জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে তাদের উপেক্ষা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সচিবালয়ের লাইব্রেরিতে বসে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে দেখা গেছে। কর্মকর্তাদের অভিযোগ এ ধরনের আচরণ সত্যিকার অর্থে দুঃখজনক।
অপরদিকে নয় দফা দাবি আদায়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়। বুধবার সচিবালয়ে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের করিডোর ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে শতাধিক কর্মচারী করিডোর ব্লকেড কর্মসূচিতে অংশ নেন। আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে তারা এই কর্মসূচি পালন করেন। তাদের কর্মসূচি চলাকালে সচিবালয়ের প্রধান ফটক ছাড়া বাকি সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্কাবস্থান থাকতে দেখা গেছে।
জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এবিএম আবদুস সাত্তার বলেন, সংগঠনের নেতারা কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি কোনো একটা কাজের ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেছেন, দুজন প্রতিনিধি বিকাল ৫টায় গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে। যেহেতু সংগঠনের সদস্যদের বিষয় সুতরাং আমরা তার এ প্রস্তাব মেনে আসা ছাড়া আর কি করতে পারি? তিনি আরও জানান, বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের তরফ থেকে একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিকাল ৫টায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে দেখা করে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের কথাগুলো লিখিত আকারে দিয়ে আসবেন।
তবে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, বিগত ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে বৈষম্যের শিকার হয়ে যে সব কর্মচারী অবসরে গেছেন তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে যে কমিটি করা হয়েছে, সেই কমিটির কর্মপরিধিতে বলা হয়েছে কমিটি ইচ্ছে করলে কেস টু কেস পর্যালোচনা করে কর্মকর্তাদের বিষয়ে কি সুবিধা দেওয়া যায়, সে সুপারিশ করতে পারবে। আবার কমিটি চাইলে ৩ মাস পর সবার আবেদন পর্যালোচনা করে একসঙ্গে সুপারিশ জমা দিতে পারবে। যেহেতু ইতোমধ্যে অনেক কর্মকর্তার আবেদন যাচাই-বাছাই করে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে, সেহেতু তাদের বিষয়ে সরকার চাইলে এখনি ব্যবস্থা নিতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আরও জানান, আমরা এ বিষয়টি বলার জন্য সচিবালয়ে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে দেখা করতে এলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান বলেন, আমি এখন উপদেষ্টাদের মিটিংয়ে যাব। পরে আসেন, এখন কথা বলা যাবে না। এছাড়া তিনি আরও বলেন, এখন থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রশ্ন পাঠালে আমি জবাব দেব। সরাসরি কথা বলার মতো সময় তার হাতে নেই বলেও জানান।
অপরদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের করিডরে অবস্থান নেওয়া কর্মচারীরা বলেন, তাদের দাবি বর্তমান প্রশাসনিক কর্মকর্তা (এও) এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিও) পদনাম পরিবর্তন করে উপসহকারী সচিব করতে হবে। সাঁটমুদ্রাক্ষরিক-কাম কম্পিউটার অপারেটর, কম্পিউটার অপারেটর, অফিস সহকারী মুদ্রাক্ষরিক কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদনাম পরিবর্তন করে অতিরিক্ত উপসহকারী সচিব করতে হবে। এছাড়া প্লেন পেপার কপিয়ার, ডুপ্লিকেটিং মেশিন অপারেটর, দপ্তরি এবং অফিস সহায়কের পদনাম পরিবর্তন করে সাচিবিক সহকারী করতে হবে। তারা ইতঃপূর্বে উপস্থাপন করা কর্মচারীদের ৯ দফা দাবি নিয়ে কথা বলেন।
আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে গড়িমসি করছে কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১ মাস আগে আমাদের দাবির বিষয়ে বিধিগত মতামত চাওয়া হয়েছে কিন্তু বিধিগত মতামত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বিধি অনুবিভাগের যুগ্মসচিব মো. শামীম সোহেল কর্মচারীদের কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তিনি। শামীম সোহেল বিষয়টি নিয়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছেন বলে কর্মচারীদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মো. শামীম সোহেলকে তার অফিস কক্ষে পাওয়া যায়নি। সেলফোনে তার মন্তব্য নেওয়ার জন্য কল করলে তিনি কেটে দেন। জানতে চাইলে বিধি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। সে কারণে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। এছাড়া কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কর্মচারীদের অভিযোগ রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসব।