পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের বানিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের সংকট লাঘবে ২০২০ সালে দ্বিতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু তিন বছরেও ভবনের কাজ শেষ না হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। পাঠদান চলছে বারান্দায়। জায়গার অভাবে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে। এতে পাঠদান ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবকাঠামোগত এই সমস্যায় বিদ্যালয়টিতে দিন দিন কমছে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।
জানা গেছে, ১৯৪০ সালে প্রতিষ্ঠিত বানিয়া পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। সে তুলনায় শ্রেণি কক্ষ না থাকায় ২০২০ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের তত্ত্বাবধানে দ্বিতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এক কোটি ১৭ লাখ টাকা বরাদ্দের এই ভবনের নির্মাণ কাজ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে জুনে শেষ করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে ভবনটির কাজ শেষ করেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি কক্ষ রয়েছে। এর একটিতে অফিস কক্ষ এবং অপর দুইটিতে সমন্বয় করে বসেন শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৬ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, নতুন ভবন নির্মান কাজ শুরু হলে আগের তিনকক্ষ বিশিষ্ট পুরাতন ভবনটি ভেঙে ফেলা হয়। তারপর থেকেই কক্ষ সংকট চলছে। এখন সকাল শিফটে দুই কক্ষের একটিতে প্রথম শ্রেণি এবং অপরটিতে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বসানো হয়। আর বারান্দায় বসানো হয় শিশু শ্রেণিকে। একইভাবে বিকেল শিফটে তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিকে কক্ষে বসানো হলেও চতুর্থ শ্রেণির পাঠদান হয় বারান্দায়। বারান্দায় পাঠদানে শিক্ষার্থীদের অমনযোগসহ শিক্ষকরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন।
শিক্ষার্থীরা জানায়, বারান্দায় বসে ক্লাস করা তাদের জন্য কষ্টকর। লিখতে গেলে পিঠ ব্যথা করে। এছাড়া খোলা বারান্দায় ক্লাস করতে গিয়ে রোদ সরাসরি গায়ে লাগে। আবার ফ্যানও নাই, তাই গরমে অনেক কষ্ট হয়। বৃষ্টি এলে ক্লাসবন্ধ করে অফিসে গাদাগাদি করে বসতে হয়।
বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক সানজিদা প্রধান বলেন, ভবনের কাজ ধীর গতির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছি আমরা। এ অবস্থায় বারান্দায় ক্লাস করাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মনযোগ ঠিক থাকেনা, আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে যাই। এছাড়া শীতকাল এবং বর্ষাতে খুবই সমস্যা হয়। সচেতন অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের অন্যত্র ভর্তি করাচ্ছেন।
বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মর্জিনা পারভীন বলেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে নতুন ভবনের কাজ শুরু হয়। এরপর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে জুনে কোনো কারণ ছাড়াই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। বারবার যোগাযোগ করেও ভবনের কাজ শুরু করাতে পারছি না। ভবনটির কাজ দ্রুত শেষ হলে আমাদের সংকট কেটে যেত। ঠিকাদার দুলাল চন্দ্র মোহন্তর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, এই জুনেই শেষ করতে চেয়েছিলাম। বিভিন্ন কারণে কাজটি শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বছরের মধ্যেই শেষ করব। বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মিজানুর রহমান বলেন, ভবনের কাজ থমকে থাকায় শ্রেণি কক্ষের সংকট নিরসন হচ্ছে না। ফলে বিদ্যালয়ে মানসম্পন্ন পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এতে অভিভাবকরাও ক্ষুব্ধ। অনেকেই তাদের সন্তানদের অন্য খানে ভর্তি করাচ্ছেন। ভবনের কাজ শেষ করতে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাচ্ছি না। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শাহরিয়ার ইসলাম শাকিল বলেন, ভবনটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।