গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ মাসুদা সিকদারের বিরুদ্ধে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন না বসিয়ে ৩৬ লাখ টাকা আত্মসাৎসহ অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এরমধ্যে কলেজের ম্যাগাজিন, কলেজ ডায়েরিসহ বিভিন্ন দিবস উদযাপনের নামের ভুয়া বিলভাউচার দিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসুদা সিকদার অধ্যক্ষ হিসাবে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ডিসেম্বর যোগদান করেন। তিনি চলতি বছরের পহেলা জানুয়ারি পিআরএল এ চলে যান। চার বছর দায়িত্ব পালনকালে তিনি নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। বিষয়টি বিভিন্ন শিক্ষক-কর্মচারীরা জানলেও তখন তারা এর প্রতিবাদ করেননি। তিনি চলে যাওয়ার পর নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের খবর বের হতে থাকে। তার এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে ২৪ জানুয়ারি কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় আলোচনা হয়। পরে কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মহিবুল হোসেনকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে রাজস্ব খাত থেকে কলেজে বিদ্যুতিক সাবস্টেশন বাবদ বাবদ ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বরাদ্দকৃত টাকা থেকে সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য গাজীপুরের ইনসাফ টেকনোলজি নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কিন্তু ওই সাবস্টেশনটি স্থাপন হয়নি। পরে অধ্যক্ষ কলেজের জন্য একটি ডিজেল জেনারেটর ও সোলার সিস্টেম স্থাপনের জন্য ইনসাফ টেকনোলজিকে কার্যাদেশ প্রদান করেন। কলেজে ডিজেল জেনারেটর না বসিয়ে এবং সোলার সিস্টেম সম্পূর্ণ স্থাপন না করে ৩৬ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকা তুলে নেন। এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইনসাফ টেকনোলজির মোবাইল নম্বরে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের ব্যবহৃত মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। বর্তমানে কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেন্টের (সিইডিপি) মাধ্যমে নতুন করে বরাদ্দকৃত অর্থে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
কলেজের কর্মচারী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলে আমরা প্রায় ১০০ কর্মচারী প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে জমা দেই। যা পরবর্তীতে লভ্যাংশসহ ১৮ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা হয়। সমস্ত টাকা অধ্যক্ষ নিজ নামে জমা রাখেন। কর্মচারীদের জমাকৃত টাকা হতে পাঁচ লাখ টাকা ফেরত দিয়ে বাকি ১৩ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকার কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বর্তমানে পিআরএলে আছেন।
তিনি আরো জানান, সাবেক অধ্যক্ষ মাসুদা সিকদার আমাদের জমাকৃত টাকা ব্যাংকে না রেখে ‘কিংশুক বহুমুখী সমবায় সমিতি’ নামক একটি সমিতিতে নিজ নামে রাখেন। বর্তমানে যোগদানকৃত অধ্যক্ষের কাছে সব কর্মচারী বিষয়টির সুরাহা চেয়ে আবেদনও করেছেন।
সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসার মাসুদা সিকদার বলেন, তিনি কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। তিনি কলেজে নেই সে জন্য তার বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিভিন্ন দিবসে যে ব্যয় হয়েছে তা ওই দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্যরাই ভালো বলতে পারবে। কলেজের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন তৈরি, জেনারেটর ক্রয় না করা এবং সোলার সিস্টেম পুরোপুরি না লাগানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ও প্রফেসর বিএম আব্দুল হান্নান বলেন, কর্মচারীদের জমানো ১৮ লাখ টাকার মধ্যে ৫ লাখ টাকা তিনি দিয়েছেন বাকি ১৩ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা জানুয়ারি মাসে দেয়ার কথা ছিল কিন্তু ওদের টাকাগুলো তিনি এখনো দেননি। উনার বিরুদ্ধে কয়েকটি বিষয়ে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে কথা উঠেছিল। সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়া গেলে বিস্তারিত জানা যাবে।