ভুয়া পিএইচডিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম

আমাদের বার্তা প্রতিবেদক |
জার্মান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক পদে নিয়োগ পান মো. মোয়াজ্জেম হোসেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো ভুয়া প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা পিএইচডি ডিগ্রি দিয়ে, এমনকি বিজ্ঞপ্তির কোনো শর্তই পূরণ না করে অধ্যাপক হন তিনি। একইভাবে, যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোষাধ্যক্ষ পদও নিজের করে নেন। 

 

 
 
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে সম্প্রতি বিষয়গুলো উঠে এসেছে। জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ বাগিয়ে নেয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে তদন্তেও। ইউজিসির গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি চলতি বছরের ২৭ জুন এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে মোয়াজ্জেম হোসেনের নিয়োগ বাতিল, কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির একাডেমিক, প্রশাসনিক ও আর্থিক অবস্থা করুণ ও শোচনীয় উল্লেখ করে সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনায় কমিটি গঠনের সুপারিশও করা হয়।
 
ইউজিসি সূত্র জানায়, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে জার্মান ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ইউজিসিতে লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। একই বছরের ২৬ অক্টোবর ইউজিসি অভিযোগ তদন্তে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয়। এতে আহ্বায়ক ছিলেন ইউজিসির তৎকালীন সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান। 
বাকি তিন সদস্য হলেন-ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ, উপ-পরিচালক রাবেয়া খন্দকার। সদস্য সচিব ছিলেন একই বিভাগের সহকারী পরিচালক মো. মুহিববুল্লাহ। কমিটির সদস্যরা সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এবং অভিযুক্ত মোয়াজ্জেম হোসেনের সাক্ষাৎকার নেন। গত ২৭ জুন চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
 
প্রতিবেদনে বলা হয়, মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জার্মান ইউনিভার্সিটির কোষাধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজবিজ্ঞান বিভাগে প্রফেসর পদে নিয়োগ পান। প্রফেসর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যেসব যোগ্যতা, শর্ত ও অভিজ্ঞতার উল্লেখ ছিলো, তার জীবনবৃত্তান্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো শর্তই পূরণ করে না। পিএইচডি ডিগ্রির বিষয়ে কমিটির সদস্যদের কাছে খোদ মোয়াজ্জেম হোসেন স্বীকার করেন, তিনি জানতেন না যে প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া।
 
এ ছাড়া মোয়াজ্জেম হোসেনের যেসব প্রকাশনা রয়েছে, তার কোনোটিই দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত নয়। কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধকে প্রকাশনা হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাজীবনে প্রথম বিভাগ বা শ্রেণির কথা উল্লেখ থাকলেও মোয়াজ্জেম হোসেনের কোনো স্তরে প্রথম বিভাগ বা শ্রেণি নেই। 
 
মোয়াজ্জেম হোসেনের নিয়োগ বোর্ডের নথিপত্র চেয়েও পায়নি ইউজিসি। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর নিয়োগ বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে সভাপতিত্ব করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শামসুদ্দীন। জালিয়াতি ও যোগ্যতা না থাকলেও কেন মোয়াজ্জেমকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো, জানতে চাইলে তদন্ত কমিটিকে তিনি জানান, সভায় সর্বসম্মতিক্রমে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো।
 
তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুযায়ী নিয়োগের জন্য কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য বা নথি তদন্ত কমিটিকে দেখাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তা ছাড়া নিয়োগ বোর্ডে সদস্যদের উপস্থিতির স্বাক্ষর সংবলিত নথি, নিয়োগের বিষয়টি সিন্ডিকেট সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে কি না, তার নথি চেয়েও পায়নি তদন্ত কমিটি। 
 
ইউজিসির তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে সব কিছুরই উল্লেখ করা হয়েছে। তাকে অপসারণ করতে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে মো. মোয়াজ্জেম হোসেনের একাধিক নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. এসএম ইকবাল হোসেন বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আমি দেখেছি। এই প্রতিবেদন এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে। 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি - dainik shiksha এমপিওভুক্তির নতুন আদেশ জারি জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha জবিতে ভর্তির প্রাথমিক আবেদন শুরু ১ ডিসেম্বর শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বড় বদলি কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন - dainik shiksha কুবির বঙ্গবন্ধু হল ও শেখ হাসিনা হলের নাম পরিবর্তন ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি - dainik shiksha ডিআইএ পরিচালক কাজী কাইয়ুম শিশিরকে বদলি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভা সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ - dainik shiksha সরকারি কলেজ প্রদর্শকদের পদোন্নতির খসড়া প্রকাশ এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক - dainik shiksha এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরো ১১ হাজার শিক্ষক পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন - dainik shiksha পঞ্চমে ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষা, বার্ষিকে ৪ স্তরে মূল্যায়ন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056240558624268