ব্যক্তির নামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নামকরণের খরচ কমলো

রুম্মান তূর্য |

 ব্যক্তির নামে বেসরাকরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও নামকরণ খরচ বা আমানতের পরিমাণ কমানো হয়েছে। এখন থেকে ব্যক্তি নামে স্কুল-কলেজের নামকরণ করতে সরকারে পূর্বানুমতি নিতে হবে। তবে, স্বাধীনতা বিরোধী-যুদ্ধাপরাধী, রাষ্ট্রদ্রোহী বা দণ্ডিত কোনো ব্যাক্তির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা নামকরণ করা যাবে না। অশোভনীয় বা নেতিবাচক নামেও স্কুল-কলেজের নামকরণ হবে না। ব্যবহার করা যাবে না স্কুল-কলেজের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ। আর চাইলেই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে ফেলতে পারবে না প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। আর দানের জামিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে তা নিঃশর্তে হস্তান্তরকৃত ও রেজিস্ট্রি করা হতে হবে। আর আগে নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অনাগ্রসর দুর্গম অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য শর্ত শিথিল হলেও এখন থেকে সেসব শর্ত শিথিল হবে কী-না সে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হয়েছে।

এসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করে বেসরকারি স্কুল কলেজ স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির সংশোধিত নীতিমালা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল বৃহস্পতিবার এ নীতিমালা জারি করেছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বেসরকারি মাধ্যমিক শাখার উপসচিব মিজানুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ জারি হওয়া নীতিমালা কিছুটা সংশোধন করে জারি করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ, জমি, ব্যক্তির নামে প্রতিষ্ঠান স্থাপনের খরচসহ বেশ কিছু পরিবর্তন এনে নীতিমালা সংশোধন করে তা জারি করা হয়েছে।  

‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির নীতিমালা ২০২২ (সংশোধিত-২০২৩)’ শীর্ষক নীতিমালাটি গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। 

জানা গেছে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির চূড়ান্ত অনুমোদনের দায়িত্ব শিক্ষা বোর্ডগুলোকে দিয়ে ‘বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক) স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির নীতিমালা ২০২২’ জারি করা হয়েছিলো। সেই নীতিমালাটি সংশোধন করলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সংশোধিত নীতিমালাতেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতির চূড়ান্ত অনুমোদনের দায়িত্ব শিক্ষা বোর্ডগুলোকে দেয়া হয়েছে। 

সংশোধিত নীতিমালায় ব্যক্তির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের খরচ বা জমা রাখা স্থায়ী আমানতের পরিমাণ কমানো হয়েছে। ব্যক্তির নামে নিম্নমাধ্যমিক স্কুল স্থাপন বা নামকরণে আগে ২৫ লাখ টাকা আমানত রাখার বিধান থাকলেও তা কমিয়ে ১৮ লাখ টাকা করা হয়েছে। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যক্তির নামে নামকরণে আগে ৩০ লাখ টাকা আমানত রাখার বিধান থাকলেও তা কমিয়ে করা হয়েছে ২০ লাখ টাকা। আর ব্যক্তির নামে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ স্থাপন বা নামকরণে আগে ৫০ লাখ পাকা আমানত জমা রাখার বিধান থাকলেও তা কমিয়ে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। 

সংশোধিত নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ নিয়ে কিছু বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা বিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহী, যুদ্ধাপরাধী কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন বা ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত কোনো ব্যক্তির নামে বা সমাজে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে এমন কোনো নেতিবাচক নামে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা নামকরণের অনুমতি দেয়া যাবে না। নেতিবাচক ও অশোভনীয় কোনো নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা যাবে না। প্রয়োজন মনে করলে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এসব কারণে পরিবর্তন করতে পারে। নামের সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা যাবে না। 

ব্যক্তির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করতে সরকারের পূর্বানুমতি নিতে হবে। ব্যক্তির নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন বা নামকরণের ক্ষেত্রে ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্ত, বিশেষ অবদান ইত্যাদি উল্লেখ করে নাম পরিবর্তনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভার কার্যবিবরণীর কপিসহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে আবেদন করতে হবে। শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শন প্রতিবেদন ও জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মত গ্রহণ করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রতি তিনমাস পর পর মঞ্জুরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ কমিটি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আবেদন অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যান করবে।

ব্যক্তি নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নামকরণে নির্দিষ্ট পরিমান টাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধান, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার যৌথ স্বাক্ষরে সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানত (এফডিআর) হিসেবে জমা রাখতে হবে। তবে, সরকার অনুমতি না দিলে স্থায়ী আমানত হিসেবে এ টাকা জমা করা যাবে না। তবে জরুরি প্রয়োজনে এ টাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পূর্বানুমতি নিয়ে খরচ করা যাবে। 

আগের নীতিমালায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমির অখন্ডতা, পরিমান ও মালিকানা সম্পর্কে সহকারী কমিশনারের প্রত্যয়ন সংযুক্ত করতে বলা ছিলো। তবে সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, দানমূলে প্রাপ্ত জমির ওপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দান-হস্তান্তর নিঃশর্ত ও রেজিস্ট্রিকৃত হতে হবে। তবে জমির অখন্ডতা, পরিমান ও মালিকানা সম্পর্কে সহকারী কমিশানরের প্রত্যয়ন সংযুক্ত করার বিধানটি নতুন নীতিমালাতেও রাখা হয়েছে। 

আগের নীতিমালায় বলা ছিলো, অনগ্রসর, ভৌগলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওড়, চরাঞ্চল, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, অনগ্রসর গোষ্ঠির ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি দেয়ার অনুমতি বিশেষ বিবেচনায় শর্ত শিথিলযোগ্য। তবে নতুন সংশোধিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনগ্রসর, ভৌগলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওড়, চরাঞ্চল, বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, অনগ্রসর গোষ্ঠির ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন, পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি দেয়ার অনুমতি বিশেষ বিবেচনায় শর্ত সরকার শিথিল করতে পারবে। অর্থাৎ সে শর্ত শিথিল করার ক্ষমতা সরকারের হাতে দেয়া হয়েছে।

 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029051303863525