বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২৫টি খাতে কোটি কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে। অভিযো গুরুতর হওয়ায় লিখিত জবাব দাখিল করতে সময় সীমা বেঁধে দিয়েছে। ঘটনাটি জানাজানির পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুরো বিষয়টি ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগগুলোর মধ্যে রেজিস্ট্রারের গাড়ি প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ব্যাবহার, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া রেজিস্ট্রারকে এলপিসি ছাড়াই ৩য় গ্রেডের কর্মকর্তার মতো বেতন প্রদান, প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই নিয়োগ দান, খণ্ডকালীন শিক্ষকদের অনুমোদন সম্মানী দ্বিগুণ করা, গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার বিপুল পরিমাণ অর্থ বণ্টন করে নেয়া, বাজেটে বরাদ্দ না থাকার পরেও ব্যয় নির্বাহ করে ভয়াবহ আর্থিক অনিয়মসহ নানা অভিযোগ। ইউজিসির সদস্য এবং অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আবু তাহের স্বাক্ষরিত চিঠিতে এসব অনিয়মের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।
অতি সম্প্রতি ইউজসির উপ-পরিচালক এমদাদুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্তকারী দল বেরোবিতে এসে সরেজমিন তদন্ত করে চরম অনিয়ম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় প্রমাণ পেয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেছে।
প্রতিবেদন পাওয়ার পর ইউজিসি ২৭টি অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ সম্বলিত চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত জবাব চেয়েছে। পুরো বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ধামা চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেদকের হাতে ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনের একটি কপি এসেছে।
এদিকে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী ইউজিসি কর্তৃক তদন্ত করে দেয়া প্রতিবেদনের কথা স্বীকার করেছেন।
ইউজিসির দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ অর্থ বছরের সংশোধিত ও ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের মূল বাজেট পরীক্ষাকালীন ব্যাপক অনিয়ম পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনে বসবাসরত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কাছ থেকে বিধি বহির্ভূতভাবে স্কয়ার ফিট হিসেবে বাড়ি ভাড়া কর্তন করায় ৭৫ লাখ ২০ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এর মাধ্যমে আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেস্ট হাউজ নির্মাণ না করে রংপুর ও ঢাকায় দুটি গেস্ট হাউজ ভাড়া নেয়ায় ১৩ লাখ ১৬ হাজার টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সরকারি নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মোবাইল ভাতা প্রদান করে ১৭ লাখ ৮১ হাজার টাকা ক্ষতি করা হয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতী ও আপগ্রেডেশন কার্যকর করার নামে বিধি বহির্ভূত ইনক্রিমেন্ট প্রদান করে ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ও রেজিস্ট্রারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৩য় গ্রেডের সর্বোচ্চ ধাপ ও নিয়মিত ভাতা প্রদানের মাধ্যমে চরম অনিয়ম করা হয়েছে। শুধু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ করা দুজনের বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রে এলপিসি অনুসরণ করা হয়নি। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তাদের ৪ লাখ ৩০ হাজার মূল বেতন ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ও বাড়ি ভাড়া, ভাতাসহ ৬ লাখ ২ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের আইনত সুযোগ না থাকার পরেও তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কমিটি গঠন করার পর থেকে কমিটি যতগুলো সভা করে সবগুলো সভার সম্মানী প্রদান আইনের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে ইউজিসির অনুমোদন ছাড়াই ২৪ জন আনসার সদস্যকে নিয়োগ প্রদান করায় আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের গাড়ির প্রাপ্যতা না থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করার অভিযোগ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সাবেক উপাচার্য কর্তৃক ৩ লাখ টাকা অগ্রিম গবেষণা বাবদ বরাদ্দ করা অর্থ এখনও সমন্বয় করা হয়নি। এ ধরনের আরও অনেক অর্থ ইউজিসির অনুমোদন ও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ইউজিসি তদন্ত প্রতিনিধি দল ৯ দফা সুপারিশমালা প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যায় কমানোসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে।ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপিত অনিয়মের বিষয় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা ২০ জুনের মধ্যে জানাতে বলেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেয়া জবাব সন্তোষজনক মনে করেনি ইউজিসি।
এ ব্যাপারে গত শনিবার দুপুরে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরীর সঙ্গে তার অফিসিয়াল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ইউজিসি কর্তৃক বিভিন্ন খাতে অনিয়ম সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ব্যাপারে তাদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।