রাজধানীর এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পোগোজ ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল আলমের এমএ পাসের সনদ ভুয়া বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকরা। শিক্ষকদের অভিযোগ, সনদ জালিয়াতির অভিযোগ বন্ধ হয়ে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নেয়া সহকারী প্রধান শিক্ষকের এমএ সনদটি ভুয়া। এছাড়া ঘুষের কথা বলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, ভুয়া এমএলএম কোম্পানিকে টাকা দিতে বাধ্য করা, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে বিএড সনদ অর্জন করলেও ২০০২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে অবৈধভাবে বিএড স্কেল নেয়া, শিক্ষকদের ক্লাস নেয়া দেয়া, তাদের হুমকি দেয়া, অবৈধভাবে অতিরিক্ত বেতন ভাতা নেয়াসহ এক গুচ্ছ অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল আলম।
বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, প্রভাবশালী সহকারী প্রধান শিক্ষক শরিফুল আলমের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও তার বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কথা বলতে সাহস পান না। তার সঙ্গে একমত না হলে তিনি গুন্ডা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ডেকে এনে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদর্শন করেন। শিক্ষকরা বলছেন, সনদ জালিয়াতির অভিযোগে আদালতের নির্দেশে বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে এমএ পাস করেছেন শরিফুল আলম। তবে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষে সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা শিক্ষকদের জানিয়েছেন, ওই সনদপত্রটি তাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যু করা হয়নি।
শিক্ষকদের অভিযোগ, মো. শরিফুল আলম ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে মে মাসে স্কুলে চাকরিরত অবস্থায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএড পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু তিনি বিদ্যালয় থেকে কোনো ছুটি না নিয়েই ১০ মাসের নিয়মিত বিএড সম্পন্ন করেন। সে সময়ের বেতন-ভাতাও নিয়েছেন। কিন্তু তার বিএড পরীক্ষার সনদপত্রটি ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ইস্যু করা। কিন্তু তিনি বিএডের বেতন-ভাতা ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের মে মাস থেকেই উত্তোলন করছেন। শরিফুল আলম সিনিয়র শিক্ষক এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দুই পদের বেতন-ভাতা নিচ্ছেন বলে দাবি করেন শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়টির শিক্ষকরা জানান, মো. শরিফুল আলম ইউজিসি থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা আনতে কর্মকর্তাদের ঘুষ দেয়ার কথা বলে প্রতিজন শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ১২ হাজার করে নিয়েছেন। প্রতিজন খণ্ডকালীন শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে নিয়েছেন পাঁচ হাজার টাকা করে। সহকারী প্রধান শিক্ষক তার সহকর্মী শিক্ষকদের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে ডেসটিনির মতো এনএক্স নামক ভুয়া কোম্পানি ডেকে এনে সেখানে ৬-৭ হাজার টাকা দিতে বাধ্য করেছেন।
প্রভাত চন্দ্র বণিক নামের এক শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষক ষড়যন্ত্র করে বিদ্যালয় থেকে বের করে দিয়েছেন অভিযোগ তুলে শিক্ষকরা বলছেন, তিনি মশিউর রহমান, লিটন কর্মকার, সুরজিৎ পাল ও লিটনকে বিভিন্ন সময়ে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছেন। তারা কেউ শরিফুল আলমের ভয়ে মুখ খুলতে চান না। এছাড়া শরিফুল আলম খণ্ডকালীন শিক্ষকদের প্রভাষক পদে চাকরি দেয়ার নামে টাকা নিয়েছেন। মো. শরিফুল আলম সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে শিফট চার্জ বাবদ প্রতি মাসে ৪-৫ হাজার করে অতিরিক্ত বেতন নেন। কিন্তু তিনি বিদ্যালয়ে আসেন ১২টা থেকে ২টার মধ্যে আসেন। আবার কোনো কোনো দিন ৫টার আগেই বিদ্যালয় থেকে চলে যান। এছাড়া তিনি ক্লাস বণ্টন নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে বৈষম্য করেন বলেও অভিযোগ আছে।
জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল আলম। দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে করা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেছেন, চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেলেও অবৈধভাবে কর্মরত থাকা প্রধান শিক্ষক মনির হোসনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পকেট কমিটি গঠন করে অবৈধভাবে কর্মরত আছেন দাবি করে তিনি বলেছেন, প্রধান শিক্ষক মনির হোসেনই তার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন।
তিনি আরও বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষকের কতটুকু ক্ষমতা তা আপনারা জানেন। আমাদের নির্দেশে কেউ টাকা দেবে না। আমার ক্ষমতা নেই কাউকে বের করে দেয়ার। আমি শুধু সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে ক্লাস চালাই।
তবে, শিফট ইনচার্জ হিসেবে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সভায় সর্বসম্মতিতে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিফট ইনচার্জ হিসেবে আমাকে কিছু টাকা দেয়া হয়।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মনির হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলামের অভিযোগগুলোর বিষয়ে তিনি জানেন। ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। শিগগিরই এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রধান শিক্ষক আরও দাবি করেন, বয়স ষাট পূর্ণ হলেও তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্ত প্রতিষ্ঠানটিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়েছেন। তিনি এমপিও নিচ্ছেন না। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বয়স ষাট বছর পূর্ণ হওয়ার পরেও তিনি প্রতিষ্ঠান প্রধান পদে থাকতে পারেন বলে দাবি করেছেন মনির হোসেন।