বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক স্কুল-মাদরাসা খোলা রাখলে কি হবে?

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: গত সোমবার হাইকোর্টের এক আদেশ অনুযায়ী ২রা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশের সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা। একজন আইনজীবীর বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হাইকোর্টের আদেশের তথ্য অনুযায়ী  ইংলিশ মিডিয়ামের পরীক্ষা চলবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ আদেশে প্রযোজ্য হবে না।

এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী গতকাল বলেছেন, ইংলিশ মিডিয়ামের পরীক্ষা চলবে আর প্রান্তিক বাংলা মিডিয়াম সব বন্ধ থাকবে-- এটা বৈষম্যমূলক মনে হতে পারে। 

এমতাবস্থায় ১ মে বিকেল থেকে শিক্ষক নেতারা এবং অনেক অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর কাছে জানতে চেয়েছেন,  বৃহস্পতিবার ২রা মে প্রতিষ্ঠান খোলা না বন্ধ রাখবেন। তাদের যুক্তি হলো মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তরগুলো থেকে বন্ধের কোনো আদেশ পাননি। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার বরাতে গণমাধ্যমেও কোনো আদেশের খবর জানা যায়নি। তবে, ভিকারুননিসাসহ রাজধানীর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একজন আইনজীবীর বরাতে পাওয়া হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবারও বন্ধ রাখবেন বলে জানা গেছে। 

এমন পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে কি আদালত অবমাননা হবে? কয়েকজন প্রতিষ্ঠান প্রধান  এমন প্রশ্ন করেছেন দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর কাছে। অথবা বন্ধ রাখলে মন্ত্রণালয়ের আদেশ অমান্য হবে কি-না? 

গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের স্কুল বন্ধ সংক্রান্ত আদেশের খবর গণমাধ্যমে আসার পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা মন্ত্রী বলেছেন, আদেশের কপি এখনো হাতে পাননি। পেলে সিদ্ধান্ত নিবেন। পরে আবার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে না। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এমন তথ্যই জানিয়েছিলেন। এর আগে গত সোমবার বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি আদেশে বলেছেন, চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল এবং মাদরাসার ক্লাস আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

ওই আদেশের পর শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখন বন্ধ হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে সংবিধান অনুসারে সেটা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। সংবিধানের রুলস অব বিজনেসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে সেই এখতিয়ার দেয়া হয়েছে। 

আমাদের উচ্চ আদালতের সুয়োমটো, কিছু বিষয়ে নির্দেশনা বা আদেশ দেয়ার এখতিয়ার আছে।  

সেটাও সংবিধান স্বীকৃত। কিন্তু, রাষ্ট্রের যে প্রতিষ্ঠানের যে এখতিয়ার, সেখানের মধ্যে থাকাটাই সবার জন্য সমীচীন।

এদিন তিনি আরো বলেন, যে বিষয়ে ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাংবিধানিক এখতিয়ার আছে, সেখানে এ বিষয়ে যদি কোনো সিদ্ধান্ত (আদালতে) হয়ে থাকে তবে অবশ্যই আমরা তার উপরের আদালতে, আপিল বিভাগে যাবো। একটু আগে শুনেছি আদালত একটা নির্দেশ দিয়েছে। 

মহিবুল হাসান চৌধুরী আরো বলেন, যেসব জেলায় তাপমাত্রা অনেক বেশি সেসব জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এ বিষয়টা নিয়ে ইতোমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছি। কিন্তু, যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেসব জেলায় তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার কোনো যুক্তি নেই-এটা হচ্ছে আমাদের নির্বাহী অবস্থান। 

মন্ত্রী প্রশ্ন তোলেন, যেসব জায়গায় তাপমাত্রা ৩৯- ৪০ এর ঘরে পৌঁছাচ্ছে না সেসব জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে কেনো? যেমন এই মুর্হূতে সিলেটে বৃষ্টি হচ্ছে, সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেনো বন্ধ থাকবে?

এর আগে দেশে চলমান তাপ প্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলায়, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ এপ্রিল বন্ধ থাকবে বলে জানায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 
কিন্তু, ওই হাইকোর্ট বেঞ্চ সব স্কুল, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ দিয়ে জানায়, তবে যেসব স্কুলে এসির ব্যবস্থা আছে, পরীক্ষা চলমান আছে, ও লেভেল এবং এ লেভেল পরীক্ষা আছে সেগুলোসহ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না।

সর্বশেষ আজ বুধবার সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েও নতুন কোনো তথ্য বা নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

রাত সোয়া নয়টায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব সোলেমান খান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছেন, ‘আমরা কোর্টের কোনো আদেশ পাইনি।’ 

এদিকে অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেছেন, আমাদের রেগুলেটরি বডি হলো মন্ত্রণালয়। অতীতে সব সময় দেখেছি আদালতে আদেশ অনুযায়ী কিছু বাস্তবায়ন করার আদেশ করা হলে তা উল্লেখ করা থাকে যে এটা আদালতের আদেশ অনুযায়ী।  বুধবার রাত আটটা অবধি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে কোনো আদেশ বা জনসংযোগ কর্মকর্তার বরাতে কোনো গণমাধ্যমে প্রচার বা প্রকাশ হয়নি। 

 স্কুল-কলেজ খোলা রাখলে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার যুক্তি কম। কারণ, শিক্ষাসচিব এখনও আদালতের কোনো আদেশ পাননি। তাই বৃহস্পতিবার স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার কোনো নির্বাহী আদেশ নেই। অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান রিস্ক নিতে চান না। তারা বৃহস্পতিবার খোলা রাখবেন।  

বন্ধ রাখলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাস্তি দেবে এমন কোনো ইঙ্গিতও পাওয়া যায়নি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036559104919434