বুটেক্সে প্রথম সেমিস্টারে ফেল এক তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) বিভিন্ন ব্যাচের প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের ফলাফলে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করে ভর্তিযুদ্ধে টিকে প্রথম সেমিস্টারে বিভিন্ন বিষয়ে ফেল করে হতাশায় ভুগেন তারা।

 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫-৪৭-৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৪৫তম ব্যাচের প্রথম সেমিস্টারে মোট ১০টি বিভাগে ৫৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করে এমন শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২৪ জন। ৪৭তম ব্যাচের ৫৬৫ জনের মধ্যে ২৫১ জন এবং ৪৮তম ব্যাচের ৫৬৬ জনের মধ্যে ১৫০ জন। শতকরা হিসাব বিবেচনায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪৫তম ব্যাচের প্রায় ২২ শতাংশ, ৪৭তম ব্যাচের ৪৪ শতাংশ এবং ৪৮তম ব্যাচের ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে ফেল করে।  

বিষয়ভিত্তিক বিশ্লেষণে যেসব বিষয়ে অধিক শিক্ষার্থী ফেল করছে সেসবের মধ্যে ন্যাচারাল টেক্সটাইল ফাইবার, কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, গণিত বিষয়ে ফেলের হার বেশি।

ন্যাচারাল টেক্সটাইল ফাইবার বিষয়ে ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ২৮জন ফেল করলেও পরবর্তী ব্যাচগুলোতে সে সংখ্যা আরো বেশি। ৪৭তম ব্যাচ থেকে ফেল করে ১০৬জন এবং ৪৮তম ব্যাচ থেকে ৭৬জন। কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্সে ৪৫তম ব্যাচ থেকে ৪৮জন, ৪৭তম ব্যাচ থেকে ১০৭ জন এবং ৪৮তম ব্যাচ থেকে ৬২ জন। গণিত বিষয়ে ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ফেল করে ৩৪ জন, ৪৭তম ব্যাচ থেকে ১১২ জন, ৪৮তম ব্যাচ থেকে ১৩ জন।

কী কারণে শিক্ষার্থীরা উল্লিখিত বিষয়ে, অধিক ফেল করছে তা জানতে গিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোর্সে ফেল করার কারণ জানতে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী স্কুল পর্যায়ে প্রোগ্রামিংয়ের সঙ্গে পরিচিত থাকে না। উচ্চমাধ্যমিকে প্রোগ্রামিংয়ের ওপর কেবল একটি অধ্যায় থাকে বিধায় অনেকে এটা বাদ দেয়, কেউবা মুখস্থ করে পরীক্ষায় উত্তর করে। যখন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কোর্স পায় তাদের কাছে সব নতুন লাগে। এতে অনেকে এটার সঙ্গে ঠিকভাবে মানিয়ে নিতে পারে না। আবার পর্যাপ্ত চর্চার অভাবে এই বিষয়ে খারাপ করছে।

তাছাড়া শিক্ষার্থীদের এক অংশ অভিযোগ করেছেন শিক্ষকদের আন্তরিকতা নিয়ে। তাদের মতে, কোর্সটি নতুন ও শিক্ষার্থীদের বুঝতে বেশি সময় লাগে, শিক্ষার্থীদের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষকরাও পড়াচ্ছেন না। শিক্ষকের কেঁউকেঁউ শিক্ষার্থীরা কোডিংয়ের মৌলিক বিষয়াবলি জানেন ধরে নিয়ে শুরু করে। যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে কষ্ট হয়। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের প্রতি দুইজনের প্রায় একজন শিক্ষার্থী প্রথম সেমিস্টারে কমপক্ষে একটি বিষয়ে ফেল করেছে। ৪৭তম ব্যাচের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী রাদিয়াতুল আলম জানান, করোনাকালীন সময়ে আমাদের শুরুর দিকের ক্লাসগুলো অনলাইনে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার কারিকুলাম বোঝার আগেই পরীক্ষা চলে আসে। আগে বাংলায় লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে সবকিছু ইংরেজিতে হওয়ায় অনেকেরই সমস্যা হয়। তাছাড়া, আমাদের যে বেসিক সি-প্রোগ্রামিং শেখানো হয়েছে তা দিয়ে পরীক্ষায় আসা কঠিন প্রশ্নের উত্তর করা সম্ভব হয় না।

আরেক শিক্ষার্থী জানান, ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এইচএসসিতে সবাই অটোপাশ করে। জেএসসি ও এসএসসি মার্কের ওপর ভিত্তি করে রেজাল্ট তৈরি হয়। করোনাকালীন সময়ে তারা পড়াশোনা হতে অনেক দূরে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে দেখে এইচএসসির পড়ানো বেসিক বিষয়াবলি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা বুঝতে কাজে লাগে। যেহেতু আগে পড়াশোনা করে নি তাই এখানে এসেও খারাপ করছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে অকৃতকার্যের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণ পাওয়া যায়। গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. অনুপ কুমার দত্ত এবং ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. রিয়াজুল ইসলাম মনে করেন শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অমনোযোগিতা, ক্লাসে উপস্থিত না থাকা, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছে-এর প্রধান কারণ। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নতুন পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পারাও এ জন্য দায়ী। তাছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথমবারের মতো সব বিষয় ইংরেজিতে হওয়ায় লেখাপড়া করতে সমস্যা হয়। ফলে তাদের পরীক্ষার ফলাফল খারাপ হয়। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিভাগীয় প্রধান বলেন, কিছু শিক্ষার্থী অন্য প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে আশানুরূপ বিভাগ না পাওয়ায় নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে এখানে ভর্তি হয়। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া না করলেও হয় এই মন মানসিকতা অনেকের মধ্যে কাজ করে, তাই তারা আশানুরূপ ফলাফল পারে না। তার মতে, শিক্ষার্থীদের মন মানসিকতার পরিবর্তন একটি ভালো ফলাফল এনে দিতে পারে। 

ন্যাচারাল টেক্সটাইল ফাইবার কোর্সে অকৃতকার্যের সংখ্যা বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ার্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. বাশার উদ্দিন বলেন, এটি টেক্সটাইলের বেসিক কোর্স। এতে অনেকগুলো ফাইবার সম্পর্কে পড়াশোনা করতে হয় তাত্ত্বিকভাবে, কোনো ব্যবহারিক না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা না বুঝে মুখস্থ করে। কিন্তু কোর্সটিতে অনেকগুলো ফাইবার সম্পর্কে পড়াশোনা করা লাগলেও মোটামুটি সেলুলজিক ও প্রোটিন বেজড ফাইবার এবং একটির বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে অন্যটির অনেক মিল ও পারস্পরিক-সম্পর্ক বিবেচনা না করে শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করে। ফলে আলাদা ফাইবার ও সংখ্যায় অনেক বেশি মনে হয় বলে তাদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়।

তাছাড়া তিনি আরো বলেন, প্রতি কোর্সে ক্লাসে উপস্থিতির হার ৬০ ভাগের নিচে হলে শিক্ষার্থীরা এটেন্ডেন্সে ৮ এর মধ্যে শূন্য পায়। কেউ ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে ক্লাসে শিক্ষকরা পড়াশোনার যে প্রক্রিয়া শেখান তা শিখতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস টেস্টগুলোতেও ভালো করতে পারে না। ক্লাসগুলো নিয়মিত না করায় ফাইনাল পরীক্ষাতেও খারাপ করে। 

তিনি বিগত পাঁচ বছরের ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্ন অনুসরণ করার পাশাপাশি ক্লাসে মনোযোগী ও ক্লাসের বাহিরে শিক্ষকের দেওয়া গুগল ক্লাসরুমে সিলেবাস, রেফারেন্স বই, ভিডিও লেকচার অনুযায়ী পড়াশোনা করার পরামর্শ দেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ - dainik shiksha ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ বেড়েছে ২০০ ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ - dainik shiksha ‘আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির - dainik shiksha ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ ইউজিসির পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা - dainik shiksha পুরনো পদ্ধতিতে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ - dainik shiksha জাবির প্রশাসনিক ভবন থেকে ‘শেখ মুজিবের’ ছবি অপসারণ ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha ইএফটি সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029668807983398