দেশের বিভিন্ন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য থাকা ৩২ হাজারের বেশি শিক্ষক পদে প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত নিবন্ধিত প্রার্থীদের ভিরোল ফরম পূরণ শুরু করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। এই ফরম পূরণের পর প্রার্থীদের শিক্ষক পদে যোগদান করানোর চিন্তা করবে সংস্থাটি। ফরম পূরণ শেষে যোগদানের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে। তবে, ফরম পূরণে অনেক নতুন শিক্ষক অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের কেউ কেউ অসম্পূর্ণ ফরম জমা দিচ্ছেন, কেউ কেউ তথ্যে ভুল করছেন। আবার অনেক প্রার্থী এসএমএস না পাওয়ায় এখনো ভিরোল ফরম পূরণ করতে পারেননি।
আগামী ৩১ মে পর্যন্ত ভিরোল ফরম পূরণের সময় আছে। এ সময়ের মধ্যে প্রার্থীরা ভিরেোল ফরম পূরণ না করতে পারলে সময় বাড়ানো হতে পারে। তবে, এখন পর্যন্ত সে সিদ্ধান্ত হয়নি। আর ভি-রোল ফরম পূরণের কাজ শেষ হওয়ার পর প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে যোগদান করাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত অর্ধেক শিক্ষকও ভিরোল ফরম পূরণ করে পাঠাননি বলে জানান এনটিআরসিএর এক কর্মকর্তা। তবে ৩১ মের মধ্যে প্রার্থীরা ফরম পূরণ করবেন বলে আশাবাদী তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন শিক্ষক অনেকে ভিরোল ফরম পূরণে ভুল করছেন। তারা অসম্পূর্ণ তথ্য দিয়ে ফরম সাবমিট করছেন। অসম্পূর্ণ ফরমগুলো পূরণে আবার এনটিআরসিএতে আবেদন করছেন। আমরা তাদের অসম্পূর্ণ ফরম পূরণের সুযোগ দেবো। আবার অনেকে এখনো এসএমএস পাননি। তারা সিম হারিয়ে ফেলেছেন বলে জানিয়েছেন। তাদের নতুন সিমের নম্বর দিয়ে আবেদন করতে বলেছি। তাদেরও নতুন নম্বরে এসএমএস পাঠানো হবে। তারা ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ফরম পূরণ করবেন।
প্রার্থীরা কি রকম ভুল করছেন জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, মূল সমস্যা হচ্ছে তারা অসম্পূর্ণ ফরম সাবমিট দিচ্ছেন। এছাড়া বানান ভুল, টাইপিং মিসটেক তো আছেই। তিনি নির্দেশিকা অনুসরণ করে সচেতনভাবে ফরম পূরণ করতে প্রার্থীদের অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ভিরোল ফরম পূরণের সময় আছে ৩১ মে পর্যন্ত। আশা করি সব প্রার্থী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিকভাবে ফরম পূরণ করে জমা দেবেন। তবে ফরম পূরণের সময় বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত হয়নি।
ফরম পূরণের সময় বাড়ানো হবে কি-না জানতে চাইলে সচিব মো. ওবায়দুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নির্ধারিত সময়ে প্রার্থীরা ফরম পূরণ করতে না পারলে সময় বাড়ানো হতে পারে। প্রয়োজন হলে আমরা তাদের কয়েকদিন সময় বাড়িয়ে দেবো। তবে এখনো সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
গত ১২ মার্চ দেশের বিভিন্ন বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য থাকা ৩২ হাজার ৪৩৮ পদে নিবন্ধিত প্রার্থীদের শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রাথমিক সুপারিশ করেছিলো এনটিআরসিএ। গত ২৬ এপ্রিল রাত থেকে প্রার্থীদের অনলাইনে ভিরোল ফরম পূরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এদিকে নতুন শিক্ষকদের ফরম পূরণে ভুল করায় শঙ্কিত অভিভাবকরা। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের এক ছাত্রীর অভিভাবক হাবিবুর রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন শিক্ষকরা নিজেদের তথ্য দিতে ভুল করলে জাতি গড়বেন কিভাবে। করোনা পরিস্থিতি সবাইকে অনলাইনমুখী করেছে। কিন্তু শিক্ষকদের অনেকেই প্রযুক্তিতে দক্ষ হননি। নতুন শিক্ষকদের একই অবস্থা হলে ফল ভালো হবে না।
তবে, প্রবীণ শিক্ষক নেতা ও বাংলাদেশ অধ্যক্ষ পরিষদ সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ মাজহারুল হান্নানের মতে প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের সুযোগ দেয়ার আগে প্রার্থীদের কিছুটা প্রশিক্ষণ বা সঠিক দিক নির্দেশনা দেয়া উচিত ছিলো। তিনি দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষকদের ওপর নতুন কিছু দেয়ার আগে তাদের সে বিষয়ে দক্ষ করে নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে হিতে বিপরীত হবে। সময় বাঁচাতে ভিরোল ফরম পূরণ অনলাইনে করা হচ্ছে, তারা বারবার ভুল করলে সেই সময়ই ব্যয় হবে।