বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়ছেন নারীরা। পুরুষের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগোতে পারছেন না তারা। অথচ জনসংখ্যার অর্ধেক নারী এবং পুরুষ। বিগত পাঁচটি বিসিএস পরীক্ষায় (৩৭ থেকে ৪২তম বিসিএস) নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত ১৬ হাজার ২৭২ জনের মধ্যে ৯ হাজার ৬৯২ জন পুরুষ প্রার্থী। সাধারণ বিসিএসে অনেকটা পিছিয়ে নারীরা। তবে বিশেষ বিসিএসে (চিকিৎসক) ৩৯ ও ৪২তম থেকে পুরুষের সঙ্গে নারী কিছুটা তাল মেলাতে পেরেছেন। পরীক্ষায় পুরুষের সমান্তরাল নারীরা আবেদন করলেও চূড়ান্ত ফলাফলে তারা পিছিয়ে যাচ্ছেন।
পিএসসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় নারীরা মানসিকভাবেই পিছিয়ে পড়ে। তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকার পরেও প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চান না। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য বিসিএস পরীক্ষা তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন চৌধুরী বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে হয়তো বিসিএস পরীক্ষায় নারীরা পিছিয়ে রয়েছেন। বিশেষ করে বিয়ের পর চাকুরির ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে নারীদের উত্সাহী করা হয় না। এ জন্য পারিবারিকভাবে নারীদের বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার জন্য উত্সাহ সৃষ্টি করতে হবে। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। চাকরি ক্ষেত্রে নারীদের সমান অংশগ্রহণ অপরিহার্য বলে মনে করেন তিনি।
বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা এখনো নিজেদের অবস্থান মেলে ধরতে পারছে না নারীরা। অথচ রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো বর্তমানে নারীদের নিয়ন্ত্রণে। সমাজের অনেক জায়গায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। এরপরেও তারা পিছিয়ে পড়ছেন।
পিএসসির সর্বশেষ ‘বার্ষিক প্রতিবেদন-২০২২’ থেকে দেখা গেছে, ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফলে বিভিন্ন ক্যাডারে যে ১ হাজার ৩১৩ জনকে নিয়োগের জন্য পিএসসি সুপারিশ করে তার ৭৫ দশমিক ৪০ শতাংশ পুরুষ। এই সংখ্যা ৯৯০ জন। নারীর সংখ্যা ৩২৩ জন অর্থাৎ ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ। একই অবস্থা ৩৮তম বিসিএস পরীক্ষায়। এই বিসিএসে ২ হাজার ২০৪ জনের মধ্যে ১ হাজার ৬১১ জন পুরুষকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়। যা শতকরা ৭৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। ৫৯৩ জন নারী ক্যাডার পদে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। যা ২৬ দশমিক ৯১ শতাংশ। এছাড়াও ৩৯তম বিসিএস (বিশেষ-চিকিৎসক) পরীক্ষায় ৬ হাজার ৭৯২ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল পিএসসি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ জন পুরুষ, যা শতকরা ৫৩ শতাংশ। অন্যদিকে ৩ হাজার ১৯২ জন নারী নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। যা শতকরা ৪৭ শতাংশ। ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় ১ হাজার ৯৬৩ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৪৫২ জন ছিলেন পুরুষ। যা শতকরা ৭৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। ৫১১ জন নারী নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত হয়েছিলেন। যা মোট নিয়োগের ২৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। একইভাবে ৪২তম বিশেষ বিসিএসে সুপারিশকৃত ৪ হাজারের মধ্যে ২ হাজার ৩৯ জনই ছিলেন পুরুষ। শতকরা ৫০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। অন্যদিকে নারী ছিলেন ১ হাজার ৯৬১ জন। শতকরা ৪৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। গত কয়েকটি বিসিএস পরীক্ষার মধ্যে ৩৯তম ও ৪২তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক অর্থাৎ ৪৭ ও ৪৯.০৩ শতাংশ নারী ছিলেন। আর ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষায় সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের মধ্যে নারী সংখ্যা সর্বনিম্ন অর্থাৎ ২৪ দশমিক ৬০ শতাংশ।
আবেদনে বাড়লেও চূড়ান্তে পিছিয়ে : পিএসসির হিসাব অনুযায়ী, ৩৭তম বিসিএসে পুরুষ আবেদনকারী ছিলেন (৬৫.১৮), ৩৮তম বিসিএসে (৬৩.৪৭), ৩৯তম বিশেষ বিসিএসে (৪৩.৬৫), ৪০তম বিসিএসে (৬১.৬২) এবং ৪২তম বিশেষ বিসিএসে (৪৪.০৮) জন। ৩৯তম ও ৪২তম বিশেষ বিসিএসে নারী আবেদনকারী ছিলেন পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি। ৩৯তম বিসিএসে পুরুষের তুলনায় নারী আবেদনকারী ছিলেন (৫৬.৩৫) এবং ৪২তম বিসিএসে (৫৫.৯২)। অথচ চূড়ান্ত ফলাফলে এসে পুরুষের কাছে পিছিয়ে পড়েন নারী।
নারীদের পিছিয়ে পড়া প্রসঙ্গে পিএসসির এক সদস্য বলেন, নারী-পুরুষ সবাইকে মেধারভিত্তিতে প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হন। এখানে বৈষম্যর কোনো সুযোগ নেই। অনগ্রসর হিসেবে সরকার একসময় নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা চালু রেখেছিল। বর্তমানে সেই কোটা না থাকায় আগের চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছেন নারীরা।