে জানিয়েছেন পিএসসির চেয়ারম্যান। আর অ্যাপিয়ার্ড দিয়েও শিক্ষার্থীরা বিসিএসের জন্য আবেদন করতে পারবে।
তিনি বলেন, তৃতীয় পরীক্ষকের কারণে কিছুটা দেরি হচ্ছে- এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে তখনই তৃতীয় পরীক্ষকের প্রয়োজন পড়ে, যখন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে দুইজন পরীক্ষকের নাম্বারের মধ্যে পার্থক্য অন্তত ২০ থাকে। আমরা এ রকম দেখছি, পরীক্ষার্থীকে একজন দিয়েছেন ৬০ আবার আরেকজন দিয়েছেন ৮১, তখন এর মধ্যে তৃতীয় পরীক্ষক সমন্বয় করেন। এমন অনেক খাতায়ই হয়ে থাকে। সম্প্রতি একটি বিসিএসের লিখিত পরীক্ষায় আট হাজারের বেশি উত্তরপত্র তৃতীয় পরীক্ষকের মূল্যায়নের প্রয়োজন পড়েছে। এর ফলে লিখিত পরীক্ষার ফল অন্তত এক মাস পিছিয়ে যায়। তবে পরীক্ষকরা আরেকটু আন্তরিকতার সঙ্গে খাতা মূল্যায়ন করলে এত পার্থক্য হওয়ার কথা নয়।
নিয়োগে তদবিরের প্রসঙ্গে সোহরাব হোসাইন দাবি করেন, পিএসসিতে তদবিরে চাকরি হওয়ার প্রশ্নই আসে না। এবং বাস্তবে এটি সম্ভবও নয়। প্রিলিমিনারি কিংবা লিখিত পরীক্ষা যে প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়, তাতে যথাযথ প্রার্থী ছাড়া অন্য কারও সুযোগ পাওয়ার কোনো ধরনের সুযোগ নেই। পরীক্ষার হলেই উত্তরপত্র শনাক্তবিহীন করা হয়ে থাকে। ভাইভাতেও সেটি সম্ভব নয়। ভাইভা পরীক্ষার দিন সকালে ৩০-৩৫ মিনিট আগে বোর্ড চেয়ারম্যানদের হাতে সিলগালা করা প্রার্থী তালিকা তুলে দেওয়া হয়। বোর্ডসংখ্যা ধরে প্যাকেট সংখ্যা তৈরি হয়। কারও পক্ষে বেছে প্যাকেট নেওয়ার সুযোগ নেই। ফলে কেউই জানছেন না, কে কার বোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন। বোর্ড সদস্যদেরও জানার প্রশ্নই আসে না।
সোহরাব হোসাইন বলেন, পিএসসি স্বচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির মাধ্যমে যোগ্যদের প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগ দেওয়ার কাজ করছে। পিএসসির মাধ্যমে যারা নিয়োগ পায়- সবাই মেধার জোরেই পায়। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, কেউ মেধায় এগিয়ে থাকলে তাকে পিছিয়ে দেওয়া ঘোরতর অন্যায় ও অপরাধ। ধরুন, কেউ একজন প্রার্থীর জন্য সুপারিশ করে বলছে- প্রার্থী গরিব, চাকরিটা তার দরকার। কিন্তু সেটা আমরা কেন করব। তাকে মেধার বাইরে বিবেচনা করলে আরেকজন গরিবেরও অধিকার কি নষ্ট হবে না? আমার পূর্বসূরিরা পিএসসির যে সুনাম রেখে গেছেন, আমি তা রক্ষা করে আরও সামনে এগিয়ে নিতে চাই।
তিনি বলেন, সরকার পিএসসিকে সুপারিশের বিষয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছে, তাই কাজের ক্ষেত্রে চাপ অনুভবের কারণ নেই। আমার সহকর্মীরা সবাই আমাকে সহযোগিতা করছেন। আমি স্বাধীনভাবে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
বিসিএসের জন্য নিজেকে যোগ্য করে তোলার পরামর্শ দিয়ে সোহরাব হোসাইন বলেন, এ জন্য পড়াশোনা ও জ্ঞান অর্জনের বিকল্প নেই। এখানে প্রতিযোগিতায় না টিকলে ছিটকে পড়তে হবে। বিসিএসে এখন সাড়ে চার লাখ আবেদন করছে অথচ আমাদের আসন হলো কমবেশি দুই হাজার। সুতরাং সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে।
শিক্ষা ক্যাডার প্রসঙ্গে সোহরাব হোসাইন বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি। শিক্ষা ক্যাডার না হয়ে শিক্ষা সার্ভিস হওয়া উচিত। এখন যেমন জুডিশিয়াল সার্ভিস আলাদা রয়েছে এমন। সেখানে তাদের পদোন্নতির সুযোগ-সুবিধাসহ সকল কিছুর আলাদা বিধান থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন বিধান রয়েছে- এমন হতে পারে। চাকরির অভিজ্ঞতা কত বছর হলে প্রমোশন হবে। পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রকাশনাসহ সার্বিক বিষয় থাকবে। এমন হলে সমস্যা কাটতে পারে। তবে চাকরির সুযোগ-সুবিধা সাধারণত নির্ধারণ করা হয় তার কর্মপরিধি অনুসারে। এটা অনেক ক্ষেত্রেই অভিন্ন হবে না। তবে বিভিন্ন স্তরে বেতন কাঠামো অভিন্ন।