দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল বিল্ডিংয়ে বেশ লুকোচুরি করে লিফলেট বিতরণ করছে দুই যুবক। ১৯ ফেব্রুয়ারি তাদের বিতরণ করা লিফলেটগুলোতে ছিলো হিযবুত তাহরীরের জিহাদে যোগ দেয়ার আহ্বান। গণমাধ্যমের হাতে এভাবে ধরা পড়ে বুয়েটকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের কার্যক্রম। বুয়েটকে ঘিরে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী হিযবুত তাহরীর ও শিবিরের তৎপরতার বিষয়টি নতুন নয়। কিন্তু তারপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরীক্ষা বর্জনকারীদের একটি অংশ থেকে শুরু করে সাবেক অ্যালামনাইদের একটি অংশ বারবার হিযবুত তাহরীর ও শিবিরের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি অস্বীকার করে এসেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই সরাসরি মিললো হিযবুতের লিফলেট বিতরণের সিসিটিভি ফুটেজ।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সকালে ক্লাস শুরুর আগে বুয়েটের সিভিল বিল্ডিং এর একটি ফ্লোরে দুই তরুণ উপস্থিত হয়। এ সময় তারা করিডরের শেষ মাথায় পৌছালে বুয়েটের কোন একজন স্টাফকে আসতে দেখে অন্য একটি করিডোরে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তাদের একজন যখন দেখেন সেই স্টাফ এই করিডোরে নেই তখন দ্রুত তারা সিভিল বিল্ডিংয়ের করিডোরের শেষ মাথায় চলে যায় এবং সেখানর ক্লাস রুম গুলোতে তাদের ব্যাগে থাকা লিফলেট বিতরণ করতে করতে আবারও পূববর্তী করিডোরে ফেরত আসে এবং সেখানে থাকা ক্লাসরুম গুলোতেও লিফলেট বিতরণ করে। এ সময় আশপাশে কেউ দেখছে কিনা, সেটি উকি দিয়ে দেখে নিয়ে দ্রুত করিডোর থেকে চলে যায় তারা। এ সময়ও তাদের ব্যাগে ছিলো আরও লিফলেট।
ধারণা করা হচ্ছে এদিন বিল্ডিংয়ের এমন ফাঁকা করিডোরগুলো ব্যবহার করে আরও বেশ কিছু ক্লাসরুমে লিফলেট বিতরণ করে জঙ্গি গোষ্ঠী হিযবুত তাহরীরের সদস্যরা।
মার্চ মাসে হিযবুত তাহরীর বুয়েট শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মেইল এড্রেসে জঙ্গি মৌলবাদী ও জিহাদি বার্তা প্রেরণ করে। সেখানে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে জিহাদে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। এর কিছুদিন পর বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সভাপতি প্রবেশ করে কমিটি ঘোসণা করছে এমন গুজব ছড়িয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কানি প্রদান করা হয় ফেসবুকে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুয়েট ক্যাম্পাসে রাজনীতি থাকবে, নাকি থাকবে না প্রশ্নে হাইকোর্ট রুল জারি করে যেখানে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি থাকবে বলে রুল দেয়া হাইকোর্ট। কিন্তু বুয়েটে ছাত্র রাজনীতির ঘোর বিরোধিতা করে আসছে হিযবুত তাহরীর ও শিবির। শিবির পরিচালিত বাঁশেরকেল্লা পেজ ও ম্যাসেজিং প্লাটফর্মের কার্যক্রমে এ বিষয়টি বেশ স্পষ্ট। সেই সঙ্গে হিযবুত তাহরীর সরাসরি শিক্ষার্থীদের রাজনীতি না ফেরার পক্ষে কঠোর অবস্থান রাখার আহ্বান জানিয়ে আবারও শিক্ষার্থীদের একাডেমিক মেইল এড্রেসে ইমেইল বার্তা পাঠায়।
অন্যদিকে বুয়েটে শিবিরের কার্যক্রম চলছে তা স্বীকার করে নিয়েছিলেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম। কিন্তু তারপরও বুয়েটের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের একটি অংশ বিষয়টিকে 'গুজব' বা 'অপপ্রচার' বলে মন্তব্য করতে থাকে। এর পাশাপাশি বুয়েটের শিক্ষক সমিতি থেকে দেয়া এক বার্তায়ও বুয়েটকে কেন্দ্র করে নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠি হিযবুত তাহরীর ও শিবিরের কার্যক্রম নিয়ে প্রচার হওয়া সংবাদের নিন্দা জানানো হয়। যা প্রকারান্তরে জঙ্গি মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলোর বুয়েট কেন্দ্রিক কার্যক্রমকে অস্বীকার করার মতই। তবে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে বুয়েট কেন্দ্রিক জঙ্গিগোষ্ঠীটির কার্যক্রম আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও সেখানে কার্যক্রম চালিয়ে গেছে জামায়াতে ইসলামের ছাত্রসংগঠন ছাত্রশিবির ও হিজবুত তাহরীর। পরীক্ষা বর্জনকারীদের পক্ষ থেকে শুরুর দিকে বুয়েটে জামায়াতে ইসলামির ছাত্র সংগঠন শিবির ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম নিয়ে কোনো আপত্তির কথা জানানো হয়নি। পরে গণমাধ্যমের চাপে পড়ে তারা এই বিষয়টিও নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হয়। তবে তাদের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই দুই সংগঠনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। এরইমধ্যে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের ইমেইল দিয়েছে নিষিদ্ধ উগ্রবাদী জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীর। শিক্ষার্থীদের মেইলে একাধিকবার উগ্রবাদী বার্তা ও রাজনীতি বন্ধের বার্তা দিয়ে মেইল করার পর এবার নিজেদের ফেসবুক পেজের একটি ভিডিওর কিউআর কোড স্টিকার আকারে ছাপিয়ে পলাশীর মোড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দিচ্ছে উগ্রবাদী গোষ্ঠীটি।