বেগম রোকেয়া দিবস আজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : বেগম রোকেয়া দিবস আজ। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর এদিন সারাদেশে সরকারিভাবে রোকেয়া দিবস পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। বেগম রোকেয়া ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দের আজকের এই দিনে রংপুরের মিঠাপুকুর থানার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। রক্ষণশীল মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও তিনি নারী জাগরণের অগ্রদূতের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন খ্যাতিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও সমাজ সংস্কারক।

তার বাবা জহির উদ্দিন মুহম্মদ আবুল আলী হায়দার সাবের, মা রাহাতুন্নেছা চৌধুরানী। বেগম রোকেয়ার ছিলো দুই ভাই ও দুই বোন। বড় ভাই ইবরাহিম সাবের ছিলেন একজন প্রগতিশীল মানুষ। অগোচরে মোমের আলোয় বেগম রোকেয়া ও আরেক বোন করিমনুন্নেছাকে বর্ণশিক্ষা দিতেন। আর রোকেয়ার ছিলো জানার ও শিক্ষার অদম্য আগ্রহ।

১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৬ বছর বয়সে বেগম রোকেয়ার বিয়ে হয় ভাগলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট খান বাহাদুর সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে। রোকেয়া পেলেন আরেক জন প্রগতিশীল মানুষের সাহচার্য। স্বামী সাখাওয়াত হোসেন বেগম রোকেয়ার লেখাপড়ার প্রতি অকুণ্ঠ আগ্রহ দেখে তাকে সাহায্য করতে লাগলেন বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে এবং তার লেখালেখিতে সাহায্য করতে লাগলেন।

এই শিক্ষাই বেগম রোকেয়াকে ভাবতে শিখিয়েছিলো সে সময়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন জীবন, শিক্ষাহীন নারী সমাজের মুক্তির কথা। নারীদের অশিক্ষার অন্ধকার থেকে কী করে টেনে তোলা যায়, সে ভাবনা থাকতো তার মাথায়। আর তাই তো তিনি স্বপ্ন দেখলেন একটি স্কুলের। যেখানে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীরা লেখাপড়া শিখবে। আর তার এ স্বপ্নকে আরো বড় করে তোলেন তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন।

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে ‘পিপাসা’ নামে একটি বাংলা গল্প লিখে সাহিত্যের জগতে প্রবেশ। আর ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে রোকেয়া ইংরেজিতে লিখলেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সুলতানাস ড্রিমস’। সাখাওয়াত হোসেন লেখাটি পড়ে অভিভূত হয়ে পড়েন এবং তাকে উৎসাহ দেন লেখাটি বই আকারে প্রকাশ করার জন্য।  

১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে সুলতানাস ড্রিমস বই আকারে প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে বইটি বাংলায় ‘সুলতানার স্বপ্ন’ নামে রূপান্তরিত হয়েও প্রকাশিত হয়। এই বইটিকে বিশ্বের নারীবাদি সাহিত্যে একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হয়। তার অন্যান্য গ্রন্থগুলো হলো ‘অবরোধবাসিনী’, ‘মতিচুর’, ‘পদ্মরাগ’।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে সাখাওয়াত হোসেন খান মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর মৃত্যু তাকে অকাল বৈধব্য এনে দিলেও তাকে দমন করতে পারলেন না। কিন্তু কষ্টকে লালন না করে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন তার অভীষ্ট লক্ষ্যে।

‘নারীশিক্ষার প্রসার ছাড়া নারী সমাজের মুক্তি নেই এবং সমাজের কোনো আশা নাই’ এই মূলমন্ত্রে বিশ্বাসী বেগম রোকেয়া সমাজের প্রবল প্রতাপের বাধা থেকে বেড়িয়ে এসে নারী শিক্ষার জাগরণে কাজ করে যান। সেই সঙ্গে তার আন্দোলনে যোগ হয় নারী সমাজের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম।

সাখাওয়াত হোসেনের মৃত্যুর পাঁচ মাস পর ১৯০৯  খ্রিষ্টাব্দের ১ অক্টোবর ভাগলপুরের তদানীন্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ শাহ আব্দুল মালেকের সরকারি বাসভবন গোলকুঠিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাই স্কুল। তখন এর ছাত্রী সংখ্যা ছিলো পাঁচজন। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে সম্পত্তি নিয়ে ঝামেলার কারণে স্কুল বন্ধ করে কলকাতায় চলে যান।

পররর্তীতে ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ মার্চ স্কুলটি কলকাতায় ১৩ নম্বর ওয়ালীউল্লাহর ভাড়া বাড়িতে নতুন করে পুনরায় চালু করা হয়। বর্তমানে স্কুলটি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার পরিচালনা করছে। কলকাতায় প্রাথমিক অবস্থায় এই স্কুলের ছাত্রী সংখ্যা ছিলো মাত্র আটজন।

সে সময় নারী শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছাত্রীদের ও তাদের অভিভাবকদের বোঝাতেন শিক্ষার কথা। এতে ধীরে ধীরে ছাত্রী সংখ্যা বাড়তে লাগলো। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে এটি হাইস্কুলে পরিণত হয়।

স্কুল প্রতিষ্ঠা করা ছাড়াও সে সময়ের নিগৃহীত নারী সমাজের অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠাকে আরো বেগবান করার জন্য ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘আঞ্জুমানে খাওয়াতীনে ইসলাম’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে সমাজের নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তার ক্ষুরধার লেখনি।

১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মুসলিম মহিলা ট্রেনিং স্কুল’। সেখানে নারীদের রান্না, সেলাই, সন্তান পালনসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। বেগম রোকেয়া নারীশিক্ষার প্রসারের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। মিসেস আর এস হোসেন নামে সে সময়ের বিখ্যাত সব পত্রিকায় তিনি নারী জাগরণের ক্ষুরধার লেখা লিখেছেন।

১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম রোকেয়ার নামে একটি কলেজ স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে এটি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী হলের নামকরণ করা হয় তার নামানুসারে। বর্তমান সরকার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’ করেন। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037801265716553