হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজের সাড়ে চার কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুই কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) শাখার বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত বুধবার চিঠিটি কলেজে পৌঁছায়। গতকাল বৃহস্পতিবার কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কলেজের দুই কর্মচারী হলেন প্রধান সহকারী শাহ মো. আবদুল বশির ও ক্যাশিয়ার বাবুল মিয়া। কলেজ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ওই দুজন ও কলেজের সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা একটি মামলা সিলেট বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের পদে কর্মরত ছিলেন বিজিত ভট্টাচার্য্য। এ সময় পাঁচ খাতে কলেজের সাড়ে চার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে অধ্যাপক বদরুজ্জামান চৌধুরী অধ্যক্ষের পদে যোগ দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
কলেজের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩১টি খাতে ২ কোটি ৯৪ লাখ ১৮১ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু কলেজের ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল মাত্র ১১ লাখ ১২ হাজার ৮১৩ টাকা। একই সময়ের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন হয় ১ কোটি ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৯৫৭ টাকা। যার মধ্যে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪১১ টাকা ব্যাংক হিসাবে স্থিতি থাকার কথা থাকলেও তা ছিল না। হদিস পাওয়া যায়নি কলেজের ১ কোটি ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪১১ টাকার। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি ১ কোটি ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৪১১ টাকা জমা না দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিকে দুদক তদন্ত শুরু করে। পরে সংস্থাটির পক্ষ থেকে কলেজের অধ্যক্ষ বিজিত ভট্টাচার্য্য, প্রধান সহকারী শাহ মো. আবদুল বশির ও ক্যাশিয়ার বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয় আদালতে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কলেজের সেই সময়কার অধ্যক্ষ বিজিত ভট্টাচার্য্যকে বরখাস্ত করা হয়।
কলেজ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার জন্য বৃহস্পতিবার বিকেলে বেশ কয়েকবার কলেজের প্রধান সহকারী শাহ মো. আবদুল বশির ও ক্যাশিয়ার বাবুল মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা ধরেননি।
বৃন্দাবন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুল হাসান জানান, অধিদপ্তরের নির্দেশ অনুযায়ী আবদুল বশির ও বাবুল মিয়ার বরখাস্তের আদেশ কার্যকর হবে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। এ ক্ষেত্রে এ দুজনের চার বছরের বেতনের অর্ধেক টাকা জমা দিতে হবে সরকারি কোষাগারে।