ভর্তিতে সরাসরি লিখিত পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে বুয়েট উপাচার্য

বুয়েট প্রতিনিধি |

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়ার প্রস্তাব এলেও বুয়েটে ভর্তিতে আগের মতোই সরাসরি লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার।

তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষার সময়, নম্বর বণ্টন ও আবেদনের যোগ্যতা নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন তিনি।

অধ্যাপক সত্য প্রসাদ বুধবার  বলেন, “আমরা অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করছি না। আমাদের লিখিত পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল থাকবে। তবে প্যানডেমিক বিবেচনায় পরীক্ষার সময়, নম্বর বণ্টন ও যোগত্যা নির্ধারণে পরবির্তন আসতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে অল্প অল্প শিক্ষার্থী নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে।

“এটা আমার পারসোনাল অভিমত। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একাডেমিক কাউন্সিল সর্বোচ্চ অথোরিটি। এইচএসসির রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার পর ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে একাডেমিক কাউন্সিল।”

প্রতি বছর এক হাজারেরও বেশি নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি নেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়- বুয়েট। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে কয়েক ধাপে বাছাই করে ‘ক’ ও ‘খ’ দুটি ইউনিটে ভাগ করে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। তিন ঘণ্টার ওই লিখিত পরীক্ষায় গণিত, পদার্থ, রসায়ন এই তিন বিষয়ে ২০০ নম্বর করে মোট ৬০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয় শিক্ষার্থীদের। তবে ‘খ’ ইউনিট তথা স্থাপত্য বিভাগে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের  ৬০০ নম্বরের পাশাপাশি ৪০০ নম্বরের অংকন পরীক্ষা নেওয়া হয়।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের আগের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে ফল দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এই ফল প্রকাশ করা হতে পারে।

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’ পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বুয়েট উপাচার্য বলেন, “আমরা সব সময় লিখিত পরীক্ষা নিয়ে থাকি। এখন অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়াটা আমাদের জন্য পসিবল হবে না।”

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা কবে নাগাদ হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভর্তি পরীক্ষাটা নির্ভর করছে এইচএসসির  রেজাল্টের উপর। রেজাল্টটা না দেখে তো আমরা আমাদের নীতিমালা প্রণয়ন করতে পারি না। আমাদের ভর্তি পরীক্ষার আগে এসএসসি ও এইচএসসির মার্কস দ্বারা ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একটি শর্ট লিস্ট করা হয়। এখন এই এসএসসি ও এইচএসসির মার্কস যদি একই রকম হয়ে যায় তখন তো নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে হবে। আামরা অপেক্ষা করছি কীভাবে এইচএসসির রেজাল্ট পাবলিশ হয়।”

ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যারা বুয়েটে ভর্তি হতে চায়  তারা জানে বুয়েটে কীভাবে পরীক্ষা দিতে হয়। বুয়েটের নিয়ম তো আর পাল্টাবে না। লিখিত পরীক্ষাই নিতে হবে।”

বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ আইনে পরিচালিত হয়। অপরদিকে ৩৯টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে।

অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে আলাদা আলাদা পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয় বলে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা দিতে হয়। একই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার পরীক্ষা দিতে শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভিন্ন ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়। আবার এক দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার তারিখ পড়লে শিক্ষার্থীকে যে কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হয়।

শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি লাঘব করতে এবার বেশ আঁটঘাট বেঁধেই গত ১১ ফেব্রুয়ারি সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক করে সমন্বিত পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছিল ইউজিসি।

এ নিয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠানোর আগে ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটও এতে রাজি। পরে বুয়েটসহ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গলোর আপত্তির কারণে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।

এরইমধ্যে করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হলে এবার ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ইউজিসিকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। মহামারীর কারণে পূর্বের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে এইচএসসিতে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত হলেও স্নাতক পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই নিতে চান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা।

গত ১৭ অক্টোবর ইউজিসির সাথে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ’ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দেয়। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা সফটওয়্যারটি কাজে লাগাতে প্রস্তাব করেন তারা।

অপরদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজনকে এখন সময়ের সবচেয়ে বড় দাবি হিসেবে দেখছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তবে ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে।

এ অবস্থায় দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এবার ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করতে শিগগিরই উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। বৈঠকের তারিখ ও প্রস্তাবিত পদ্ধতি নির্ধারণ করতে বৃহস্পতিবার ইউজিসি নিজেদের মধ্যে একটি সভা ডেকেছে।

এ বিষয়ে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, “ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে বসতে চাই। এর আগে প্রস্তাবিত পরীক্ষা পদ্ধতি ও বৈঠকে তারিখ নির্ধারণ বৃহস্পতিবার আমরা সিদ্ধান্ত নেব। এটা ইউজিসির ইন্টার্নাল মিটিং। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সাথে আলোচনা করেই ভর্তি পরীক্ষার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।” 

বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম  বলেন, গত ১৭ অক্টোবরের সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েটসহ অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ছিলেন। সেখানে ভর্তি পরীক্ষা নিয়েই নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে মত দিয়েছিলেন তারা। তবে সেটা অনলাইনে হবে না কি অফলাইনে হবে, সেটা পরবর্তী মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছিল।

“কিন্তু এরইমধ্যে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলছেন। এখন ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সাথে বৈঠকের পর বলা যাবে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031089782714844