ভারপ্রাপ্ত মাদরাসা সুপারের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর : রংপুরের মিঠাপুকুরের রানীপুকুর ইউনিয়নের মোলং শিহাব সায়রাজ দাখিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপারের একের পর এক দুর্নীতিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। একক আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে অর্থ আÍসাৎ, শিক্ষকদের বরখাস্ত, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি বরাদ্দ লুটপাট, প্রতিষ্ঠানের চাষের জমি থেকে আয়, মাদরাসার মাঠে গরুর হাটের আয় লুটপাট এবং গোপনে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিরুদ্ধে। 

আরবি শিক্ষক প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বে থাকার নিয়ম থাকলেও মাদরাসায় ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন বিএসসি শিক্ষক মোহসীন। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ায় তাকে কৌশলে ভুল বুঝিয়ে তিনি একক আধিপত্য বিস্তার করেছেন।

স্থানীয়দের ত্যাগ ও অর্থায়নে মাদরাসা প্রতিষ্ঠিত হলেও এখন কমিটিতে তাদের জায়গা হচ্ছে না। এমনকি প্রতিষ্ঠাতার জায়গা দখলে নিয়েছেন ফজলুল করিম বেগ। তিনি তৎকালীন ইউএনওর দায়িত্বে থাকায় নিজে প্রতিষ্ঠাতা সেজে দুই ছেলে সিহাব ও সায়রাজকে মাদরাসার নামের সঙ্গে যুক্ত করে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছেন মোলং শিহাব সায়রাজ দাখিল মাদরাসা।

ইবতেদায়ি প্রথম শ্রেণি থেকে দাখিল দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাদরাসার আশপাশের চার গ্রামের ৩০০ থেকে ৪০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়ার সুযোগ থাকলেও এখন নানা অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে স্থানীয়রা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

একসময় উপজেলার স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের করুণ দশায় এবার ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় সুশীল সমাজ। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধন করা হয়েছে। শুক্রবার এলাকাবাসীর উদ্যোগে মাদরাসা মাঠে মুক্ত আলোচনা শেষে এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ নেন শতশত স্থানীয় বাসিন্দা। তারা মাদরাসা রক্ষায় কমিটিতে স্থানীয়দের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি বরখাস্ত করে রাখা সহকারী সুপারকে বহালের দাবি জানান। সেই সঙ্গে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে থাকা মোহসীন মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অভিযাগে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।

ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নাছরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে দুজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা বলে তাদের কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন সুপার।

ম্যানেজিং কমিটির আরেক সদস্য সোহেল মিয়া বলেন, সম্প্রতি নিয়োগ দেওয়া আয়া রিফা মনি চাকরিতে যোগদানের তিন মাস পর পরকীয়ার কারণে নিরুদ্দেশ হন। ১৮ মাস পর তিনি আবার ফিরে এলে ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহসীন মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুনর্বহাল করেন। অথচ একই মাদরাসার সহকারী সুপারকে ছয় বছর ধরে বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। কারণ, সহকারী সুপার বহাল হলে তাকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ ছাড়তে হবে।

বরখাস্ত হওয়া সহকারী সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, সুপারিনটেনডেন্টের মৃত্যু হওয়ার পর আমাকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সব নিয়মকানুন মেনে সুপারিনটেনডেন্ট নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া হলে ১০ জন প্রার্থী আবেদন করেন। সেই সময় দায়িত্বে থাকা সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের পাঁয়তারা শুরু করলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে স্থানীয় অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা নিয়োগ পরীক্ষার দিন আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়। সেই প্রতিশোধ নিতে তৎকালীন সভাপতি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও বরখাস্ত তুলে নেয়া হয়নি।

সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে চাঁদা তুলে এই মাদরাসা গড়ে তুলেছি। এখানে চার গ্রামের মানুষের অবদান আছে। অথচ যারা জমি দান করেছেন, এখন তারাও বঞ্চিত। গোপনে বর্তমান সুপারের মনোনীত লোকজন দিয়ে কমিটি করা হয়।

ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহসীন মিয়া তার বিরুদ্ধে আনা নানা অভিযোগ অস্বীকার করেন। মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মোলং শিহাব সায়রাজ দাখিল মাদরাসার সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0049798488616943