বেতন দিতে না পেরে স্কুল ছেড়েছিলেন সোহরাব, সেই বেতন দিলেন ৬১ বছর পর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সোহরাব আলী ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেই সময় বিদ্যালয়ে তাঁর চার মাসের বেতন বকেয়া পড়ে। বেতন দিতে না পেরে দরিদ্র পরিবারের সন্তান সোহরাব স্কুল ছেড়েছিলেন। পড়ালেখা ছেড়ে কাজ শুরু করেন। ৬১ বছর পর তিনি গত মঙ্গলবার সেই বকেয়া পরিশোধ করেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আজাদ রহমান। 

সোহরাব আলীর বয়স এখন ৭৫ বছর। জীবনের এই সময়ে এসে তাঁর বকেয়া বেতনের কথা মনে পড়ে। তিনি ছোটবেলার সেই বিদ্যালয়ে গিয়ে বেতন পরিশোধ করেন। বর্তমানে বাজারমূল্য বেশি থাকায় তিনি একসঙ্গে ৩০০ টাকা জমা দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি সচ্ছল নন, তারপরও ঋণী থাকতে চান না। এ কারণে ৬১ বছর আগের বকেয়া বেতন পরিশোধ করলেন।

স্ত্রী, দুই মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে সোহরাব আলীর সংসার। থাকেন শৈলকুপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামে। ছোটবেলায় তিনি পাশের গ্রামের বড়দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতেন। পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। মাত্র ছয় মাস ক্লাস করেছিলেন। পরে আর্থিক অনটনে পড়াশোনা ছেড়ে দেন।

সোহরাব আলী বলেন, তাঁর বাবা দরিদ্র হওয়ায় ঠিকমতো পড়ার খরচ দিতে পারতেন না। বিদ্যালয়ে সেই সময়ে মাসিক চার টাকা বেতন দিতে হতো। তার চার মাসের বেতন বাকি পড়ে যায়। তিনি খুব লজ্জায় পড়ে যান। তখন পড়ালেখা ছেড়ে তিনি বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ শুরু করেন। ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে পুলিশ সদস্য হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে যশোর পুলিশ লাইনসে কর্মরত থাকার সময় স্বল্প বেতনের কারণে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। বাড়ি এসে ব্যবসা শুরু করেন।

সোহরাব আলীর ভাষ্য, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে দেশে স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান। তিনি বেতাই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেন। পুলিশের প্রশিক্ষণ থাকায় অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তিনি প্রশিক্ষক হয়ে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন তিনি। পরে দেশ স্বাধীন হলে তিনি বাড়ি এসে আরও ব্যবসা শুরু করেন। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় তাঁর নাম আসেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করলেন তিনি।

ছোটবেলায় দেখা বিদ্যালয় আর ৬১ বছর পর বড়বেলায় দেখা বিদ্যালয়, কতটা বদল হলো? জানতে চাইলে সোহরাব আলী বলেন, ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি যখন এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন ছিল টিনের ঘর। প্রধান শিক্ষক ছিলেন মো. মনিরুজ্জামান সিকদার। তিনি মারা গেছেন। ছোটবেলায় তিনি যাঁদের শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন, তাঁদের কারও কথা জানেন না এখন। তাঁর সঙ্গে পড়ালেখা করে পরে যাঁরা এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছিলেন, তাঁরাও অবসরে চলে গেছেন। এখন সব তরুণ শিক্ষক। বিদ্যালয়ে এখন একাধিক বড় ভবন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এত বছর পর নিজের ছোটবেলার বিদ্যাপীঠে এসে পার্থক্যটা ‘রাত ও দিন’ মনে হচ্ছে। সবকিছু এত ভালো লাগছে যে নতুন করে তাঁর বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিল। তাঁর ভাষায়, ‘মনে হচ্ছিল আবার পড়ালেখা করি, বাচ্চাদের সঙ্গে ছোটাছুটি করি!’

বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী হাদিকুর রহমানের কাছে বকেয়া বেতন দেন সোহরাব আলী। রসিদ কেটে সেই টাকা নিয়েছেন বলে জানালেন হাদিকুর রহমান।

ফুলহরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লক্ষ্মণ প্রসাদ সাহা বলেন, এই বিদ্যালয় ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত। সোহরাব আলী ভর্তি হন ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে। তিনি বেতন দিতে যখন আসেন, তখন তিনি বিদ্যালয়ের কাজে বাইরে ছিলেন। ৬১ বছর পর বেতন পরিশোধ করতে আসায় উপস্থিত অন্য শিক্ষকেরা খুব খুশি হয়েছেন। জমা রসিদ দিয়ে তাঁর টাকাটা নেওয়া হয়েছে। তাঁর এই কাজে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও মুগ্ধ। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি - dainik shiksha সনদের কাগজ কীভাবে পায় কারবারিরা, তদন্তে নেমেছে ডিবি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা - dainik shiksha ফাঁসপ্রশ্নে প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ, নজরদারিতে যারা এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054590702056885