ভোলায় গ্যাসের মজুত ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট: জ্বালানি উপদেষ্টা

দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

ভোলায় গ্যাসের মজুত ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এ সময় তিনি জানান, গ্যাস সংকট সমাধানে আরও ১০০টি কূপ খনন করা হচ্ছে। এ ছাড়া ডলার সংকটের কারণে দেশে বিদ্যুতের সংকট হবে না।  

প্রেস ব্রিফিংয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা বলেন, ‘ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই তথ্যটা যদি সঠিক হতো, তাহলে আজ আমরা উৎসব করতাম। তাহলে আমাদের গ্যাসের কোনো সংকট থাকত না। আমদানির প্রয়োজন হতো না।’

তিনি বলেন, ‘তাই যারা গ্যাস সেক্টর সম্পর্কে এবং গ্যাসের মজুত সম্পর্কে ভালো জানেন তাদের সঙ্গে আমরা বসেছি। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম, কানাডায় গ্যাসের মজুত বিশেষজ্ঞ হোসনে আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমামসহ কয়েকজনকে নিয়ে বসেছি।’

ভোলায় ৫ দশমিক ১০৯ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত রয়েছে বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর এবং বিশেষজ্ঞদের নিয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা। 

ব্রিফিংয়ে তিনি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) কর্মকর্তাকে ভোলায় গ্যাসের মজুতের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরার অনুরোধ জানান। বাপেক্স কর্মকর্তা জানান, ভোলার চরফ্যাশনে আমাদের কোনো সিসমিক সার্ভের ডাটা নেই। শাহবাজপুর, ভোলা এবং ইলিশা গ্যাসক্ষেত্রে ২ দশমিক ০৪৭ টিসিএফ (উত্তোলনযোগ্য ১.৪৩২ টিসিএফ) প্রমাণিত গ্যাস রিজার্ভ রয়েছে। ভোলা জেলার অন্তর্গত ৩টি (শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা) গ্যাসক্ষেত্রে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯টি কূপ খনন করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ভোলা এলাকায় বাপেক্স ও গ্যাজপ্রম যৌথভাবে প্রণীত সিসমিক ডাটা বিশ্লেষণ রিপোর্ট অনুযায়ী ভোলা জেলার দক্ষিণাংশে চরফ্যাশন এলাকায় ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ২ দশমিক ৬৮৬ টিসিএফ এবং শাহবাজপুর, ভোলা ও ইলিশা গ্যাসক্ষেত্র এলাকার নতুন জোনে ও গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যবর্তী স্থানে ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ২ দশমিক ৪২৩ টিসিএফ অর্থাৎ মোট ৫ দশমিক ১০৯ টিসিএফ গ্যাস রিসোর্স হিসেবে থাকতে পারে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছে।
রিপোর্টে ওই প্রাক্কলন নিশ্চিত করার জন্য বর্ণিত এলাকায় থ্রিডি সিসমিক সার্ভের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ওই দুটি এলাকায় ১০ শতাংশ সম্ভাব্যতা বিবেচনায় মোট ৫ দশমিক ১০৯ টিসিএফ সম্ভাব্য রিসোর্সের কথা উল্লেখ করে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ করেছে যা প্রমাণিত মজুত হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই।

একই রিপোর্টে চরফ্যাশন এলাকায় ৯০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে ১ দশমিক ১৩৪ টিসিএফ এবং তিনটি গ্যাসক্ষেত্র ও নিকটবর্তী এলাকায় ৯০ শতাংশ সম্ভাব্যতা হিসেবে শূন্য দশমিক ৬৭৫ টিসিএফ মোট ১ দশমিক ৮০৯ টিসিএফ গ্যাস হয়েছে বলেও জানান এই বাপেক্স কর্মকর্তা।
অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, গ্যাসের মজুত নির্ণয়ের জন্য প্রথমে সিসমিক সার্ভে করা হয়। তারপর সার্ভের তথ্য উপাত্ত দেখে কোম্পানিগুলো ঠিক করে সবচেয়ে বেশি কোথায় সম্ভাবনা রয়েছে গ্যাসের। সেখানে তারা ড্রিল করে। ড্রিল করে যদি গ্যাস পাওয়া যায় তখন তারা এটাকে প্রমাণিত মজুত হিসেবে ঘোষণা দেয়।
তিনি বলেন, প্রমাণিত কিংবা প্রভাবল না হলে আমরা কোনো গ্যাসের মজুত হিসেবে আনি না। মজুতের যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে সেটা মিস লিডিং। ভোলায় মোট গ্যাসের মজুত ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।

অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, ভোলাতে যে ৫ টিসিএফ গ্যাসের কথা বলা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ ভুল। এটা রিসোর্স হতে পারে। মজুত নয়, আপনি ড্রিলিং করে না পেলে মজুত বলতে পারবেন না।

পরে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, যেই জায়গাটার কথা বলা হচ্ছে সেখানে আমরা সিসমিক সার্ভে ও ড্রিলিং শুরু করব। বুধবার একনেকে চারটি কূপ খননের জন্য প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আশাবাদী হতে চাই। আমাদের গ্যাস প্রয়োজন, গ্যাসের অভাবে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাসের কারণে আমাদের শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যেখানে গ্যাসের সম্ভাবনা আছে, এটাকে আমরা বের করতে চাই। সেটাকে আমরা জাতির কল্যাণে ব্যবহার করতে চাই।

সারাদেশে আরও ১০০টি কূপ খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না এবং টেন্ডার দেওয়া হবে না। এসব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ কমিটির পরামর্শ নেওয়া হবে। কোনো অনিয়ম করতে দেওয়া হবে না।’ 

ভারতীয় কোম্পানি আদানির বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের বিষয়ে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, ‘বাজেট সহায়তা হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছে ১ বিলিয়ন ও এডিবির কাছে ১ বিলিয়ন ডলার চেয়েছে সরকার। এখান থেকে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পাওনা পরিশোধ করে সামনের সংকট কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হবে।’ 

রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চুক্তি বলবৎ থাকায় রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। চাইলেই চুক্তি বাতিল করা যায় না। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ এক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে সে বিষয়ে তদন্ত হবে বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাজপ্রম, এস আলম গ্রুপ ও সামিট গ্রুপ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে এ নিয়ে গঠিত নতুন কমিটি তদন্ত করবে। শ্বেতপত্র কমিটিও এ নিয়ে কাজ করছে। 

এ বিষয়ে ফাওজুল কবির বলেন, ‘আমরা চাই গ্যাসের যে সম্ভাবনা আছে তা বের করার। এখন থেকে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা ছাড়া কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হবে না এবং টেন্ডার দেওয়া হবে না। অতীতে যে চুক্তি হয়েছে তা পর্যালোচনা করা হবে। প্রতিটি চুক্তিতে ভালো কিছু বিশ্বাসের বিষয় থাকে। কিন্তু কোথাও কোথাও ধোঁকা দেওয়ার বিষয় রয়েছে। তাই দুটি কমিটি করা হয়েছে যা চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করবে।

লোডশেডিং কয়েকদিন বেড়েছিল। এখন কাটিয়ে উঠেছি। আমদানি করা বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমদানি করা বিদ্যুৎ বিলসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের কাছে এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের কাছেও এক বিলিয়ন ডলার সহায়তা চাওয়া হবে।
ফাওজুল কবির আরও বলেন, চুক্তি বলবৎ থাকায় রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট নিয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত নয়। চাইলেই চুক্তি বাতিল করা যায় না। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ করছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি - dainik shiksha শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবি কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha কারিগরি শিক্ষকদের অক্টোবর মাসের এমপিওর চেক ছাড় সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা - dainik shiksha সরকারি কর্মচারীদের ৯ দফা নির্দেশনা স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বেতন ছাড়া সব ফি বেঁধে দিলো সরকার সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha সব শিক্ষকের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বদলির নীতিমালা : সাক্ষাৎকারে শিক্ষা উপদেষ্টা ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম - dainik shiksha ঢাবিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা রেখেই ভর্তি কার্যক্রম ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত - dainik shiksha ক্যামব্রিয়ানের বাশারকে গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি - dainik shiksha শিক্ষক নিবন্ধন ভাইভা: অষ্টম দিনে যেসব প্রশ্নের মুখোমুখি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক - dainik shiksha ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করা কল্যাণের হবে না: ছাত্রদল সম্পাদক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002140998840332