বেতন-ভাতা নিয়ে পিইউবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের আলটিমেটাম

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

বেসরকারি পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে (পিইউবি) বেতন ও উৎসব বোনাস নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসের অর্ধেক বেতন পেয়েছেন তারা। এ ছাড়া ঈদের বোনাস ও বৈশাখী ভাতা নিয়েও কর্তৃপক্ষ টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব ইচ্ছা করেই বেতন ও বোনাস দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, টাকার অভাবে ঠিকমতো বেতন-বোনাস দেয়া যাচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আসাদ অ্যাভিনিউয়ে ক্যাম্পাস স্থাপনের অনুমোদন নিয়ে ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দ্য পিপলস ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ২৮ বছরেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেনি। কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নরসিংদীতে স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের কথা জানিয়েছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি পড়েছে সরকারি রাস্তার জায়গায়। জমিটি এখন অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

  

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। বর্তমানে স্কুল অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের ডিনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু তার কোনো ক্ষমতা নেই। ট্রাস্টি বোর্ডের সরাসরি নিয়ন্ত্রণে চলে সবকিছু।

অন্যদিকে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানে নেই উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। ১৩ বছর ধরে হয় না সমাবর্তন। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সচিব ও উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন শাহেদের স্বেচ্ছাচারিতায় বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমাদের ফেব্রুয়ারি মাসের বেতনের অর্ধেক দিয়েছে। বাকি টাকা কবে দেবে, সেটি নিশ্চিত করেনি। এ ছাড়া তারা ঈদ বোনাস ও বৈশাখী ভাতা না দেয়ার পাঁয়তারা করছে। তিন বছর ধরে বেতন ঠিকমতো দিলেও ঈদের বোনাস দেয়া হচ্ছে অর্ধেক। কিন্তু সদস্য সচিব নিজে বোনাস নেন ৮০ শতাংশের বেশি।’

পিপলস ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষক বলেন, সদস্যদের দ্বন্দ্বের কারণে ট্রাস্টি বোর্ড কার্যকর নয়। গত বছরের জুন মাসে বোর্ডের একটি সভা হয়েছিল। তবে সেটি পরিপূর্ণ নয়। সর্বশেষ পরিপূর্ণ সভা হয়েছে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর থেকে করোনার অজুহাতে তারা সভা করেন না।’ 

তিনি বলেন, ‘সদস্য সচিব নিজে উত্তরাধিকার সূত্রে বোর্ডে এসেছেন। কিন্তু অন্য যেসব সদস্য মারা গেছেন, তাদের সন্তানদের এখানে আসতে দিচ্ছেন না। মূলত স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি অধিগ্রহণের দিকে যাচ্ছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয় একটি বড় অঙ্কের অর্থ পাবে। সেই টাকা আত্মসাৎ করতেই সদস্য সচিব বোর্ডে কাউকে আসতে দিচ্ছেন না। ’

গত রোববার বিশ্ববিদ্যালয়টির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সেখানে তারা ১৩ দফা দাবি উল্লেখ করেন। দাবি আদায়ে তারা ক্যাম্পাসের ভেতরে আন্দোলনও করেন। আবেদনপত্রে তারা লিখেন—দীর্ঘদিন ধরে আমরা নিয়মিত বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বিষয়টি নিয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর বহুবার লিখিত ও মৌখিকভাবে জানানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

তাদের দাবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো প্রতি মাসের ৭ তারিখে বেতন পরিশোধ, দুই ঈদে শতভাগ উৎসব ভাতা এবং বৈশাখী ভাতা প্রদান, যৌক্তিক হারে বেতন বৃদ্ধির অংশ হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছর থেকে নতুন স্কেল বাস্তবায়ন, সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন করা, বকেয়া ওভারটাইম ও করোনাকালীন বিশেষ ভাতাসহ সর্বস্তরের শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের করোনাকালীন ও তৎপরবর্তী সময়ের পাওনা শতভাগ ঈদ বোনাসের বকেয়া অংশ পর্যায়ক্রমে পরিশোধ, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকলে অতিদ্রুত তা নিরসনে উদ্যোগ নিতে হবে ইত্যাদি। ২৪ মার্চের মধ্যে দাবি না মানলে ২৫ মার্চ থেকে মূল গেটে তালা ঝুলিয়ে কর্মবিরতিতে যাওয়ার গোসাণ দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

এদিকে অধ্যাপক শামীমা নাসরীন শাহেদের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান ও সদ্য সাবেক শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার ইউজিসি চেয়ারম্যানের কাছে দেয়া লিখিত আবেদনে তারা বলেন, ‘সদস্য সচিবের অনিয়মের বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার ও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যকে জানালেও কাজ হয়নি। ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মোল্লাকে সবকিছু জানালে তিনি তাৎক্ষণিক তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের মৌখিক ঘোষণা দেন। কিন্তু সেই মৌখিক আদেশও কার্যকর হয়নি। উল্টো সদস্য সচিব আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন।’

জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। সেখানে অভিযোগগুলো পাঠানো হয়েছে। এগুলো যাচাই করে দেখা হবে।’

এ বিষয়ে অধ্যাপক শামীমা নাসরিন বলেন, ‘ট্রাস্টি বোর্ডের সভা নিয়মিত হয় না, এটি সত্য। মূলত গত ১০ বছরে সাতজন সদস্য মারা যাওয়ায় কোরাম পূরণ হচ্ছে না। সে কারণে সভাগুলোও নিয়মিত হচ্ছে না।’

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টি ছোট, বোর্ড সদস্যদের টাকায় চলে। প্রতি মাসে ট্রাস্টের টাকায় ঠিকমতোই বেতন দেয়া হয়েছে। এমনকি করোনার পরও দেয়া হয়েছে। তবে গত মাসে ৫০ শতাংশ বেতন দেয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে অথবা শিক্ষার্থীরা ফি দিলে সেই টাকা দিয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে শতভাগ উৎসব ভাতা দিতে পারিনি। ঈদের বোনাস ৫০ শতাংশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু যেটুকু দিয়েছি, তা-ও কম নয়। কারণ, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই উৎসব ভাতা দেয়া হয় না।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039749145507812