দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা ৩ মাসের মধ্যে প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশনা এমন সময় আসলো যখন খসড়া নীতিমালা তৈরি করে ফেলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
শিক্ষা সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হাইকোর্ট থেকে বলা হয়েছে বলে একজন আইনজীবী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন সাড়ে পাঁচ লাখের মতো। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার থেকে নির্ধারিত বেতন স্কেলের মূল অংশ ও কিছু ভাতা পেয়ে থাকেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আলোচনা ও নীতিমালা তৈরির কথা বলা হলেও বর্তমানে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির ব্যবস্থা নেই। এক প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে সেখান থেকেই অবসর নিতে হয় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের। একসময় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুরোপুরিভাবে নিজেদের উদ্যোগে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিতো। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয়ভাবে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান এনটিআরসিএর অধীনে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার মাধ্যমে বাছাই ও সুপারিমে এসব পদে নিয়োগ পাওয়া যায়। আগে এই পরীক্ষায় পাস করার পর একটি নিবন্ধন সনদ দেয়া হতো। তারপর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কমিটির মাধ্যমে আলাদা নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিতো। তবে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সেই জায়গায় পরিবর্তন করে এখন আবেদন অনুযায়ী এনটিআরসিএ প্রতিষ্ঠান ঠিক করে সুপারিশ করে দেয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, এ ধরনের শিক্ষক আছেন এক লাখের বেশি। মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হলো, যেহেতু এসব শিক্ষক এনটিআরসিএর সুপারিশে, মানে সরকারের ঠিক করে দেয়া প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছেন, তাই আপাতত তাদের বিষয়টিই বদলির জন্য বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। বেসরকারি কমিটির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ও পরে এমপিওভুক্ত অন্য শিক্ষকেরা যেহেতু নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়েছেন, তাই তাদের আপাতত বদলির বিবেচনায় রাখা হয়নি।
নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, এনটিআরসিএর প্রথম গণবিজ্ঞপ্তি থেকে সংস্থাটির সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাই বদলির সুযোগ পাবেন। সমপদে ও সমস্কেলে বদলির জন্য এই নীতিমালা প্রযোজ্য হবে। প্রতিবছরের ১৬ অক্টোবর থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলির আবেদন নিষ্পত্তি করা হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির আবেদন আহ্বান, গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করবেন। প্রয়োজন হলে তিনি এই ক্ষমতা অধস্তন দপ্তরে অর্পণ করতে পারবেন। বদলির পুরো প্রক্রিয়াটি সফটওয়্যারের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে। মাউশি বদলির আবেদন ফরম ও সফটওয়্যার তৈরি করবে।
খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বদলির আদেশ জারি হওয়ার পর শিক্ষকেরা বদলি করা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের কাছে যোগদানপত্র পেশ করবেন। তারপর প্রতিষ্ঠান যোগদানপত্র গ্রহণ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। বদলির পরিপ্রেক্ষিতে এমপিওভুক্ত অংশের (সরকারি অংশ) বেতন, অন্যান্য আর্থিক সুবিধা এবং জ্যেষ্ঠতার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে।
এই বদলির ক্ষেত্রে এনটিআরসিএর আবেদনে উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানা থেকে দূরত্ব বিবেচনায় যিনি যতো দূরে চাকরিরত আছেন, তিনি বদলির জন্য অগ্রাধিকার পাবেন। তবে নারী শিক্ষক-কর্মচারীরা স্বামী বা নিজের স্থায়ী ঠিকানায় বদলি হতে পারবেন। একই পদে একাধিক ব্যক্তি বদলি হওয়ার পর আগ্রহী হলে এনটিআরসিএর মেধাক্রম, জ্যেষ্ঠতা ও স্থায়ী ঠিকানা থেকে কর্মস্থলের দূরত্বের ভিত্তিতে আবেদনটি বিবেচনা করা হবে। নিয়োগ পাওয়ার পর যেসব শিক্ষকের চাকরি দুই বছর পূর্ণ হবে, তারা বদলির আবেদন করতে পারবেন। পারস্পরিক বদলির আবেদনে উভয় প্রার্থীর সম্মতি থাকলে বদলির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। তবে পদ শূন্য না থাকলে বদলির কোনো আবেদনই বিবেচনা করা হবে না।
খসড়া নীতিমালা এই বদলির ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতামূলক নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, ‘বদলির আবেদন অধিকার বা সুযোগ হিসেবে দাবি করা যাবে না। বদলির জন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠনের সুপারিশ শৃঙ্খলাজনিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। বদলির জন্য বদলি হওয়া শিক্ষক কোনো ভাতা পাবেন না। বদলির আদেশ জারির সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান বদলি হওয়া শিক্ষকের অবমুক্তি (রিলিজ) নিশ্চিত করবেন। অন্যথায় অষ্টম দিনে বদলি করা শিক্ষক সরাসরি অবমুক্ত বলে গণ্য হবেন। আর যোগদানপত্র দেয়ার সাত দিনের মধ্যে তা গ্রহণ করতে হবে।