বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জের মো. খোরশেদ বেপারি। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। হাটেন লাঠি ভর দিয়ে অন্যের সহায়তা নিয়ে। চোখেও কম দেখেন এই প্রবীন। কিন্তু তাতে কি? পারিবারিক কলহের জের ধরে তার বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে ধর্ষণ চেষ্টার মতো জঘন্য একটি অপরাধের মামলা। যদিও এ মামলায় হাইকোর্ট খোরশেদ বেপারিকে আগাম জামিন দিয়েছেন। এ আদেশের পর বরিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতেও স্থায়ী জামিন পেয়েছেন এই বৃদ্ধ।
হাইকোর্টে আগাম জামিন নিতে আসামীকে স্বশরীরে হাজির হতে হতে হয়। একদিকে করোনার সময় অন্যদিকে বয়স ও শারীরিক অবস্থার বিবেচনা এযেন এক আবেগঘন পরিবেশ। বিচারপতি দেখেই এ আসামীর মামলা শুনতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কার্যতালিকায় থাকা বেশ কয়েকটি মামলার আগেই খোরশেদ বেপারীর আবেদন শুনানী করে আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। এমনটিই এই প্রতিবেদককে জানান, আসামীপক্ষের আইনজীবী হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, খোরশেদ বেপারির মামলাটি আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়। কারণ ৬৫ বছরের বৃদ্ধ যিনি ঠিকভাবে দাঁড়াতেই পারেন না তিনি ধর্ষণ চেষ্টা করবেন কিভাবে? এই আইনজীবী বলেন, যতটুকু শুনেছি পারিবারিক কলহের কারণে এই বৃদ্ধের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তার মামলায় হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করি। শুনানী শেষে গত ৮ ডিসেম্বর আগাম জামিন দেন আদালত।
সেদিন এ মামলার আসামি মেহেন্দিগঞ্জের ১১নং চানপুর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্র্রামের মোঃ খোরশেদ বেপারী হাতে লাঠি, চোখে চশমা ও নুয়ে পড়া কুজো শরীর নিয়ে হাজির হয়েছিলেন হাইকোর্টে। বিধি অনুযায়ী আগাম জামিনের অর্থই হচ্ছে হাইকোর্টে আসামি আত্ম সমর্পন করে জামিন প্রার্থনা করবেন শুনানি শেষে আদালত মনে করলে জামিন দিবেন। নাহলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেবেন। সে হিসেবে খোরশেদ বেপারীকে আদালতে স্বশরীরে হাজির হওয়া ছিলো একমাত্র অবলম্বন।
২০২০ খ্রিষ্ট্রাব্দের ২২ আগষ্ট আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টা উল্লেখ করে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে খোরশেদের বিরুদ্ধে মামলার করেন স্থানীয় রাজিয়া বেগম।
আবেদনে তিনি বলেন, ‘আমি নিম্ম স্বাক্ষরকারী মোছা. রাজিয়া বেগম সাং-কাশিপুর থানা মেহেন্দিগঞ্জ, জেলা বরিশাল এই মর্মে টাইপকৃত এজাহার দায়ের করিতেছি যে আমার স্বামী একজন পঙ্গু মানুষ। আমার মেয়ে মামলার ১ নং সাক্ষী ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী | আসামি মোঃ খোরশেদ বেপারীর বসত ঘর আমার বসত ঘরের কাছাকাছি | খোরশেদ বেপারী স্বভাব চরিত্র ভালো না। ঘটনার দিন গত ২২ আগষ্ট সকাল অনুমান ১১টার দিকে খোরশেদ বেপারীর স্ত্রী মোছা: নুর নাহার তাহার বড় বউকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যায়। যাওয়ার সময় উক্ত নুর নাহার বেগম তাহার ঘরে থাকা ছোট বউ সুমাইয়ার সাথে আমার মেয়েকে থাকতে বলে। আমি তাতে সম্মতি দেই।’
ঘটনার দিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৭ টায় সুমাইয়া আক্তার বসত ঘরের ভিতরের রুমে ঘুমানো ছিল। এই সুযোগে উক্ত আসামি খোরশেদ বেপারী তাহার বসত ঘরের সামনের বারান্দার রুমে দক্ষিণ পাশে খাটের উপর আমার মেয়েকে জোর পূর্বক ধর্ষণ করার জন্য চাপিয়া ধরে। আমার মেয়ে চিৎকার করতে চাইলে তাহার মুখ চাপিয়া ধরে এবং তাহার পড়নের সালোয়ার-কামিজ জোর পূর্বক খুলে ফেলে। আসামী আমার মেয়েকে ধর্ষণ করার জন্য আমার মেয়ের স্পর্শ কাতর স্থানে হাত দেয়। এক পর্যায়ে ধর্ষণ করিতে উদ্যত হলে আমার মেয়ে জোরাজুরি করে মুখ খুলিয়া চিৎকার দেয়। তাতে সাক্ষী সুমাইয়া টের পাইয়া ঘটনাস্থলে আসিয়া আমার মেয়েকে উদ্ধার করে।
আসামি তাতে ক্ষিপ্ত হইয়া আমার মেয়ে সহ সাক্ষী সুমাইয়াকে গালাগালি করে এবং ঘটনা কাউকে না বলার জন্য হুমকি দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি এলাকায় জানা জানি হয়। আমি আমার মেয়ের৷ নিকট সমস্ত ঘটনা জানতে পারি। আসামীর ভয়ে আমরা কোথাও অভিযোগ করতে পারিনি। এই জন্য থানায় এজাহার দায়ের করিতে বিলম্ব হল।
হাইকোর্টের জামিনের পর বরিশালের আদালত তাকে জামিন দেয়। ১৪ জানুয়ারি রবিশালের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মহিবুল হাসানের আদালতে আসামিপক্ষে শুনানী করেন অ্যাডভোকেট আবু আল রায়হান।