বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ ইনকাম ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ ৯টি দাবি জানিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অ্যাকাডেমিকস (বিএসপিইউএ)।
সোমবার (১৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবিগুলো জানান। এতে বিএসপিইউএ সভাপতি অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ সোবহানী লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো প্রকার সরকারি বরাদ্দ বা অনুদান না পাওয়ায় কেবল মাত্র শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর নির্ভর করে চলতে হয়। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ব্যয় বাদ দিলে যে অর্থ থাকে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জমা করা হয়। অথচ জমাকৃত এই ফান্ড থেকে সরকার ১৫ শতাংশ ট্যাক্স কেটে নেয়। উপরন্তু তড়িঘড়ি করে ট্যাক্স ক্যালকুলেশনে ইউনিভার্সিটির ইন্টারব্যাংক ট্রানজেকশনকে আয় হিসেবে বিবেচনা করেছে, যা গোঁজামিল ছাড়া কিছুই নয়।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতে বিগত সরকার অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করে, যা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পঅগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে। বস্তুতপক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর কোনো প্রকার ভ্যাট -ট্যাক্স আরোপ করা তাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন।
১৫ শতাংশ ভ্যাট মালিকদের দাবি সেটি আপনারা করছেন কেন? এ প্রশ্নে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের বেতন সরকার দেয় না। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থেকে আমাদের বেতন হয়। তাই ১৫ শতাংশ ভ্যাটের বিষয়টি দিনশেষে শিক্ষার্থী ও আমাদের ওপর এসে পড়বে। এজন্য এ দাবিটা মালিকপক্ষের সঙ্গে মিলে যেতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের দাবি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার উন্নয়ন, গবেষণাসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় করতে হবে। এটা হয়ত মালিকপক্ষ ভালোভাবে নেবে না। তারপরও এ দাবি জানাচ্ছি।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মার্কেটের চাহিদা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার জন্য প্রচুর অর্থের দরকার। বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংসহ আন্তর্জাতিকভাবে নানাবিধ স্বীকৃতি অর্জন করতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর করারোপের কোনো যৌক্তিকতা নেই এবং তা আত্মঘাতীও বটে।
তাই তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করে তা গবেষণা, স্কলারশিপ এবং ছাত্র-কল্যাণে বরাদ্দের নির্দেশনা প্রদানের দাবি জানানো হয়।
উচ্চ শিক্ষার সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে ইউজিসির পুনর্গঠনের দাবি জানায় সংগঠনটি। তাদের দাবি, অনতিবিলম্বে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আনুপাতিক হারে পূর্ণকালীন এবং খণ্ডকালীন সদস্য নিয়োগ করতে হবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। এসব কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কমিটি ও উপ-কমিটিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি তাদের।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য একটি স্বতন্ত্র রেগুলেটরি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা হলে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-কার্যক্রম সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র রেগুলেটরি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি বলে মত বিএসপিইউএর।
লেজুরবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি জানিয়ে সংগঠনটি বলছে, এই রাজনীতি শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য থেকে শিক্ষার্থীদের দূরে সরিয়ে দিচ্ছে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা অত্যন্ত জরুরি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেজুরবৃত্তিক ছাত্র-রাজনীতি এবং শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার দাবি জানান শিক্ষকরা।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা চাকুরির বাজারে অনেক বৈষম্যের শিকার হচ্ছে দাবি করে ফরিদ আহমদ সোবহানী বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষতা এবং যোগ্যতায় থাকার পরও শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র এজন্য দীর্ঘদিন থেকে বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। এটা দূর করতে হবে। কোনো প্রকার স্বজন-প্রীতি, ঘুষ বা প্রতিষ্ঠানগত পরিচয়ে নয়, সম্পূর্ণ মেধার ভিত্তিতে চাকরিতে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা দরকার।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএসপিইউএ সাধারণ সম্পাদক ড. নাহিন মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. আবদুল্লাহ আল-মামুন, বিএসপিইউএ ভাইস প্রেসিডেন্ট (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক ড. আখতার হোসাইন, ভাইস প্রেসিডেন্ট (রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন) অধ্যাপক ড. মামুন হাবীব, অর্থ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জুলফিকুর হাসান, মিডিয়া এন্ড পিআর সম্পাদক রিয়াজ হাফিজ, ইসি সদস্য অধ্যাপক ড. নেহরীন মাজেদ প্রমুখ।