সমন্বয়কদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বৈঠকে কম সংখ্যক সমন্বয়ক উপস্থিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে সারা দেশের সমন্বয়কদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টার এ বৈঠকে কেন্দ্রীয় সমন্বয়করা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬০-৭০ জন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। বিকাল সাড়ে ৩টায় বৈঠকটি শুরু হয়, শেষ হয় রাত ৮টায়।
বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ ও মুখপাত্র উমামা ফাতেমাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে ব্রিফ করেন আরিফ সোহেল ও হান্নান মাসউদ।
তারা বলেন, বৈঠকে দুই-তিন দিনের মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি নির্বাহী কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দেড় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। বৈঠকে বিপ্লবের ১০০ দিন পূর্তিতে আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওইদিন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের খোঁজ-খবর নেবে ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ। এ ছাড়া নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, মতবিনিময় ও পরামর্শ করা হবে।
দুজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আপত্তি প্রসঙ্গে তারা বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা না করে উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়েছে, আমরা আপত্তি জানিয়েছি। এখন কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তাই দলীয় ফোরামে আলোচনা করে উপদেষ্টা নিয়োগ করার যৌক্তিকতা নেই।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও বঞ্চনার শিকার হয়ে গণ আন্দোলনে আহতদের সড়ক অবরোধ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, এটা দেখা সরকারের দায়িত্ব। সরকার না দেখলে আমরা প্রতিবাদ করব।
বৈঠকে সম্প্রতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উপদেষ্টা নাহিদুল ইসলামকে লক্ষ্য করে ছাত্রদের ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগানের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এর পেছনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেন সমন্বয়করা। এসব ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ বিরুদ্ধে সারা দেশের সমন্বয়কদের সতর্ক ও ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বৈঠকে সংগঠনের শৃঙ্খলা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে আন্দোলনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা আঞ্চলিক নেতাদের ফোন রিসিভ করেন না বলে অভিযোগ ওঠে। কেউ কেউ সমন্বয়ক কমিটির পদ-পদবি নিয়েও কথা বলেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, সামনের সারির নেতারা টাকা-পয়সা পেয়ে এখন আর আঞ্চলিক সমন্বয়কদের চিনতে চাইছেন না অথচ যদি অনাকাক্সিক্ষত রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়, তাহলে তালিকায় থাকা ১৫৮ জনকেই বড় বিপদে পড়তে হবে। হয়তো আয়না ঘরে যেতে হবে বলেও বৈঠকে আশঙ্কা ব্যক্ত করা হয়।
এ সময় সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আপনারা আজ থেকে যত উপায়ে পারেন তদন্ত করেন। কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমরা কারো কাছ থেকে এক প্যাকেট লেক্সাস বিস্কুট খেয়েছি বা পাঁচ টাকা নিয়েছি তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দেব।
বৈঠকে কম সংখ্যক সমন্বয়ক উপস্থিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হান্নান মাসউদ বলেন, আপনারা যদি মনে করেন, আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ, তাহলে দায়িত্ব ছেড়ে দেবে। আমাদের কমিটি, আগামী দিনের কর্মপন্থা নিয়ে আপনাদের পরামর্শ নিতেই এই বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। কিন্তু যেখানে ১৫৮ জন সমন্বয়ক উপস্থিত থাকার কথা, সেখানে অর্ধেকের কম উপস্থিত হয়েছেন।
তিনি উপস্থিত সবাইকে উদ্দেশ করে বলেন, ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। আন্দোলনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। এ সময় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে হান্নান মাসউদ স্বাক্ষরিত নোটিসে দেশের চলমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা, আসন্ন কর্মসূচির রূপরেখা নির্ধারণ, কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির বিষয়ে বৈঠকটি আহ্বান করা হয়। বৈঠকে যথা সময়ে সমন্বয়ক কমিটির সবাইকে (১৫৮ জন) উপস্থিত থাকতে বলা হয়।