বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্বব্যাপী সংহতি জোরদার করার এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবেলায় সমন্বিতভাবে প্রচেষ্টা গ্রহণের ওপর জোর দিয়েছেন। শেখ হাসিনা শীর্ষ সম্মেলনে তাঁর চার দফা সুপারিশে এই আহ্বান জানান।

তিনি শীর্ষ সম্মেলনে ‘ওয়ান আর্থ’ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার সময় তাঁর সুপারিশের প্রথম পয়েন্টে বলেছেন, ‘এখানে জি-২০ এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক  প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং বাংলাদেশ সংকট মোকাবেলায় কার্যকর সুপারিশ তৈরি করতে তাদের প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’ 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রগতি ময়দানের ভারত মান্দাপান কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্টিত শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করে। 

শেখ হাসিনা দ্বিতীয় পয়েন্টে বলেন, মানবতার বৃহত্তর স্বার্থে এবং সারা বিশ্বে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সাহসী, দৃঢ় এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উন্নয়নের জন্য প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোকে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করা উচিত।’

তৃতীয়ত, ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের ত্রয়ীকার সদস্য হিসেবে তিনি বলেন, ‘জলবায়ুজনিত অভিবাসন মোকাবেলায় অতিরিক্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা করার জন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্ষতি এবং ক্ষয়ক্ষতি তহবিল চালু করার জন্য আমি সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘আসন্ন কপ-২৮ এ, আমি সকলকে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার সাথে ক্ষতি এবং ক্ষতির জন্য তহবিল বাস্তবায়নের উপর জোর দেয়ার জন্য অনুরোধ করব।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী অবশেষে অভিমত ব্যক্ত করেন, সব মানুষেরই উপযুক্ত জীবনযাপনের সমান অধিকার থাকা উচিত।‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের ডিনজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় ভুলবেন না এবং তাদের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমরা আমাদের পৃথিবীকে বাঁচাতে ও শক্তিশালীকরণে জি-২০ অংশীদারদের সাথে কাজ করার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি’। 

তিনি বলেন, ‘আমাদের একে অপরের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে এবং আমাদের মাতৃ পৃথিবীর যতœ নেওয়ার জন্য নিজেদেরকে পুনরায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’

২০২২ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত জাতিসংঘ মহাসচিবের গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেখ হাসিনা উল্লিখিত সুপারিশগুলো করেছেন।

শীর্ষ সম্মেলনের এই অধিবেশনে ভাষণকালে তিনি আরো বলেন, ‘আমরা এমন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা চাই যা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্র্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং জ্ঞান-ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রযুক্তিগত স্থনান্তরকে অর্থায়নের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে।’

অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে এই শীর্ষ সম্মেলনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন ‘আমাদের মাতৃ পৃথিবী’ জলবায়ু পরিবর্তনের একাধিক সংকট, কভিড-১৯ মহামারী এবং নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চ্যালেঞ্জ দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই চ্যালেঞ্জগুলো মানবজাতির শান্তি ও উন্নয়ন  এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য সম্প্রদায়ের গ্রহণ করা অপরিহার্য।’

তিনি আরো বলেন, বাস্তবতা হল মানুষ এবং আমাদের মাতৃভূমি কেবল পারস্পরিক সহায়তার মাধ্যমেই টিকে থাকতে পারে।

‘অতএব, আমাদের উন্নয়ন প্রচেষ্টা সবুজ এবং টেকসই উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে’-উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন, আমরা সার্কুলার অর্থনীতির পদ্ধতিও নিচ্ছি।’

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে নগণ্য অবদান রাখলেও এর পরিণতির শিকার হিসেবে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। 

বিশ্বব্যাংকের গ্রাউন্ডসওয়েল রিপোর্ট ২০২১ অনুসারে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ১৩.৩ মিলিয়ন মানুষকে তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, যদিও বাংলাদেশের প্রশমনের সুযোগ কম। প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন এবং এসডিজি অর্জনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিপজ্জনক প্রভাব মোকাবেলায় অনেক রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ বা আশ্রয় নামে একটি প্রকল্প শুরু করেন।

তিনি উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগের অধীনে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত তাঁর সরকার প্রায় ৮ লাখ ৪০ হাজার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনা মূল্যে বাড়ি ও জমি দিয়ে পুনর্বাসন করেছে। 
তিনি বলেন ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত করা।’

বাংলাদেশ ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল’ হিসেবে পরিচিত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং জলবায়ু অভিযোজনে শক্তিশালী  অবস্থা অর্জন করেছে।

দুর্যোগ মেকাবেলার জন্য তাঁর সরকার ৪ হাজার ৫৩০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এছাড়া এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য ‘মুজিব কিল্লা’ নামে আরো ৫৫০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করছে।

তিনি বলেন,‘বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলার জন্য আমরা ‘মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান’ চালু করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও সমৃদ্ধ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদি বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে।

তিনি আরো বলেন, ‘২০২২ খ্রিষ্টাব্দে আমার সরকার জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা চালু করেছে। ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। আমরা এই বিষয়ে উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে সক্রিয় সমর্থনের আহ্বান জানাই।’

সূত্র : বাসস


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054738521575928