বড় চ্যালেঞ্জ নিয়েই সরকারের ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীনদের টানা ১৬তম এবং দেশের ৫৩তম বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সংসদে ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করবেন তিনি। এবার তার বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’। 

এবারের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার লক্ষ্যে বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ অঙ্কের বাজেট। মূলত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের দিকে নজর দিতে গিয়ে বাজেটের আকার বাড়াতে পারেনি সরকার।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৮ লাখ কোটি টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখছেন দেশের ১৮তম অর্থমন্ত্রী। যেখানে আড়াই লাখ কোটি টাকারও বেশি বাজেট ঘাটতি পূরণে দেশি-বিদেশি ঋণ নিতে হবে। অতীতের রেকর্ড ভেঙে বাজেটের প্রায় ৬৪ শতাংশ অর্থ পরিচালন ব্যয়ে বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবার। এক রকম বাধ্য হয়েই আরও ১৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে হবে ঋণের সুদ পরিশোধে।

নাগালের বাইরে মূল্যস্ফীতি

হিসেব মতে, গত ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের উপরে রয়েছে। বিশেষ করে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে বার বারই সরকারের পক্ষ থেকে আশার কথা শোনানো হচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে পারছে না সরকার। লাগাম টেনে ধরতে না পারার এই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই নতুন অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে অর্থবিভাগ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী বলবেন অর্থমন্ত্রী সেটিই এখন দেখার বিষয়।

বাজেটের আকার ও ঘাটতি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাবনা। এবার বাজেটে ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা দাগে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হচ্ছে। এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণও রয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা- নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। নতুন রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারও বেশিরভাগ আয় করার দায়িত্বটি দেওয়া থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরও ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

কমে যাচ্ছে রিজার্ভ

উচ্চ মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় পৃথিবীর অনেক দেশ সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বব্যাপী সুদের হার বৃদ্ধি পায়। আর উচ্চ মূল্যস্ফীতি রোধে সুদের হার বৃদ্ধি উন্নয়নশীল দেশগুলোর পুঁজি প্রবাহকে দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। এর ফলে একদিকে উন্নয়নশীল দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে এবং নিজস্ব মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটছে। অন্যদিকে বৈদেশিক ঋণের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এমনটি উল্লেখ করা হয়েছে সরকারের মধ্য মেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতিতে (এমটিবিএফ)।

নতুন অর্থবছরের জিডিপি

আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। অবশ্য বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! - dainik shiksha সেই অভিযুক্ত রেবেকাই এবার মাউশি ঢাকার ডিডি! জাল সনদে চাকরি, লাইব্রেরিয়ানকে তলব - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি, লাইব্রেরিয়ানকে তলব শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ - dainik shiksha শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের নতুন পদক্ষেপ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ - dainik shiksha প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে- জানতে চায় অধিদপ্তর এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস - dainik shiksha এক ফ্যাসিস্টকে দেশ ছাড়া করেছি অন্যকে সুযোগ দেয়ার জন্য নয়: সারজিস কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024669170379639