নিয়োগ বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুরের আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। জানা যায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আতাহার আলী গত তিন বছরে কলেজে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় এসব নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষকসহ ও অফিস স্টাফরা সাবেক জেলা প্রশাসককে অবহিত করলেও এর কোনো প্রতিকার পাননি।
আতাহার আলীর চাকরির মেয়াদ গত ৩০ ডিসেম্বর শেষ হয়। ওই বছরের ৮ আগস্ট ও ৬ মার্চ বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের অফিস আদেশ মোতাবেক তিনি ওই পদে থাকতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে মাদকসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। তার দায়িত্বকালীন অবস্থায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আট মাস ধরে বেতন এবং তিন বছরের ঈদগুলোতে কোনো বোনাস পাননি।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ অডিটে (২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩) ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪১ টাকা কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অতিরিক্ত উত্তোলন করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তিনি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্টের পাঁচ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন। সহকারী মেডিক্যাল অফিসার, গ্রন্থাগারিক, স্টোর কিপার, আয়া ও কুক নিয়োগ দেওয়ার নামে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। কলেজ অফিস থেকে ভুয়া ভাউচার এবং হাওলাত বাবদ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। অফিস স্টাফরা চাকরি হারানোর ভয়ে অনিয়মের বিষয়গুলো জানলেও প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তদন্ত করলে এসব বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যাবে বলে তারা জানান।
তিনি হোমিওপ্যাথিক বোর্ড থেকে পাওয়া ২০২২-২৩ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার চেক আনতে খরচ দেখিয়ে জনপ্রতি পাঁচ হাজার টাকা করে প্রায় এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়া সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষকসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে গিয়ে জনপ্রতি তিনি ৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজ লাইব্রেরি থেকে ২৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন, যা অভ্যন্তরীণ অডিটের তদন্তে পাওয়া যায়।
কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচের চেয়ে দেড় থেকে দুইগুণ টাকা বেশি খরচ দেখিয়ে ভাউচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন তিনি। সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মো. মোজাম্মেল হক পাটওয়ারী তার কর্মকালের শেষ দিকে ৬৬ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩১ টাকা কলেজের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রেখে যান। কিন্তু সে টাকার বিল, ভাউচার কলেজ অফিসে না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন। তিন অর্থবছরে (২০২১-২২, ২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪) কলেজের মোট আয় হয় ৫৭ লাখ টাকা। সে টাকারও কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে না। কলেজের অ্যাকাউন্টে থাকার কথা এক কোটি ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৩১ টাকা। কিন্তু অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই। যার জন্য ৮-৯ মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে শিক্ষক ও স্টাফদের।
অনিয়ম ও দুর্নীতি করার পরও কোন খুঁটির জোরে এখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন আতাহার আলী, যার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় এক বছর আগে। এ ব্যাপারে ডা. আতাহার আলী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সঠিক নয়। সব মিথ্যা। কীভাবে এখনো দায়িত্বে আছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘৬০ বছর হলে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এক্সটেনশন করা যায়। তারপরও আমি দায়িত্ব নেব না বলেছি, কিন্তু ম্যানেজিং কমিটি বলেছে বলে এখন আছি।’