দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া পর্যন্ত প্রথম ধাপে সফলভাবে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল করেছে। আজ শনিবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ছেড়ে আসা পাথরবোঝাই ট্রেনটি ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে রূপদিয়া স্টেশনে পৌঁছায়। আগামী জুন মাস নাগাদ এই পথে বাণিজ্যিক ট্রেন চলতে পারে।
রেলসংশ্লিষ্টরা জানান, ভাঙ্গা থেকে যশোরমুখী ৬০ কিলোমিটার গতিতে এলেও মালবাহী ট্রেনটির ফিরতি পথের গতি থাকবে ৮০ কিলোমিটার। কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে। আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার দুই দিন ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত বিভিন্ন গতিতে ট্রেন চালিয়ে নির্মাণ অবস্থা পরীক্ষা করা হবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে এই রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়ায় রেলওয়ে জংশন থাকছে। এ ছাড়া নগরকান্দা, মুকসুদপুর, লোহাগড়া, নড়াইল ও যশোরের জামদিয়া ও রূপদিয়ায় রেলস্টেশন হয়েছে।
ট্রায়ালে অংশ নেওয়া রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ভাঙ্গা থেকে যশোর অংশের ৮৭ দশমিক ৩২ কিলোমিটার পথ ৮৪ কিলোমিটার বেগে পাড়ি দেয় ট্রেন। পথে কোথাও কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়নি। ১৫ মিনিট অবস্থানের পর ট্রেনটি আবার ভাঙ্গার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। আশা করা যাচ্ছে এই রুটে আগামী জুনের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
রেলওয়ে সূত্রমতে, এই প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত। মাঠপর্যায়ে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩ মে একনেকে ‘পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প’ নামে এটির অনুমোদন হয়। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা।
ভাঙ্গা যশোর অংশের ট্র্যাক ইনচার্জ আনোয়ারুল কবির বলেন, ‘নতুন এই ট্র্যাক করা হয়েছে চীনা প্রযুক্তিতে। ব্যবহার করা হয়েছে কংক্রিটের স্লিপার। এটি টেকসই যেমন, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও অনেক কম হবে।’ ট্র্যাক ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাফওয়ান হোসাইন রাতুল বলেন, ‘পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক নতুন এই রেললাইন দেশের রেল নেটওয়ার্ককে বিশেষ উচ্চতায় নিয়ে গেছে।’
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, ‘আগামী জুন বা জুলাইয়ের মধ্যেই নতুন রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল করবে।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তদারকিতে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরইসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রডগেজে নতুন রেললাইন স্থাপন করে। পদ্মা রেল সেতু হয়ে নতুন ট্রেন চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় খুশি স্থানীয়রা। তাঁদের দাবি, এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া নতুন রুট চালু হলে কম সময়ে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও উৎপাদিত কৃষিপণ্য ও মালামাল পরিবহন সহজ হবে। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে পাবে নতুন গতি।
প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘ভাঙ্গা-যশোর অংশের কাজ শেষে চলছে ট্রায়াল রান। এরপর পদ্মা সেতু হয়ে নতুন রুটে সোজা পথে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলবে। নতুন এই রেলপথ চালু হলে যশোর থেকে দূরত্ব কমবে অন্তত ১৯৩ কিলোমিটার। যুক্ত হতে পারবে ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কে।’