শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি তথা মানসম্মত শিক্ষা অর্জনের জন্য শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সরকার তথা শিক্ষামন্ত্রণালয় এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেই শিক্ষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা সময় ও অর্থ ব্যয় করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম বেতন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। ২০-২৫ বছর একই গ্রেডে বেতন নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক শিক্ষক বঞ্চনা-বৈষম্য নিয়েই অবসরে চলে গেছেন।
অনেকে মর্ম-বেদনা নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। বৈষম্য-বঞ্চনা শিক্ষকের মনোজগতে প্রভাব ফেলে, যা মানসম্মত শিক্ষণ-শিখনকে নিরুৎসাহিত করে। ১৯৯৪ সালে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের টাইমস্কেল সম্পর্কে এক আদেশে বলা হয়, শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও ভুক্তির তারিখ হতে এক নাগাড়ে ৮ বছর সন্তোষজনক চাকরি পূর্তিতে একটি টাইমস্কেল পাবেন। ঐ সকল শিক্ষক বিধি মোতাবেক ৮ বছর পূর্তিতে টাইমস্কেল নেন। কিন্তু টাইমস্কেল গ্রহণকারী শিক্ষকরা পরবর্তীকালে গ্রেডে উন্নীত হওয়ার জন্য কোনো সুষ্পষ্ট নির্দেশাবলী, জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় উল্লেখ না থাকায় ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত একই গ্রেডে থাকেন। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন প্রকাশিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮-এর ১১.৫ অনুচ্ছেদ অনুসারে এবং ২০২০-এর ৭ জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- ৩৭০০ ০০০০ ০৭৪.০০২.০০৩ ২০১৯.৮৯ এর সিদ্ধান্তের আলোকে এবং ২০২১-এর ২৮ মার্চ প্রকাশিত এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো ২০২১-এর ১১.৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে আবেদন করলে সব আবেদনই নাকোচ করা হয়। ২০১৮, ২০২০ ও ২০২১-এ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় টাইমস্কেল উঠিয়ে দিয়ে ১০ বছর ও পরবর্তী ৬ বছর অর্থাৎ ১৬ বছরে ২টি উচ্চতর গ্রেড পাবেন উল্লেখ থাকলেও কখনো টাইমস্কেল নেওয়ার অযুহাতে, কখনো মহামান্য হাইকোর্টের মামলা চলমান থাকার অযুহাতে, কখনো মন্ত্রণালয়ের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা না থাকার অযুহাত দিয়ে শিক্ষকদের করা আবেদন একাধিকবার বাতিল করে দেয়া হয়।
সম্প্রতি সরকারি শিক্ষকদের করা একটি টাইমস্কেল সংক্রান্ত রিট আবেদন নিষ্পত্তির কথা বলে আবেদন গ্রহণ করা হয়নি। অথচ সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনকাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা। বেসরকারি শিক্ষকদের তুলনায় সরকারি শিক্ষকরা প্রায় কয়েকগুণ বেতন-ভাতাদি বেশি পান। সরকারি শিক্ষকদের মামলার অযুহাতে বেসরকারি শিক্ষকদের উচ্চতর বেতনস্কেল প্রাপ্তি আটকে দিয়ে বঞ্চনা ও বৈষম্য বিলম্বিত করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? বিএড প্রশিক্ষণ আছে, যথাযথ অভিজ্ঞতা আছে, চাকরি বিধির সব শর্ত পূরণ করেও কেন ২০-২৫ বছর যাবত ঐ সকল শিক্ষক বৈষম্য-বঞ্চনা মাথায় নিয়ে অবসরে যাবেন? মামলার অযুহাত, টাইমস্কেল নেওয়ার অযুহাত, এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে আর কতদিন শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখবেন? এতে কার লাভ? কার স্বার্থ?
লেখক: সহকারী শিক্ষক, খলাগাঁও করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়, রাজনগর, মৌলভীবাজার