ডিজিটাল লটারিতে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিন লাখ পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাবে, চলতি বছর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন আট লাখ ৭৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। সে হিসেবে সাড়ে ৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় ভর্তি প্রক্রিয়ায় আবেদন করেও লটারিতে নির্বাচিত বা স্কুলে ভর্তির জন্য মনোনিত হতে পারেননি। অপরদিকে, তিন লাখ শিক্ষার্থীকে ভর্তির মনোনয়ন দেয়ার পরও সরকারি-বেসরকারি স্কুলে আট লক্ষাধিক আসন ফাঁকা রয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে কেন্দ্রীয় লটারি প্রক্রিয়া শেষে ফল প্রকাশ করা হয়।
যদিও চলতি শিক্ষাবর্ষে লটারির মাধ্যমে স্কুল নির্বাচন না পাওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি কী উপায়ে হবে সে বিষয়ে শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো সুস্পষ্ট ঘোষণা এখনো আসেনি। তবে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে ভর্তি করতে স্কুলগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, মোট ১১ লাখের কিছু বেশি শূন্য আসনে ভর্তি প্রক্রিয়া চলে। এসব আসনে মোট তিন লাখ ৫ হাজার শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
ওই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে সরকারি ও সরকারিকৃত ৬৫৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শূন্য ১ লাখ ১৮ হাজার আসনে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ১ লাখ ৩৯ জন শিক্ষার্থী। এসব আসনে ভর্তির জন্য ৫ লাখ ৬৩ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন। অপর দিকে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে মহানগর ও জেলা সদরের ৩ হাজার ১৮৮টি বেসরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন ২ লাখ ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শূন্য ছিলো ১০ লাখ ৩ হাজার আসন।
এ হিসাব অনুযায়ী সরকারি ও সরকারিকৃত স্কুলগুলোতে ১৮ হাজার ও বেসরকারি স্কুলগুলোতে ৮ লাখ আসন ফাঁকা আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন করেও ৪ লাখ ৬৩ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তির সুযোগ মেলেনি। আর বেসরকারি স্কুলের বিপুল পরিমাণ আসন ফাঁকা থাকলেও ১ লাখ ৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাননি।
এদিকে, লটারিতে আবেদন করেও ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিকটবর্তী বেসরকারি স্কুলের শূন্য আসনে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন ভর্তি কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ভর্তি লটারির মাধ্যমে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়েছে। কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হয়েছে। আমরা চাই সব স্কুলকেই সেরা করে গড়ে তুলতে। তাই দৈবচয়নে লটারির আয়োজন করা হচ্ছে। সরকারি স্কুলে ভালো শিক্ষক, শিক্ষার ভালো মান এ ধরনের চিন্তা করে বেশি আবেদন পড়েছে। অপরদিকে, বেসরকারি বহু স্কুলে শিক্ষার্থীরা আবেদনই করতে চাননি। তাই এমনটা হয়েছে। যারা ভর্তির সুযোগ পাননি তাদের বলবো বাসার কাছের বেসরকারি স্কুলে শূন্য আসনে ভর্তি হতে। কারণ, আমাদের সব স্কুল অচিরে ‘সেরা স্কুলে’ পরিণত হবে।
সরকারি স্কুলগুলোতে শূন্য আসনের থেকে কয়েকগুণ শিক্ষার্থী আবেদন করলেও ১৮ হাজার আসন ফাঁকা থাকা নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, কিছু কিছু সরকারি স্কুলের কিছু আসন কোনো শিক্ষার্থী পছন্দ তালিকায় দেয়নি। তাই ওইসব আসন ফাঁকাই রয়ে গেছে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী আরো বলেন, লটারিতে ভর্তির মাধ্যমে যে কোনো শিক্ষার্থীর যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় জাতীয় নির্বাচনের কারণে বই উৎসব পিছিয়ে যেতে পারে বলেও জানান মন্ত্রী।
বেসরকারি স্কুলে ৮ লাখ আসন ফাঁকা রেখে লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর সুযোগ না পাওয়ার ব্যাখ্যায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও ভর্তি কমিটির সদস্যসচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, কিছু বেসরকারি স্কুলের আসনে কোনো পছন্দই পরেনি। কয়েকটি স্কুলের এক একটি আসনে একাধিক পছন্দ পরেছে। তাই যেসব আসনে পছন্দ পরেনি সেগুলো ফাঁকা থেকে গেছে। অপরদিকে, যে এক লাখ শিক্ষার্থী নির্বাচিত হননি তারাও বেশি পছন্দ পড়া আসনে আবেদন করেছিলেন। ফলে নির্বাচিত হতে পারেননি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভর্তির সুযোগ না পাওয়া ওই ৫ লাখ ৬৮ হাজার শিক্ষার্থী বেসরকারি স্কুলগুলোর ফাঁকা আসনে ভর্তি হলেও মহানগর ও জেলা সদরের স্কুলগুলোতে সুযোগ পেলেও বেসরকারি স্কুলগুলোতে সাড়ে তিন লাখের মতো আসন ফাঁকাই থেকে যাবে।
এর আগে বেলা ১২টার দিকে ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এক ঘণ্টায় সরকারি স্কুলে ভর্তির ফল প্রস্তুত হয়। পরে বেলা দেড়টার দিকে প্রক্রিয়া হয় বেসরকারি স্কুলে ভর্তির লটারির ফল। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকারসহ শিক্ষা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। ডিজিটাল লটারির এ অনুষ্ঠান মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ফেসবুক পেজ ও বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে সয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষা ডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।