এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েও বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাননি প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী। তারা বিভিন্ন কলেজে একাদশে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদন করলেও নির্বাচিত হতে পারেননি। সারাদেশে এদের সংখ্যা ২ হাজার ৮৪২ জন। অনলাইন আবেদনে কলেজ পছন্দ দিতে কৌশলী না হওয়ায় তারা জিপিএ-৫ পেলেও একাদশে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে একাদশে শিক্ষার্থী ভর্তির পর সারাদেশের কলেজগুলোর মোট আসনের অর্ধেক ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। সারা দেশের উচ্চমাধ্যমিক পাঠদান করা ৭ হাজার ৭০৬টি কলেজ ও মাদরাসায় একাদশে মোট আসন সংখ্যা ২৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৯৩টি। কিন্তু আসন অনুযায়ী শিক্ষার্থী নির্বাচিত হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৬৬ জন।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, পর্যাপ্ত আসন থাকলেও অনেকে সুযোগ পাননি। এর কারণ উচ্চাশা। সবাই সেরা কলেজে পড়তে চায়। শিক্ষার্থী নিজ বাড়ি বা আশেপাশের প্রতিষ্ঠান নির্বাচন না করে ঢালাওভাবে বড় বড় কলেজে আবেদন করেছেন। নাম দেখে কলেজে ভর্তির আবেদন করায় অনেক শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাননি। তবে, তারা চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ পাবেন। ফেব্রুয়ারির শুরুতে অনলাইনে চতুর্থ ধাপে আবেদনের সুযোগ দেয়া হবে। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমরা কলেজগুলো থেকে তথ্য নেবো কোথায় কত সিট খালি আছে। সে প্রেক্ষিতে একটি তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, যারা সুযোগ পাননি তাদের নিজ নিজ নম্বর অনুযায়ী খোঁজখবর নিয়ে চতুর্থ ধাপে আবেদন করার পরামর্শ দেবো। বুঝে শুনে আবেদন করলে তারা অবশ্যই চতুর্থ ধাপে ভর্তির সুযোগ পাবেন।
জানা গেছে, একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির তিন ধাপে আবেদন গ্রহণ করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের কলেজে ভর্তি শুরু হয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলবে কলেজগুলোতে।
২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন ১৭ লাখ ৬২ হাজার শিক্ষার্থী। কলেজ ভর্তির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার কলেজ ও মাদরাসায় একাদশে ভর্তির আবেদন করেছিলেন। নির্বাচিত হয়েছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার ১৬৬ জন। আর আবেদন করেও নির্বাচিত হতে পারেননি ২২ হাজার ৬০৪ জন শিক্ষার্থী। নির্বাচিত হতে না পারা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২ হাজার ৮৪২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন।
জানা গেছে, জিপিএ-৫ পেয়েও ভর্তির জন্য নির্বাচিত হতে না পারাদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডের ৮৩১ জন, কুমিল্লা বোর্ডের ৩৪৮ জন, রাজশাহী বোর্ডের ৬০৯ জন, যশোর বোর্ডের ১০৯ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডের ৯১ জন, বরিশাল বোর্ডের ১৩০ জন, সিলেট বোর্ডের ৬৪ জন, দিনাজপুর বোর্ডের ৪১০ জন, ময়মনসিংহ বোর্ডের ১৪৬ জন, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ৬৯ জন ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডর ৩৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
এদিকে সারা দেশের বিভিন্ন কলেজ ও মাদরাসায় ১২ লাখ ৫৩ হাজারের বেশি আসন খালি থাকছে। এসব প্রতিষ্ঠানের একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের ২০ হাজার ৩৬৫টি, মানবিক বিভাগের ৮১ হাজার ৮৮৯টি, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ২৪ হাজার ১৯২টি, আলিমের (সাধারণ) ৬ হাজার ১৭৩টি, আলিমের বিজ্ঞান বিভাগের ৬২৯টি, আলিম মুজাব্বিদ বিভাগের ৩২৩টি, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৫২টি, সংগীতের ২০টি আসন ফাঁকা রয়েছে।
শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা কলেজে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হতে না পারা শিক্ষার্থীদের বুঝে শুনে চতুর্থ ধাপে আবেদনের পরামর্শ দিয়েছেন। তারা বলছেন, প্রচুর সিট খালি থাকছে। কিন্তু কম সিট থাকা তুলনামূলক নামী কলেজে ভর্তির চেষ্টা না করে বাড়ির কাছের বেশি সিট খালি থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চতুর্থ ধাপের পছন্দ তালিকায় দিতে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়েছেন।