নওগাঁর মান্দা উপজেলার বিদ্যামাধুরী শিক্ষায়তন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ব্যাকডেটে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ফারুক হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থী বাছাইয়ের দায়িত্ব বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ)। কিন্তু ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি ওই শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্কুলটির প্রধান শিক্ষিকা ভারতী রাণীকে শোকজ করেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।
বৃহস্পতিবার মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ ওই প্রতিষ্ঠান প্রধানকে শোকজ নোটিশ দেন। নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে প্রধান শিক্ষক ভারতী রাণীকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২০২২ খিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ে ব্যাকডেটে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ে ফারুক হোসেন নামের একজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ওই বছরের ৯ জানুয়ারি দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে সরেজমিনে ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ফারুক হোসেন নামের কোনো শিক্ষকের তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই সময় প্রধান শিক্ষিকা ভারতী রাণী দৈনিক শিক্ষাডটকমের কাছে দাবি করেছিলেন তার প্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের কোনো শিক্ষক নেই। একই দাবি করেছিলেন ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি প্রধান শিক্ষিকা স্বামী পরিমল রায়।
সেসময় বিদ্যালয় থেকে ব্যানবেইসে এন্ট্রি করা তথ্যে ফারুক হোসেন নামের কোনো শিক্ষকের তথ্য পাওয়া যায়নি। এর প্রায় পৌনে দুই বছর পরে দৈনিক শিক্ষাডটকমের হাতে আসে প্রতিষ্ঠানটির সাম্প্রতিক আপলোডকৃত ব্যানবেইসের তথ্য। এতে দেখা যায় গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে ফারুক হোসেনের নাম রয়েছে। ব্যানবেইসে তাকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল নিয়োগ দেখানো হয়েছে।
এবিষয়ে ২০২২ খিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ফারুক হোসেন দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, তিনি বিদ্যামাধুরী বিদ্যায়তন বালিকা বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের পদে নিয়োগ নেননি। তিনি ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নয়। একটি এনজিওতে কর্মরত অবস্থায় রাজশাহীতে অবস্থান করছেন। ব্যানবেইসে তথ্য প্রকাশের পর এ বিষয়ে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও সেটি তখন বন্ধ পাওয়া যায়।
জানা গেছে, আগে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও প্রভাষক নিয়োগ হতো কমিটির মাধ্যমে। তবে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ মে গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গ্রন্থাগার প্রভাষক পদে নিয়োগ সুপারিশের দায়িত্ব এনটিআরসিএকে দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা ও স্থানীয়রা বলছেন, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি নিয়োগ পেলেও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল নিয়োগ দেখিয়ে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার পাঁয়তারা করছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভারতী রাণী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছিলেন, ফারুক হোসেনকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তিনি রেগুলার নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক নন। খণ্ডকালীন শিক্ষকের তথ্য ব্যানবেইসে এন্ট্রির বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, কিভাবে তার নাম এসেছে তা দেখে জানাবো।
বিদ্যালয়ের সভাপতি পরিমল রায় দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, তাকে আরো আগে থেকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। ভুলবশত হয়তো শিক্ষক হিসাবে তার নাম ব্যানবেইসে আপলোড হয়েছে। ব্যানবেইস থেকে তার নাম বাদ দেয়া হবে বলেও জানা তিনি।
এ বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তায় অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ বৃহস্পতিবার ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভারতী রাণীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন।
কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রাপ্তির বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক ভারতী রাণীর মুঠোফোনে দৈনিক শিক্ষা ডটকমের পক্ষ থেকে একাধিক বার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ আলম শেখ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তায় প্রকাশিত সংবাদ দেখে আমি ওই বিদ্যালয়ের ব্যানবেইসের তথ্যে ফারুক হোসেন নামের একজনের তথ্য পাওয়া গেছে। যাকে গত ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ এপ্রিল নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু আমি গত ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি এই উপজেলায় বদলি হয়ে আসি। তখন থেকে এ পর্যন্ত ওই বিদ্যালয়ে এ পদে নিয়োগ বোর্ড গঠন করে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাই ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ভারতী রাণীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি।