ভর্তি পরীক্ষাও অনলাইনে নেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করলেও পরীক্ষা নিতে সক্ষম হয়নি। পাশাপাশি এবারই প্রথম ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে সমন্বিত, সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। কিন্তু কারো পক্ষে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। একমাত্র সরকার নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মেডিক্যালের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। শনিবার (১০ জুলাই) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তিত তারিখ অনুযায়ী ৩১ জুলাই থেকে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের যে হার তাতে মনে হয় তাদের পক্ষে নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। সমন্বিত, গুচ্ছ কিংবা একক—যেভাবেই হোক না কেন, প্রত্যেকে পরীক্ষার তারিখ পিছিয়ে দিয়েছে। কিন্তু সেই তারিখ অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে কি না তা বলা যাচ্ছে না। আর পরীক্ষা না নেওয়া গেলে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝে হতাশা কাজ করবে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সশরীরে পরীক্ষার আয়োজনের পাশাপাশি বিকল্প নিয়েও আমাদের ভাবা উচিত। পরীক্ষা আয়োজনের নতুন নতুন পদ্ধতি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কিভাবে আমরা সামনের দিকে এগোতে পারি তা ভাবা উচিত, নইলে আমরা অনেক পিছিয়ে পড়ব।

করোনা কমে যাবে এমন ধারণা থেকেই আমরা সশরীরে পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব সময় সশরীরে সব ধরনের পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে। কিন্তু শুরু থেকেই যদি বাইরের দেশের মতো পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হতো, তাহলে শিক্ষার্থীরা অনেক উপকৃত হতো। করোনা কমে গেলে সশরীরে ক্লাস ও পরীক্ষা এবং বেড়ে গেলে অনলাইনে। এতে আমরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন রক্ষা করতে পারতাম এবং সেশনজট থেকে তারা মুক্তি পেত। দেরিতে হলেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন অনলাইনে পরীক্ষার আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে। এরই মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন করে অন্যান্য সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু করছে। আশা করা যায়, করোনার গতি-প্রকৃতি যা হোক না কেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম এখন আর ব্যাহত হবে না। শিক্ষার্থীরা প্রায় এক বছরের সেশনজটে আছে; বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন করলে সেমিস্টারের সময়কাল কমিয়ে এনে সেশনজট কমাতে পারবে। কিন্তু আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা। কেননা আমাদের প্রথম বর্ষ নামে কোনো বর্ষ অচিরেই থাকবে না। তার চেয়ে বড় কথা, ২০০০ সালে যারা এইচএসসি পাস করেছে, তারা বর্তমানে কোনো শিক্ষা কার্যক্রমে নেই। 

শুরুতে সশরীর ও অনলাইন উভয় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা শেষে সব কিছু বিবেচনা করে সশরীরে পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে মোতাবেক কার্যক্রমও শুরু হয়। কিন্তু হঠাৎ করে করোনার ঊর্ধ্বগতি সব কিছু ওলটপালট করে দেয়। শুরুতে আমাদের অভিজ্ঞতা অনেক কম ছিল। আমরা অনলাইনে একাডেমিক পরীক্ষাগুলো নেওয়ার চিন্তা করছিলাম না। এখন অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে এবং আরো হবে। এ পদ্ধতির সুবিধা ও সীমাবদ্ধতার বিষয়ে আমরা নিত্যনতুন জানছি ও শিখছি। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম আর ব্যাহত হবে না। শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে; কিন্তু শিক্ষা বন্ধ হওয়ার কোনো উপক্রম তৈরি হবে না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন পরীক্ষা নিয়ে এখানে একটু বলতে চাই। আমরা পরীক্ষা পদ্ধতির ভেতর একটু পরিবর্তন এনেছি। প্রতিটি কোর্সে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা ও মেধা যাচাইয়ের জন্য মৌখিক পরীক্ষারও আয়োজন করছি। শিক্ষার্থীরা কতটুকু জানল ও শিখল তা যাচাইয়ের এই ক্ষেত্র আমরা তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন পথ অনুসরণ করলে মেধা যাচাই যেমন হবে, তেমনি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। পাশাপাশি তাদের শিক্ষাজীবনও অব্যাহত থাকবে।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা

ঠিক একাডেমিক পরীক্ষার আদলে আমরা যদি সৃজনশীল প্রশ্ন দিয়ে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে পারি, তবে দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারব। সে ক্ষেত্রে করোনা কোনো বাধা হবে না। যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের কথা ভাবছি সেভাবে হবে, তবে সৃজনশীল প্রশ্নে সংক্ষিপ্ত নম্বরের পরীক্ষা নিয়ে মেধা যাচাই করব। পাশাপাশি শিক্ষার্থীর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার নম্বরও মূল্যায়নে প্রাধান্য পাবে। এ পদ্ধতির অনেক সীমাবদ্ধতা থাকবে কিন্তু সেগুলো সামনে নিয়ে কাজ করতে হবে। করোনা ও বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে। কেননা আমরা আর কত দিন শিক্ষার্থীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখব। তাদের মানসিক বিষয়টি আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তাদের দীর্ঘ সময় লেখাপড়ার বাইরে রাখলে বিপথগামী হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

কোনো পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব না হলে দ্বিতীয় বিকল্প পথও ভাবতে হবে। সরকার যেখানে অটো পাসের মতো করে এইচএসসি সম্পন্ন করেছে, সেখানে আমরাও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আগের পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারি। আমাদের সময়ক্ষেপণ করার দরকার নেই। করোনাকে সামনে নিয়ে কোনো একটি পথ বের করতে হবে। আমরা যদি মনে করি করোনা শনাক্তের হার পাঁচের নিচে এলে সব কিছু স্বাভাবিক করব, তাহলে পিছিয়ে পড়ব। এমনও হতে পারে, আমরা এ বছরে সশরীরে পরীক্ষাই নিতে পারলাম না। তাহলে শিক্ষার্থীদের কি এভাবেই বসিয়ে রাখব; বরং সব পরীক্ষা অনলাইনে নিতে হবে এমন ধারণা নিয়ে এবং সে মোতাবেক পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। সরকার ও স্ব স্ব কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, আমরা কোনোভাবেই অটো পাসের ব্যবস্থা করব না। কেননা এতে শিক্ষার্থীদের মনোবল ভেঙে পড়ে, তাদের নৈতিক পরাজয় হয় এবং ফলাফল সম্পর্কে অন্যদের বিরূপ ধারণা তৈরি হয়। শিক্ষার স্তরভেদে অ্যাসাইনমেন্ট, অনলাইন ও মৌখিক পরীক্ষার যেকোনো একটি কিংবা একাধিক পরীক্ষা পদ্ধতির অনুসরণের মধ্য দিয়ে তাদের পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা উচিত। আর ভর্তি পরীক্ষাও অনলাইনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।

লেখক : ড. নিয়াজ আহম্মেদ, অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059261322021484