ভিসি-প্রোভিসি নিয়োগ দক্ষতা-সততার মাপকাঠিতে হতে হবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শাবিপ্রবির ছাত্র আন্দোলন নিয়ে আজকের লেখাটা যখন শেষ করে ফেলেছি তখনই একটু আগে জানতে পারলাম জাতীয় সংসদে একটা নতুন আইন পাস হয়েছে। আইনটা নির্বাচন কমিশন গঠনসংক্রান্ত। ক’দিন ধরেই বিষয়টা নিয়ে এক ধরনের ঢাক ঢাক গুড় গুড় চলছিল। মাননীয় আইনমন্ত্রী ক’দিন আগে বলেছিলেন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ আর হাতে গোনা কয়েকদিন।

এর মধ্যে আইন প্রণয়ন করে সংসদে তা পাস করিয়ে সে অনুযায়ী নতুন কমিশন গঠন করা সম্ভব নয়। তার একদিন পরেই দেখা গেল মন্ত্রিসভা আইনমন্ত্রী কর্তৃক উত্থাপিত এতদসংক্রান্ত একটি খসড়া আইন অনুমোদন করে জাতীয় সংসদে তা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার মানে মাননীয় আইনমন্ত্রী মুখে যাই বলুন না কেন, ভেতরে ভেতরে ঠিকই তাঁর প্ল্যান মোতাবেক এগোচ্ছিলেন। সে যাই হোক, সব রকমের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে আইনটি খুবই দ্রুততার সঙ্গে পাস হয়ে গেছে এটাই বাস্তবতা। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত উপসম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।  

উপসম্পাদকীয়তে আরও জানা যায় তবে এখানে বেশ কিছু প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। প্রথমত, মাননীয় আইনমন্ত্রী কি আসলে আইনটির খসড়া চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য রেডি করে রেখে ইচ্ছাকৃতভাবে বলেছিলেন এখন এত অল্প সময়ের মধ্যে এই আইন পাস করা সম্ভব নয়। এতে করে জাতির সঙ্গে কি একটু লুকোচুরি খেলা হয়ে গেল না, যার নিশ্চয়ই কোনো প্রয়োজন ছিল না। দ্বিতীয়ত, এখন না হয় হাতে সময় নেই, কিন্তু গত ৫০ বছর কি কোনো সরকারের নজরেই পড়েনি সংবিধানের ১১৮ ধারা। ওখানে তো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ আছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন ঠিকই, তবে তা এই সংক্রান্ত প্রণীত একটি আইনের আওতায়। আশ্চর্য! গত ৫০ বছর ধরে এতগুলো কমিশন গঠিত হলো, তারা কাজও করে গেল, কিন্তু তাদের সবার গঠন প্রক্রিয়াটিই ছিল সংবিধানবহির্ভূত প্রক্রিয়ায়। আরো আশ্চর্যের বিষয়, এ নিয়ে কেউ কোনো উচ্চবাচ্যও করেনি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংসদে পাস হওয়া আইনটি সম্বন্ধে এ দেশের জনগণ, যারা নাকি দেশের মালিক, কিছুই জানল না। এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করা হলো না, কোনো মতামত আহ্বান করা হলো না, এমনকি যে সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতি বলা যেতে পারে নামকাওয়াস্তে সেই সংসদেও ‘ট্রেন-ছেড়ে-দিচ্ছে’ ধরনের ডিবেটের ভেতর দিয়ে যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হলো। এটা সেই পুরনো প্রবাদ বাক্যটাকেই স্মরণ করিয়ে দেয় : ‘ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে/আয় দেখি কাপড় নিয়ে। ’ আর যতটুকু বাইরে থেকে জানা গেছে তাতে মনে হচ্ছে ঠিক কমিশন গঠন নয়, তথাকথিত সার্চ কমিটি কীভাবে গঠিত হবে, তাদের কাজ কী হবে, এটাই আইনে স্পষ্টীকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে যে কাজটি আইন না করে আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি করতেন সেটাই আইনের মোড়ক লাগিয়ে হালাল করা হবে। আর সার্চ কমিটি যথারীতি গঠন করবেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তিনি কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ বা পরামর্শ মতোই তা করবেন। এরূপ বিধানই রয়েছে আমাদের সংবিধানে। তাহলে কেউ যদি বলে সার্চ কমিটি প্রকৃত প্রস্তাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পছন্দমতো লোকদের নিয়েই হবে, তাহলে কি খুব একটা ভুল হবে। যাকগে। দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়। তবে একটা বড় রকমের ক্যাচাল যে লাগতে পারে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে, তা বোধ হয় কানাও দেখতে পাচ্ছে। আমার মতো সাধারণ পাবলিকের একান্ত কামনা : মাবুদ, সব কিছুর ওপরে আমার দেশ ও দেশের শান্তিশৃঙ্খলা, তা যেন ঠিক থাকে।

২.

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে খবরটা শোনার পর মনে হলো যেন বুকের ওপর থেকে একটা জগদ্দল পাথর নেমে গেল। কোন খবর? আবার কোন খবর, ক’দিন ধরে সব খবরকে ছাপিয়ে খবর তো একটাই : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভিসি খেদাও আন্দোলন ও তার ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে কতিপয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর আমরণ অনশন ধর্মঘট। এই অনশন ভাঙাতে সরকার-বেসরকার সবার অনুরোধ-উপরোধ, হুমকি-ধমকি, তায়-তদবির ফেল মারায় আমার, এবং নিশ্চয়ই আমার মতো অনেকের মনে শঙ্কা জাগে, আল্লাহ না করুন, কোনো রকম দুর্ঘটনা যেন না ঘটে। তাহলে আফসোসের আর সীমা থাকবে না। আর সেই সঙ্গে পরিস্থিতির যে মারাত্মক অবনতি হবে তা বলাই বাহুল্য। যাহোক, টিভি মারফত জানতে পারলাম শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক, জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবালের অনুরোধে তাঁর হাতে পানি পান করে শিক্ষার্থীরা অনশন ভঙ্গ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ। যে ইস্যু বা ইস্যুগুলো নিয়ে আন্দোলন তার সুরাহা এখন পর্যন্ত না হলেও শিক্ষার্থীরা যে তাদের প্রিয় শিক্ষকের অনুরোধে অনশন ভঙ্গ করতে সম্মত হয়েছে, সেটাই আপাতত বড় অর্জন। আমরা সংবাদমাধ্যমের মারফত জানতে পেরেছি, অনশনকারীদের কয়েকজনকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কারো কারো শারীরিক অবস্থা রীতিমতো সঙ্কটাপন্ন। যাক বাবা, অবশেষে এই ক্রাইসিস অবস্থার যে অবসান হয়েছে তাতেই আমরা খুশি। আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ দেই প্রফেসর জাফর ইকবালকে, যিনি বেশ কিছুদিন আগেই শাবিপ্রবি থেকে অবসর গ্রহণ করে চলে গেছেন। তবু ‘নাড়ির টানে,’ স্নেহের বন্ধনের দায় থেকে এই সঙ্কটকালে সরকারের অনুরোধে তাঁর ছাত্রছাত্রীদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন তিনি ও তাঁর সুযোগ্যা সহধর্মিণী প্রফেসর ইয়াসমিন হক।

এখানে স্বভাবতই একটা প্রশ্ন জাগে। প্রফেসর জাফর ইকবাল যেমন এই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষক, তেমনি শাবিপ্রবির মাননীয় উপাচার্য ও অন্যান্য অধ্যাপক-অধ্যাপিকারাও তো তাদের শিক্ষক। তাঁদের কারো কি প্রফেসর জাফর ইকবালের মতো ইচ্ছা হলো না ছেলেমেয়েদের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর? নাকি তাঁরা মনে করেন তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা নেই শিক্ষার্থীদের কাছে? অথবা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চান না তাঁরা? তাই যদি হয়, তবে তো এই এত বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নিয়ে দেশবাসীকে সত্যি ভাবতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি আস্থা-ভক্তি-বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ফাটল দেখা দেয়, তবে জ্ঞানচর্চার এই সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানটি গতিময় হবে কীভাবে? অবশ্য পত্রপত্রিকা ও টিভি মারফত আমরা জেনেছি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও কোনো কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ঘরমুখো করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তাঁদের চেষ্টা সফল হয়নি। প্রশ্ন জাগে, কেন? জাফর ইকবাল সাহেবের কথা তারা শুনল কিন্তু আর কারো কথায় কর্ণপাত করল না কেন।

এখানে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সম্পর্কের মৌলিক প্রশ্নটি সামনে এসে যায়। এই সম্পর্ক কি হেড অফিসের বড় বাবু ও তাঁর অধস্তন কর্মচারীদের সম্পর্কের মতো? নাকি পরিবারের জ্যেষ্ঠ-কনিষ্ঠ সদস্যের সম্পর্কের মতো, যেখানে পুরো সম্পর্কটি দাঁড়িয়ে আছে ভয়-ভীতি-আনুগত্য নয়, স্নেহ-প্রীতি-সম্ভ্রমের বন্ধনে। পরিবারে পিতামাতা, পুত্রকন্যার মধ্যে ছোটবড় অগ্রজ-অনুজ ইত্যাদি প্রকৃতিগত ধারণা (কনসেপ্ট) আছে এবং সেই সব ধারণা পরিবারের সদস্যদের পারিবারিক অবস্থান ও মর্যাদা নির্ধারণ করে ঠিকই, কিন্তু সব কিছুর ওপরে যে অদৃশ্য শক্তি কাজ করে তা হলো পরস্পরের মধ্যে বিরাজমান বিধিদত্ত মায়ার অদৃশ্য বন্ধন, স্নেহের টান। এই বন্ধন, এই টান এতই প্রবল যে অন্য কোনো শক্তি বা সামর্থ্য একজন পিতাকে স্বৈরাচারী বা একজন সন্তানকে বেপরোয়া করে তুলতে পারে না। যখনই এর ব্যতিক্রম ঘটে তখনই ভেঙে পড়ে পারিবারিক বন্ধন।

বিদ্যালয়—তা শৈশবের পাঠশালা কিংবা যৌবনের কলেজ-ইউনিভার্সিটি যাই হোক না কেন, তা কমবেশি গুরু-শিষ্যের পরিবার বই তো নয়। সেখানে পরিবারের কর্তা অর্থাৎ পিতা হচ্ছেন গুরু এবং পুত্র বা কন্যাটি শিক্ষার্থী। এখানে গুরু-শিষ্যের ভূমিকা পৃথক হলেও লক্ষ্য এক. বিদ্যালয়ের ঘোষিত কার্যক্রম সুচারুরূপে চালিয়ে নেওয়া। গুরু বিদ্যাদান করবেন এবং শিষ্য ও শিষ্যা তা গ্রহণ করবেন। এই কার্যক্রমে যত বাধাবিপত্তি, টানাপড়েন আসুক না কেন গুরু-শিষ্যকে তাদের জুটি অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে। এবং তা সম্ভব পারস্পরিক একটি সুন্দর বোঝাপড়ার মাধ্যমে। এখানে গুরু যদি শিষ্যের চাহিদা, তার সীমাবদ্ধতা, বয়োধর্ম ইত্যাদি স্বাভাবিক বিষয়গুলো অনুধাবন করতে ব্যর্থ হন, কিংবা শিষ্য যদি গুরুকে তাঁর কাঙ্ক্ষিত ও প্রাপ্য মর্যাদা ও সম্মান না দেন, তবে বিদ্যাদান ও গ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পড়তে বাধ্য। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি দেখে মনে হয় অন্তত এই মুহূর্তে ওই বিদ্যাপীঠে গুরু-শিষ্যের সম্পর্কে আন্তরিকতা ও পারস্পরিক সহমর্মিতা উধাও হয়ে গেছে। তা না হলে ইস্যু যাই হোক না কেন, শিক্ষকদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আলোচনায় না বসুন, আলোচনার প্রস্তাবে অন্তত তাঁদের প্রতিক্রিয়া কেন ব্যক্ত করবেন না। এমনকি যে উপাচার্যকে নিয়ে এত কথা, এত আন্দোলন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী তাও স্পষ্ট নয়। উপাচার্য নাকি ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে এনেছেন এবং সেই পুলিশ শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়েছে, এমনকি সাউন্ড-গ্রেনেড ছুড়েছে, যে সাউন্ড-গ্রেনেড সর্বশেষ কবে কোথায় কোন জঙ্গি দমনে ব্যবহৃত হয়েছে তা পাবলিক ভুলে গেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁরা উপাচার্যের অপসারণ চেয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছিলেন, অথচ উপাচার্য পুলিশ ডেকে এনে তাঁদের ওপর আক্রমণ করেছেন। এর বেশি আর কোনো কিছু জানা যায়নি। বরং উপাচার্য জনাব ফরিদ উদ্দিন একজন সৎ ও সদালাপী ব্যক্তি হিসেবেই পরিচিত। (যদিও সম্প্রতি এই সদালাপী ব্যক্তিটির মুখ ফস্কেই বোধ হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের সম্বন্ধে একটি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য বেরিয়ে পড়েছিল, যার জন্য দিন দুয়েক আগে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ফোন করে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তাঁর এ ধরনের উক্তি অবশ্যই অশোভন ও নিন্দনীয় এবং আমরা আশা করব, এ ধরনের মন্তব্য করার আগে তিনি বা তাঁর মতো মর্যাদাপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত মাননীয়রা আরো সতর্ক হবেন)।

তা যা বলছিলাম। যুদ্ধরত দুই দেশের মধ্যেও কিন্তু আলোচনার প্রস্তাব সচরাচর গৃহীত হয়। শাবিপ্রবির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আলোচনার দরজাটা বন্ধ রেখে কি সুবিবেচনার পরিচয় দিচ্ছেন? বিষয়টি তাঁদের আবারও ভেবে দেখতে অনুরোধ করব। মনে রাখা দরকার, তাঁরা আলোচনার টেবিলে না বসলে জনমনে নানা রকম প্রশ্ন দেখা দিতে পারে এবং যাঁরা সব কিছুতে ষড়যন্ত্রের পোকা খুঁজে বেড়ান তাঁরা নিজেদের মনের মাধুরী মিশিয়ে ইচ্ছামতো ‘কাইট ফ্লাইং’ শুরু করে আসল ইস্যুকে চাপা দিতে সচেষ্ট হয়ে উঠতে পারেন।

শিক্ষামন্ত্রী কিন্তু এই বিষয়ে তাঁর প্রথম বক্তব্যেই আলোচনার ওপরই জোর দিয়েছেন। আমরাও মনে করি ভুল-ভ্রান্তি যাই হয়ে থাকুক না কেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয় পক্ষই অবিলম্বে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় আলোচনায় বসা উচিত। আলোচনায় অন্তত সমস্যাগুলো চিহ্নিত হবে এবং অদূরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা মৎস্য শিকারিরা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার সুযোগ পাবে না।

শাবিপ্রবির এবারকার ঘটনার সূত্রপাত নাকি হয় বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের একটি ঘটনা থেকে। শোনা যায় ওই হলের প্রাধ্যক্ষ শিক্ষিকার অমানবিক আচরণের জন্য সাধারণ ছাত্রীদের ভেতর দীর্ঘদিনের ক্ষোভ জমা হয়ে আছে। তিনি তাঁর হলের ওই ঘটনার সুরাহা করতে ব্যর্থ হলে ছাত্রীরা বিষয়টি উপাচার্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। সেখানেও বিষয়টির নিষ্পত্তি না হওয়ায় স্ফুলিঙ্গটি দ্রুতই দাবানলে পরিণত হয়। আমরা জানি না বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান্যবর শিক্ষকবৃন্দ যেখানে সারাক্ষণ নিঃশঙ্কচিত্তে ভীতিপ্রদ অঙ্কশাস্ত্র, পদার্থবিদ্যা অপদার্থবিদ্যা ইত্যাদির জটিল সমস্যার সমাধান দিচ্ছেন চোখের পলকে, সেখানে তাঁরা শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত বিষয়গুলোর সমাধান দিতে পারলেন না কেন। আসলে মনে হয় শিক্ষকরা তাঁদের অভিভাবকসুলভ দায়িত্ব পালনে সঠিক ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে যেসব সমস্যার কথা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে উঠে এসেছে—যেমন : সিটের সমস্যা, ডাইনিং হলের খাবারের মান, কোনো কোনো ছাত্রসংগঠনের নেতাদের ‘দাদাগিরি’ ইত্যাদি—তা দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর বেলায়ই প্রযোজ্য। আর এসব সমস্যা সম্বন্ধে কর্তৃপক্ষ যে অবহিত নন তা নয়। কিন্তু এগুলো সমাধানের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের আন্তরিক প্রয়াস বা উদ্যোগ কখনো তেমন একটা দেখা যায়নি। এবার প্রফেসর জাফর ইকবালকে নাকি উচ্চ পর্যায় থেকে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। দেখা যাক কী হয়। কর্তৃপক্ষ যদি তাঁদের প্রতিশ্রুতি থেকে ব্যাক আউট করেন তাহলে কিন্তু খবর আছে। তখন এবারকার আন্দোলনের ‘স্নোবল ইফেক্ট’ হয়তো শুরু হয়ে যাবে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততার মধ্য দিয়ে, যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা আশা করব, কর্তৃপক্ষীয় মুঘল-ই-আযমরা যে ওয়াদা করে প্রফেসর জাফর ইকবালকে সিলেটে পাঠিয়েছেন তা যথাশীঘ্র সম্ভব বাস্তবায়নে আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন। (‘যো ওয়াদা কিয়া হ্যায় উহ্ নিভানা পড়েগা’)।

এই প্রসঙ্গে কান টানলে মাথা আসার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ব্যবস্থা, শিক্ষক রাজনীতি, ছাত্ররাজনীতি ইত্যাদি বিষয়গুলোও গুরুত্বসহকারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা দরকার বলে আমরা মনে করি। শিক্ষার্থীদের জাতীয় রাজনীতি থেকে বিযুক্ত করে জ্ঞানচর্চার পরিবেশ আরো পরিচ্ছন্ন করা বোধ হয় সময়ের দাবি। তেমনি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদেরও রাজনীতি নয়, জ্ঞানচর্চা, গবেষণা, পাঠদান ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি আরো নিবেদিত হওয়া উচিত। সর্বোপরি ভিসি, প্রোভিসি, প্রক্টর, প্রভোস্ট ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দলীয় ভিত্তিতে না হয়ে হতে হবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততার মাপকাঠিতে।

শাবিপ্রবির ঘটনাবলির মধুরেণ সমাপায়েৎ হোক এই কামনা করে শেষ করছি আজকের নিবন্ধ। আর আশা করব, দেশে যেন একটি নিরপেক্ষ, দক্ষ ও সৎ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়। মেরুদণ্ডহীন, অদক্ষ, সেবাদাস ‘বেহুদা’ কমিশন আর নয়।

 

লেখক : মোফাজ্জল করিম, সাবেক সচিব, কবি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004518985748291