ভুয়া নিয়োগে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

যখন যাকে খুশি তাকেই নিয়োগ দেন ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বনপাড়া আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এমদাদুল হক। নিমিষেই পরিবর্তন করেন স্বাক্ষরও। সরজমিন তদন্তকালে বেশ কয়েকটি ভুয়া নিয়োগ আর যোগদানপত্রের সন্ধান মিলেছে। আবার কিছু কিছু নিয়োগপত্র বৈধ থাকলেও সেগুলো অস্বীকার করছেন অধ্যক্ষ। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর অনেকের দাবি, ইতিমধ্যে এমন ভুয়া নিয়োগ বাণিজ্য করে অধ্যক্ষ হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকারও উপরে। আর তার এমন প্রতারণার শিকার হয়ে সহায় সম্বল হারিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন পাবিয়াজুড়ি গ্রামের শরিফুল ইসলাম, বনপাড়া গ্রামের রেজাউল ইসলাম ও ফুলপুরের বনপাড়া গ্রামের সিরাজ। এ ছাড়া হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, এমপিও যাচাই কমিটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে নিম্নমাধ্যমিক, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখায় এমপিওভুক্ত হয়। অভিযোগ উঠেছে- মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্তির আগে কাগজে কলমে অনেকেই ভুয়া নিয়োগপত্র সাজিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করেছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। যাদেরকে চাকরি দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই আজ বিতাড়িত। 

অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভুয়া  নিয়োগ আর যোগদানপত্র দিয়ে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। অনেকেই আবার প্রতারণার শিকার হয়ে দ্বারস্থ হন আদালতের।  পাবিয়াজুড়ি গ্রামের ভুক্তভোগী শরিফুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা বলে ১০ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ দেন। ১০ বছরের মতো চাকরিও করেন তিনি। এরপর আরও কয়েক ধাপে কয়েক লাখ টাকা নেন। এরপর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এমপিও’র ঘোষণা হলে তাকে বাদ দিয়ে অন্য আরেকজনকে নিয়োগ দেন। পরে মামলা দায়ের করেন শরিফুল।  বনপাড়া গ্রামের রেজাউল বলেন, লক্ষাধিক টাকা নিয়ে অধ্যক্ষ আমাকে নিয়োগ দেন। কয়েক বছর বিদ্যালয়ে ক্লাসও করি। এমপিও’র সময় হলে এমপি’র আবেদন করতে হবে এমন কথা বলে কৌশলে আমার কাছ থেকে নিয়োগের কাগজপত্র নিয়ে নেন। সরল বিশ্বাসে তাকে দিয়ে দিলে পরে শুনি আমাকে বাদ দিয়ে আ. ছোবানকে নিয়োগ দিয়ে দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, প্রতিষ্ঠানে মোট জনবল কাঠামোর সংখ্যা কতো তারও কোনো সঠিক হিসাব নেই। একই পদে একাধিক ব্যক্তিকে নিয়োগ দেয়ার বহু অভিযোগ রয়েছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে।  ভুক্তভোগীরা জানান, ল্যাব সহায়ক পদে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সাবিনা ইয়াসমিনকে নিয়োগ দিয়ে তার স্থলে তাহমিনা সুলতানা শাম্মী, ইতিহাস বিজ্ঞান পদে ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে শরিফুল আলমকে নিয়োগ দিয়ে তার স্থলে মাহমুদা খাতুন, ধর্মীয় শিক্ষক পদে এক লাখ টাকার বিনিময়ে রেজাউল ইসলামকে নিয়োগ দিয়ে তার স্থলে আ. ছোবানকে নিয়োগ দেন। এ ছাড়া রায়হান ইয়াসমিন, মোফাজ্জল হোসেন, সামাদুল ইসলামসহ অনেকের কাছ থেকেই নিয়োগ দেয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। 

বনপাড়া আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ এমদাদুল হক বলেন, নিয়োগ দেয়ার নামে কোনো টাকা পয়সা নেই নাই। আত্মীয়স্বজন যারা তাদেরকে যোগ্যতা অনুযায়ীই চাকরি দিয়েছি। হালুয়াঘাট উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে একটি অভিযোগের তদন্ত চলছে। স্বাক্ষর জালিয়াতিসহ বেশকিছু অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন দেয়া হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু নূর মো. আনিসুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনিয়ম আর নিয়োগের বৈধতা না থাকায় কয়েকজন শিক্ষকের এমপিও আবেদন বাতিল করা হয়েছে। তদন্ত করে অনিয়ম পেলে আর কাউকে এমপিও দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে - dainik shiksha ভিকারুননিসার সেই ফৌজিয়া এবার ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ার দৌড়ে ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য - dainik shiksha ১৮ দিনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছি : উপাচার্য উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত - dainik shiksha উপদেষ্টা আসিফ-নাহিদের ছাত্র সংগঠনের সব কার্যক্রম স্থগিত যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস - dainik shiksha যারা আপনাদের সেবা করবে তাদের ভোট দেবেন: সারজিস এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি - dainik shiksha এখনো প্রস্তুত হয়নি একাদশের, পাঁচ বইয়ের পাণ্ডুলিপি মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক - dainik shiksha মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকেও ১১ মাসের বেতন তুলেছেন শিক্ষক ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক - dainik shiksha ৬৬ জন ছাত্রকে পাঁচচুলো করলেন শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030221939086914