বেতন দিতে না পারায় এসএসসি পরীক্ষা অনিশ্চিত ছাত্রীর

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি |

বিশেষ ক্লাসের ১২ মাসের বেতন ৬ হাজার টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যান গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে নির্বাচনী পরীক্ষায় তিন বিষয়ে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে নির্বাচনী পরীক্ষা চলাকালে হল থেকে ডেকে ওই ছাত্রীকে ৪০ মিনিট আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করেন সহকারী প্রধান শিক্ষক। এ পরিস্থিতিতে আগামী বছর অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ওই ছাত্রী। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনা খতিয়ে দেখতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

লিখিত আবেদনে সূচনা দাস নিতু নামে দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের (রোল নং-৩) ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, গত ৮ নভেম্বর স্কুলে ভূগোল পরীক্ষা চলাকালে বিশেষ ক্লাসের ফি ছয় হাজার টাকা না দেওয়ার কারণে নির্বাচনী পরীক্ষার হল থেকে তাকে ডেকে নিজের কক্ষে নিয়ে যান সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার। এরপর তাকে বলেন, বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে পার না, তাহলে এই স্কুলে মরতে আসছ কেন? অন্য স্কুলে গিয়ে মরতে পার না। অনেক শিক্ষকের সামনে নিতুকে খুব বাজেভাবে অপমান করা হয়। ওই সময় নিতু বারবার তার পরীক্ষার সময় নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তাকে পরীক্ষার হলে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু লায়লা কিছুতেই কর্ণপাত করেননি। ফলে নিতুর ভূগোল পরীক্ষা খারাপ হয়। ওই ঘটনার পরদিন বিজ্ঞান পরীক্ষা থাকায় সেটিও তার খারাপ হয়েছে। ফেল করিয়ে দেওয়া হয় গণিতেও।

নিতু বলেন, আমার বাবা একটি প্রতিষ্ঠানের গার্ড ও স্বল্প আয়ের চাকরিজীবী। আমি নিজে টিউশনি করে আমার পড়াশোনার খরচ চালাই। আমার স্কুলের কোনো মাসের বেতন বকেয়া নেই এবং পরীক্ষার ফিও দিয়েছি নিয়মিত। তবে বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে পারিনি। কারণ স্কুলের বেতন ও নিজের খরচ চালানোর পর বিশেষ ক্লাসের বেতন দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমি স্কুল থেকে বেতন মওকুফ চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমার বেতন মওকুফ করেনি। তারা আমাকে বলেছে, ‘স্কুলের বেতন পুরোপুরি দিলে বিশেষ ক্লাসের বেতন দেওয়া লাগবে না।’ সেই অনুযায়ী আমি বিশেষ ক্লাস করেছি। আমি ক্লাসের থার্ড গার্ল হয়ে পরীক্ষায় কেন ফেল করব। বিশেষ ক্লাসের বেতনের জন্য টেস্ট পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে আমাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয়েছে।

তবে নিতু দাবি করেন, তিন বিষয়ে ফেল করার কথা জানার পর পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে আবেদন করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে সাফ না করে দেয়।

জানতে চাইলে সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার বলেন, সেদিন একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এর বেশি কিছু নয়।

তবে স্কুলের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তারের ব্যবহার খুবই রূঢ়। নিতুর সঙ্গে পরীক্ষা চলাকালে এমনটা না করলেও পারতেন। মেয়েটির বাবা গরিব। তাই সেই জানুয়ারি থেকেই বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে হবে না বলে নিতুকে জানেিয়ছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। সমস্যা হলো শিক্ষিকা লায়লা প্রভাবশালী স্কুল কর্তৃপক্ষের পছন্দের। তাই তার বিষয়ে কিছু করা যাচ্ছে না।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হক বলেন, নিতুর কাছ থেকে লিখিত পেয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ফোনে ওই শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছি। ওই শিক্ষক ঘটনা সরাসরি অস্বীকার না করে ঘুরিয়ে উত্তর দিয়েছেন। তাই ঘটনা তদন্তে ১ সদস্যের কমিটি গঠন করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাবি-জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখ প্রকাশ - dainik shiksha ঢাবি-জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখ প্রকাশ সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে যা বললেন সারজিস - dainik shiksha সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স নিয়ে যা বললেন সারজিস পিটিয়ে হত্যার আগে সেই ব্যক্তিকে ভাত খেতে দিয়েছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পিটিয়ে হত্যার আগে সেই ব্যক্তিকে ভাত খেতে দিয়েছিলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়-গ্রুপ পরিবর্তনের সময় বাড়লো - dainik shiksha দ্বাদশ শ্রেণির বিষয়-গ্রুপ পরিবর্তনের সময় বাড়লো ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা - dainik shiksha ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব - dainik shiksha সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051500797271729