যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভয় পাওয়ার কিছু নেই জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা যারা দেয়, তাদের দেশের নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। প্রয়োজনে বাংলাদেশও কাউন্টার স্যাংশন দেবে।
টানা পাঁচদিন জাতিসংঘে সিরিজ বৈঠক আর উচ্চপর্যায়ের সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণের পর শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেন সাধারণ পরিষদে।
এই কদিনে অন্তত দুই ডজন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে জাতিকে অবহিত করতে স্থানীয় সময় বিকেলে নিজেই সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
প্রায় ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে চলা মিট দ্য বাংলাদেশ প্রেসের এই আয়োজনের অধিকাংশ জুড়েই ছিল স্যাংশন আর নির্বাচনের প্রসঙ্গ। মার্কিন ভিসা নীতির ঘোর সমালোচনা করে শেখ হাসিনার আশ্বাস, ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা হুঁশিয়ারি করে বলেন, দেশের বাইরে থেকে ভোট বানচালের ষড়যন্ত্র হলে কাউন্টার স্যাংশন দেবে বাংলাদেশও।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্যাংশন দেয়ার ক্ষেত্রে একতরফা দেখলে তো হবে না। শুরুটা কারা করলো, সেটা আগে দেখতে হবে। সেটা দেখে স্যাংশন দেয়া হোক! কিন্তু শুধু যদি আওয়ামী লীগকে টার্গেট করা হয়, তাহলে আমার কিছু বলার নেই। তবে আমি কিন্তু কারও শক্তিতে বিশ্বাস করে ক্ষমতায় আসিনি। আমি ক্ষমতায় এসেছি জনগণের শক্তিতে। কাজেই কে স্যাংশন দিল, কে দিল না- তাতে কিছু এসে যায় না। আমার ছেলে তো এখানেই (যুক্তরাষ্ট্র) আছে। সে বিয়ে করেছে, এখানে সম্পত্তি আছে। বাতিল করলে করুক! এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমাদের তো বাংলাদেশ আছেই।’
গণতন্ত্র-মানবাধিকারের কথা বলে যারা স্যাংশন নিয়ে ছড়ি ঘোরাচ্ছে তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার সাফ জবাব, দেশের বাইরে থেকে ভোট বানচালের চেষ্টা হলে বসে থাকবে না বাংলাদেশও।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ অনেক বাধা অতিক্রম করেই সরকারে আছি। জনগণ ভোট দিলে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে, তারা সেটাতে স্যাংশন দেবে। আমারও কথা থাকবে, এই বানচালের চেষ্টাটা যেন দেশের বাইরে থেকেও না হয়। দেশের বাইরে থেকে এমনটা হলে দেশের মানুষও স্যাংশন দিয়ে দেবে।’
নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসীন হলে সংবিধান মাফিক সাজার মুখোমুখি হতে হবে বলে জানান সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, একমাত্র নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কেউ যদি ক্ষমতায় আসতে চায়, তবে তাদেরকে কিন্তু সাজা পেতে হবে। বাংলাদেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের আর কোনো সুযোগ নেই।
‘যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন ঘোষণায় অন্তত মানুষের জীবনগুলো বাঁচবে। কারণ অগ্নিসন্ত্রাস, জ্বালাও-পোড়াওয়ের মতো কাজ আর জামায়াত-বিএনপি করতে পারবে না’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ ছাড়া বিশ্ব নেতাদের কৌশলগত নীরবতায় অর্ধযুগেও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হওয়ায় কিছুটা আক্ষেপও ছিল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে। সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে। তবে এই নির্বাচন বানচালের জন্য দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। আর এজন্য দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।