ভিকারুননিসার ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তির দায় নিচ্ছে না কেউই

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

প্রতিষ্ঠান প্রশাসনের অদক্ষতা ও দুর্নীতির মনোভাবের কারণে কিছুদিন পরপরই বিপদে পড়েন প্রতিষ্ঠানটির ছাত্রীরা। সর্বশেষ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। চলতি শিক্ষাবর্ষে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রতিষ্ঠানটির চারটি শাখায় ভর্তির কারণে এসব ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে এসব ছাত্রীকে কারা বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তির সুযোগ দিয়েছিল। ভর্তি বাতিলের দায় শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে চাপিয়েছেন অভিভাবকরা। তবে কোনো পক্ষই এসব ভর্তির দায় নিতে নারাজ। এদিকে প্রথম শ্রেণির এই ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বহাল রাখার দাবিতে আগামী রোববার সকালে ভিকারুননিসার সামনে মানববন্ধন করবেন অভিভাবকরা। এতে ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা অংশ নেবেন।

তালিকায় দেখা গেছে ভর্তি বাতিল হওয়া ১৬৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে মূল শাখার ৭৬, আজিমপুর শাখার ৪৭, ধানমন্ডি শাখার ১৯ এবং বসুন্ধরা শাখার ২৭ শিক্ষার্থী রয়েছে। কাগজপত্র অনুযায়ী, তাদের মধ্যে ১০ শিক্ষার্থী ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে এবং ১৫৯ শিক্ষার্থী ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছে।

 জানা গেছে, নির্দিষ্ট বয়সসীমার বাইরে লটারিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ভর্তির অভিযোগ তুলে ভর্তিচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি রিট করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এর আগে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে লটারিতে উত্তীর্ণদের ফল বাতিল বিষয়ে রিট আবেদনকারীদের একজন গত ১৭ জানুয়ারি মাউশির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট এই আবেদনটি ১০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি আদালতে ওঠে। এরপর শুনানি নিয়ে সেদিন হাইকোর্ট ওই অফিস আদেশ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য মাউশির সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরীকে ২৮ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। তিনি সেদিন হাজির হয়ে তার ভুল হয়েছে উল্লেখ করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অন্যদিকে মাউশি মহাপরিচালকের দাখিল করা সিদ্ধান্ত-সংবলিত একটি চিঠিও (স্মারক) আদালতে দাখিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

স্মারকের ভাষ্য, ভিকারুননিসা ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে প্রথম শ্রেণিতে বয়সসীমা নির্ধারণে জন্মতারিখ ১ জানুয়ারি ২০১৭ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ বেঁধে দেয়। প্রকৃতপক্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির নিম্নসীমা ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণকারী পাঁচ শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য ছিল; কিন্তু ভিকারুননিসার ভর্তি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারির আগে জন্মগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির অযোগ্য। ভিকারুননিসা অধ্যক্ষ বরাবর পাঠানো ওই স্মারকে আরও বলা হয়, ভিকারুননিসা কর্তৃক ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ঊর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে আবার তা অনুসরণ না করে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করানো ছিল বিধিবহির্ভূত।[

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি নীতিমালা-২০২৩ এ শিক্ষার্থীর বয়স বিষয়ে বলা হয়েছে-জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স ৬ বছরের বেশি হতে হবে। পরবর্তী শ্রেণিগুলোতে বয়স নির্ধারণের বিষয়টি প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ধারাবাহিকভাবে প্রযোজ্য হবে। ভর্তির বয়সের ঊর্ধ্বসীমা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় নির্ধারণ করবে।

ভিকারুননিসা দুষছে মাউশিকে

ভিকারুননিসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী বলেন, মাউশি যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবেই সব করা হয়েছে। তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থী ভর্তি করেছি, আবার তাদের নির্দেশনাতেই ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ভর্তিতে একটি বয়সসীমা নির্ধারণ করেছি। এর আগে এভাবেই নিতাম। করোনাকালীন গত বছর বা তার আগের বছর এভাবে নেওয়া হয়নি। মাউশি বলছে, বয়সের উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও কেন ভর্তি নেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করেছি আমাদের অভিভাবক দিয়েছে, তাই এটা আমাদের নিতে হবে। inside-ad]

মাউশি অধিদপ্তরের চোখে অপরাধী ভিকারুননিসা কর্তৃপক্ষ

মাউশির বিদ্যালয় শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে জন্ম হতে হবে ১ জানুয়ারি ২০১৮ এর আগে। তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। এর ফলে ৫ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি। সেজন্য তারা লিখিত দিলে আমরা ব্যাখ্যা দিয়েছি। পরে তারা সেসব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করেছে। উর্ধ্বসীমা নির্ধারণ করতে গিয়ে তারা সমস্যার সৃষ্টি করেছে। তারা মাউশিকে জানিয়েছে বললেও সেটির কোনো লিখিত নেই।

মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, বয়সসীমা ঠিক না রেখে স্কুল থেকে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। নীতিমালায় সর্বনিম্ন বয়সসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বসীমা প্রতিষ্ঠান ঠিক করবে, সেটিও বলা হয়েছে। 

অভিভাবকরা দায় চাপাচ্ছেন মাউশি ও স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর

ভর্তি বাতিল হওয়া ওই শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ দেওয়া, প্রতিষ্ঠান বাছাই করে দেওয়া, কাগজপত্র যাচাই করে ভর্তি করানো হয়েছে। এগুলো করেছে মাউশি ও স্কুল কর্তৃপক্ষই।

ভর্তি বাতিল হওয়া একজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক  বলেন, প্রথম দায় মাউশি অধিদপ্তরের। আমরা মাউশির ওয়েবসাইটে আবেদন করেছি। সব বিবেচনা করে আমাদের স্কুলগুলো সুপারিশ করা হয়েছে। আবেদন শেষে ভিকারুননিসাকে চূড়ান্ত করে দিয়েছে তারাই। এরপর দায় স্কুলের। বয়স নিয়ে সমস্যা থাকলে যখন কাগজপত্র জমা দেই তখন সেগুলো যাচাই করে বাদ দিতে পারত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030529499053955