ভারতে কোচিংয়ে নিষেধাজ্ঞা, আমাদের করণীয় কী?

মাছুম বিল্লাহ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

১৬ বছরের কম বয়সী কোন শিক্ষার্থীকে কোচিং সেন্টারে ভর্তি না করাতে নতুন নির্দেশনা দিয়েছে ভারত সরকার। গত ১৮ জানুয়ারি দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা নির্দেশনায় কোচিং সেন্টারগুলোকে বলা হয়েছে, ষোল বছরের কম বয়সী কোনো শিক্ষার্থীকে তারা যেনো ভর্তি না করায়। দৈনিক শিক্ষাডটকমে এনডিটিভির বরাতে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, সফলভাবে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে ভর্তি হতে পারবেন। 

এই বয়সটি মূলত শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের সময়, সৃজনশীলতা চর্চা করার সময়। এই সময় যদি অন্যের দেওয়া নোট বা বুদ্ধি দিয়ে পুরোটাই চলতে হয় তাহলে শিশু শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়। শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা, অগ্নি দুর্ঘটনা, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা এবং শিক্ষা প্রদানের পদ্ধতি নিয়ে সরকারের কাছে বিভিন্ন অভিযোগ আসার পর নতুন এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। 

এছাড়া কোচিংয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে কিছু শর্তও দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কোচিং সেন্টারে যাদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে তাদের অবশ্যই গ্রাজুয়েশন থাকতে হবে। বিভ্রান্তিকর প্রতিশ্রুতি এবং ভাল নম্বর পাইয়ে দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া যাবে না, ষোল বছরের কম বয়সী কাউকে ভর্তি করানো যাবে না এবং পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও আসনের ব্যবস্থা করতে হবে। 

কোচিং নামক বিষয়টি শুধু আমাদের দেশেই নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোসহ উন্নত বিশ্বেও বিদ্যমান, যদিও রকমফের রয়েছে। তবে, আমাদের দেশে এবং বোধকরি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও বিষয়টির নেগেটিভ প্রভাব বেশি হওয়ায় দেশটির সরকার ওই গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা জারি করেছে। বিষয়টি আমাদের সেনসেটাইজ করার মতো। 

শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্যই হলো- কোনো বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে এর অন্তর্নিহিত মর্ম অনুধাবন করা এবং বাস্তবজীবনে এর প্রয়োগ করে জীবনের চাহিদা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করা, বায়োলজিক্যাল ভাষায় এগুলোকে বলা হয় কগিনিটিভ স্কিলস বা জ্ঞানীয় দক্ষতা যা কোনো সমস্যা বিশ্লেষণ করে সমধান করার সক্ষমতা শেখায়, জ্ঞানীয় ক্ষমতাকে কখনো কখনো সমষ্টিগতভাবে জ্ঞানীয় বুদ্ধিমত্তা বা জ্ঞানীয় চিন্তা বলা হয়, এই ক্ষমতার বলেই মানুষ বিশ্বের ঘটনাবলি উপলব্ধি করতে পারে, ঘটনাপ্রবাহ মনে রাখতে ও ফোকাস করতে পারে, পরবর্তীকালে স্থান-কাল-পাত্র বুঝে ব্যবহার ও প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। প্রত্যেক মানুষের এ রকম বেশ কয়েকটি জ্ঞানীয় ক্ষমতা থাকতে পারে। যেমন মনোযোগ, স্মৃতি, যুক্তি, শ্রবণ এবং ভিজ্যুয়াল প্রক্রিয়াকরণ। যে শিক্ষার্থী গণিত ও জ্যামিতি কম বুঝেন, তিনি হয়তো একজন ভাল ফুটবলার কিংবা গায়ক। যে শিক্ষার্থীটি শ্রেণিকক্ষের পেছনে চুপচাপ বসে থাকেন তিনি হয়তো একজন ভাল আঁকিয়ে কিংবা সৃজনশীল। অথচ এগুলোর আবিষ্কার করে তার সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার ব্যবস্থা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় নেই। এগুলোর দিকে খেয়াল না রেখে আমরা সবাই ব্যস্ত কিভাবে শিক্ষকের কাছ থেকে, কোচিং থেকে শিক্ষার্থীদের নোট মুখস্ত করিয়ে দিতে। এটি যে শিশুদের জন্য বিরাট ক্ষতির কারণ সেটি আমরা কেউ খেয়াল করি না। শিশুদের প্রতিভা বিকাশের জন্য, তাদের সৃজনশীলতাকে জাগিয়ে দিতে যা যা করা দরকার আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখি না। ভারত সরকার সম্ভবত বিষয়টিতে একটু নজর দিয়েছে। 

এখন প্রশ্ন হচেছ, আমাদের দেশেই হোক কিংবা ভারতেই হোক, শিক্ষার্থীরা কোচিংয়ে কেনো যান? এর পজিটিভ ও নেগেটিভ দুটো দিকই রয়েছে। কিন্তু এর নেগেটিভ দিকগুলো বেশ শক্ত।

শিক্ষার্থীদের যে বয়সে নিজস্ব চিন্তাধারা বিকাশ করার সময় সেই সময় তারা কোচিংয়ের শিক্ষকদের তৈরি করা কিছু নোট মুখস্থ করে পরীক্ষার খাতায় লিখে দিয়ে আসেন। এতে শিক্ষার্থীর নিজস্ব সৃজনশীল ক্ষমতা মারাত্মকভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়। তবে এজন্য শুধু কোচিং সেন্টারগুলোকে দোষ দিলেই হবে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এটি চেয়ে আসছিলো। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীরা নিজ শ্রেণিকক্ষের ক্লাস শেষ করে অন্যান্য প্রাত্যহিক কার্যবালী ঠিক রেখে কোচিংয়ে ক্লাস করতে যাওয়ার ফলে তাদের যে নিজস্ব একটু সময় প্রয়োজন, তাদের যে উন্মুক্ত মাঠে খেলাধুলার প্রয়োজন সেই সময় তার আর পান না। তাছাড়া কোচিংয়ে যে গাদাগাদি ও ঠাসাঠাসি করে বসতে হয় তাও স্বাস্থ্যকর নয়, যেটি ভারত সরকার লক্ষ্য করেছে এবং সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত দিয়েছে। আর একটি চরম নেতিবাচক বিষয় হচেছ- অনেক কোচিং প্রশ্নফাঁসের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে আমরা জানতে পারছি। এভাবে আমাদের কোচিংগুলো নেগেটিভ ভূমিকা পালন করছে। এই নেতিবাচক অবস্থা থেকে আমরাও মুক্তি চাই।  

লেখক:  লিড এডুকেশন ও রিচার্স টিম, দৈনিক শিক্ষাডটকম 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না - dainik shiksha রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী - dainik shiksha মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর - dainik shiksha আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি - dainik shiksha মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0057969093322754