মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আমার বাবার স্মৃতি

বুলবুল আহমেদ |

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চের পর থেকে রাজশাহীর লক্ষীপুর এলাকার বড় ভাইয়েরা আমাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া বাল্ব এনে দিতে বলতেন। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নষ্ট বাল্ব জোগাড় করে দিতাম। সে বাল্ব দিয়ে বোমা বানানো হতো। আমি তখন রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়ি।

৭ এপ্রিল দুপুরে ৩০ থেকে ৪০ জন ইপিআর আমাদের কোয়ার্টার্সের দিকে আসলেন। আমার বাবাকে বললেন, এই এলাকা এখন মুক্ত। পাকিস্তানের আর্মি এখন উপশহরে। আমরা ক্ষুধার্ত, আমাদের জন্য চাল-ডালের ব্যবস্থা করেন। মা তখন ধামায় চাল, ডাল, আলুসহ আরও কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিলেন। তারা নিজেরাই রান্না করলেন। আর অনেক বাংকার তৈরি করলেন। মাঝে মাঝে মা ইপিআরদের জন্য খাবার পাঠাতেন। আমরা গাছের কলা, তরমুজ এসব নিয়ে বাংকারে দিয়ে আসতাম।

ইপিআর পুলিশ ও সাধারণ জনতার সমন্বয়ে গঠিত প্রতিরোধ বাহিনী শক্ত অবস্থান নিয়েছিলেন নগরবাড়ী ঘাটেও। রাজশাহীতে অবস্থানরত পাকিস্তানি আর্মিদের উপশহর ঘেরাও করে রাখার পাশাপাশি তারা নগরবাড়ী ঘাট হয়ে উত্তরবঙ্গে পাকিস্তানিদের প্রবেশ প্রতিহত করছিল। কিন্তু এক পর্যায়ে বিমান হামলা করে ফেরি পার হয়ে নগরবাড়ী আসে পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের প্রতিহত করতে পথে গাছ কেটে ব্যারিকেড দেয় প্রতিরোধ বাহিনী। কিন্তু পাকিস্তানিরা তা সরিয়ে দুই দিনে রাজশাহী পৌঁছায়। 

এদিকে রাজাশাহী শহরের পাকিস্তান আর্মিদের প্রতিরোধবাহিনী ক্যান্টনমেন্ট আটকে রাখে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত। ১৪ এপ্রিল ইপিআররা যাওয়ার সময় হাসপাতালের সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলেন।

অনেকে আগেই হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের গ্রামে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। আমার বাবা আব্দুল বারী হাওলাদার কয়েকজন কর্মচারীকে অনুরোধ করেন, হাসপাতালে থাকার জন্য। কারণ ৬০-৭০ জন রোগী তখন হাসপাতালে ভর্তি ছিল। বাবার কথা ছিল, সবাই চলে গেলে হাসপাতালের রোগীরা না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবেন। তিনি এও বলেছিলেন, হাসপাতাল কম্পাউন্ডে রেডক্রসের পতাকা ওড়ানো, তাই আমাদের কেউ আক্রমণ করবে না।

এদিকে আমাদের সরকারি কোয়ার্টার্সটি রেললাইনের একদম পাশে ছিল। কিছুটা নিরাপদ থাকতে আমাদের পরিবার হাসপাতালের খালি থাকা নার্সেস হোস্টেলে এসে ওঠে।

কিন্তু সে আশাকে মিথ্যে প্রমাণ করে ১৪ এপ্রিল দুপুরে পাকিস্তানি আর্মি আসে টিবি হাসপাতাল কম্পাউন্ডে। প্রথমে তারা এসে চলে গেলেও তার একটু পর আবারও ফিরে এসে লাথি দিয়ে ভেঙে ফেলে নার্সেস হোস্টেলের দরজা। নামাজরত অবস্থায় পাকিস্তানি বাহিনী আমার বাবা, হাসপাতালের আরও দুইজন স্টাফ আব্দুল কাইউম ও হাবিবুর রহমানকে সবার সামনেই গুলি করে। পাশের ঘরে আমার বড় ভাই মাহমুদ হোসেন বাদল, মোহাম্মদ সেলিম ও আবুল ফজলকেও গুলি করে। আমরা তখন দিশেহারা। কী করব? হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নেই। রক্তাক্ত পুরো ঘর। বাড়িতে ডেটল-তুলা, গজ যা-ই ছিল তা দিয়ে রক্ত বন্ধ করতে চেষ্টা করি। আমাদের হাতের ওপর কাইউম, সেলিম মারা যান। বাবাও সন্ধ্যায় মারা যান। আমরা যখন মৃত বাবাকে নিয়ে ব্যস্ত, তখন বড় ভাই মাহমুদ হোসেন বাদল গুলিবিদ্ধ অবস্থায় খোঁড়াতে খোঁড়াতে অন্ধকারে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের চেষ্টা করেন। কিন্তু তখন কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না হাসপাতালে বাদল ভাইয়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এদিকে হাবিব ও ফজল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে মেডিক্যালে যান।

আমরা তখন তিনটি লাশ নিয়ে কী করব..কুল কিনারা পাচ্ছি না! বাইরে তুমুল ঝড়-বৃষ্টি। আমাদের সবার শরীর রক্তে ভেজা। মা আমাদের নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে রক্তমাখা এক কাপড়ে আম বাগানের ভেতর দিয়ে পালানো শুরু করলেন। সারারাত হেঁটে একটি গ্রামে পৌঁছাই। পরে হাসপাতালের পরিচিত কয়েকজন আমাদের নিয়ে যান তাদের গ্রাম মাঙ্গনপুরে। এক চেয়ারম্যানের বাড়িতে আমাদের আশ্রয় হয়। তখন রেডিওতে মাঝে মাঝেই ঘোষণা আসতে থাকে। যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের ২১ এপ্রিল থেকে কর্মস্থলে যোগদান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। একুশে এপ্রিল আমরা তিন ভাই সরকারি কর্মচারীদের সাথে রাজশাহীতে ফিরে আসি। কারণ, আমরা এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলাম। তিনটি লাশ রেখে এসেছিলাম তাদের কী অবস্থা, সেটা আমরা জানি না। গিয়ে দেখি লাশ তিনটি ফুলে, পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেক দূরে থেকেই উৎকট গন্ধ পাচ্ছিলাম। তাকিয়ে দেখি পুরো বাড়ি লুট হয়ে গেছে। অবশিষ্ট কিছুই নেই। খাবারের থালা বাসন পর্যন্ত নেই। পানির পাত্রটিও হানাদারদের নজর এড়ায়নি। লাশ দাফন করার জন্য কাফনের কাপড় খুঁজে পেলাম না কোথাও! 

উপায় না পেয়ে টিবি হাসপাতাল কম্পাউন্ডেই একটি গর্ত খোঁড়া হলো। বাড়ির পুরনো ছেঁড়া চাদর, জানালার পর্দায় প্রিয়জনদের লাশ মুড়িয়ে ভাঙা দরজা দিয়ে পর্যায়ক্রমে বাইরে নিয়ে আসি। বিশাল গর্তেই আমরা তিনজনকে রাখলাম। তারপর আবার বেলা থাকতেই ফিরে গেলাম সে মাঙ্গনপুর গ্রামে।

মাস দুয়েক ছিলাম ওই বাড়িতে। তারপর ফিরে আসি নিজেদের কোয়ার্টার্সে। তখন আমাদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। বাবা নেই, টাকা নেই, খাবার নেই। আমরা খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলাম। ওইদিকে বড় ভাই হাসপাতালে থেকে একটু সুস্থ হয়ে আমাদের বিভিন্ন জায়গায় পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছেন।

ভাইয়ের সন্ধান পাই অনেক পরে। সে তখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। আমরা স্বাধীনতার পর ডিসেম্বরের শেষদিকে ঢাকায় চলে আসি। তারপর থেকে প্রতিবছরই ১৪ এপ্রিলকে সামনে রেখে রাজশাহী টিবি হাসপাতাল  চত্বরে বাবার কবর জিয়ারত করতে যেতাম। কবরটি বেড়া দিয়ে ঘেরাও করে আসতাম। ফিরে আসার পর  সেই বেড়া কে বা কারা খুলে নিয়ে যেত।

যাই হোক, ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে আমি তখন ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকার চিফ ফটোগ্রাফার। সম্পাদক আমাকে বললেন, একজনকে রাজশাহীতে অ্যাসাইনমেন্টে পাঠাতে। আমি ইচ্ছা করে নিজেই অ্যাসাইনমেন্টটা নিলাম। কারণ অফিসের খরচে বাবার কবরটা জিয়ারত করে আসতে পারব। আমার সাথে আমার সহকর্মী টিটু দত্তগুপ্ত ছিলেন। আমি যখন টিবি হাসপাতালের বাবার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে জিয়ারত করছি-আমার সহকর্মী টিটু দত্ত বারবার আমাকে বলছেন, কী করছেন এখানে দাঁড়িয়ে জঙ্গলের মধ্যে? আমি ওকে বললাম, অনেক স্মৃতি আছে এই গাছের নিচে। তুমি আশেপাশে ঘোরো, আমি আসছি পরে।
আমরা টিবি হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক সাহেবকে প্রশ্ন করলাম, এই হাসপাতলে মুক্তিযুদ্ধে ক্ষয়ক্ষতি কী হয়েছিল? কে কে মারা গিয়েছিলেন? কেউ হতাহত হয়েছিলেন কিনা? উনি বললেন, এখানে মুক্তিযুদ্ধে কোন স্টাফ আহত বা নিহত হননি। হলে আমি জানতাম। কারণ এই হাসপাতলে আমি ৪ বছর ধরে কর্মরত। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্নি করতাম। এখান থেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম।

আমি তাকে আবার প্রশ্ন করি, আপনার হাসপাতালের একজন নাইটগার্ড আছেন সম্ভবত হাবিবুর রহমান নাম। দুই পা কাটা। হুইলচেয়ারে ঘুরে বেড়ান। কীভাবে হাসপাতালে ডিউটি করেন?

তিনি উত্তর দিলেন, সম্ভবত কোনো দুর্ঘটনায় তার পা কাটা গেছে।  সরকারি বিধায় হয়তো চাকরিটা যায়নি। আমি আবারও প্রশ্ন করলাম, আপনার এখানে আবুল ফজল নামে আরেকজন চাকরি করেন। ওনারও দুটো পা নেই। হুইল চেয়ারে চলাচল করেন। প্রত্যুত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ আমাদের হেড বাবুর্চি, এলপিআরে যাবেন কিছুদিনের মধ্যেই। সরকারি চাকরি পেতেও কষ্ট, যেতেও কষ্ট। কোনো দুর্ঘটনায় তাদের পা কাটা গিয়েছিল!

আমি আবার জিজ্ঞেস করি..এখানে আব্দুল বারী হওলাদার নামে একজন চাকরি করতেন, ঐ কোয়ার্টার্সে থাকতেন; আপনি কি চিনতেন তাকে? উনি বললেন, হ্যাঁ, উনি তো ঢাকাইয়া, আমি তাকে ভালো করে চিনতাম। আমি বললাম, উনি এখন কোথায়? তিনি উত্তরে বললেন, রিটায়ার্ড করেছেন। পরিচালক আমাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি তাকে চেনেন? আমি বললাম, হ্যাঁ, ভালো করে চিনি। জিজ্ঞাসা করলেন উনি  কোথায় ? আমি বললাম ওই যে সামনে দেখছেন আমগাছটি, ওই গাছের নিচে। অবাক হয়ে পরিচালক সাহেব বললেন, ‘মানে!?’ আমি বললাম, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বুধবার। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সেদিন এখানে ৬ জনকে গুলি করে। তিনজন মারা যান। যে তিনজন বেঁচে আছেন সেই তিনজনের দুজন হল ফজল এবং হাবিব। আরেকজন বারী সাহেবের ছেলে বাদল। আর বারী সাহেব কাইয়ুম এবং সেলিম  এই তিনজনকে সাতদিন পরে একটি গর্ত করে একসাথে দাফন করা  হয়। তিনি খুব আশ্চর্য হলেন এবং বললেন আমি এখানে চার বছর ধরে আছি কেউই আমাকে এসব কথা বলেনি। আপনারা সাংবাদিক তাই অনেক তথ্য আপনাদের কাছে আছে। আমি বললাম, আমি শুধু সাংবাদিকই না..সেদিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। পুরো ঘটনা আমার চোখের সামনেই ঘটেছিল। কারণ আমি বারী সাহেবের ছেলে। উনি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে স্নেহের সঙ্গে জড়িয়ে ধরে বললেন, তুমি বারী সাহেবের ছেলে এই পরিচয় তো আমার কাছে সবচেয়ে বড়। শুধু সাংবাদিক না, আরও বড় কিছু হলেও তুমি আমাদের সন্তান। আমি বললাম, কাকু একটু আগে যখন বাবার কবর জিয়ারত করছিলাম, আমার সহকর্মী টিটু দত্ত গুপ্ত জানতেন না যে এখানে আমি একটি কবর জিয়ারত করছি। আমাকে বারবার এখান থেকে চলে আসার জন্য বলছিলেন। আপনি যদি আমাকে অনুমতি দেন, আমি এই কবরটি ঘেরাও করে যেতে চাই। একটু ঘেরাও করে দিতে চাই যাতে লোকজন না বুঝে তিনজন শহিদকে অসম্মান না করে। এখানে তিনজন শহিদ শুয়ে আছেন।  তাদের একটু সম্মান দিতে চাই। উনি বললেন, চলো আমাকে দেখাও। আমি গিয়ে তাকে পুরো জায়গাটা দেখালাম। উনি আমাকে বললেন, আগামীকাল সকাল ১১ টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে তার সাথে দেখা করতে। আমি আর টিটু পরের দিন সকালে তারসাথে দেখা করতে হাসপাতালে যাওয়ার পথেই দেখি কবরের চারধারে একহাত পরিমাণ দেয়াল গাঁথা হয়ে গেছে। আমি পরিচালক সাহেবের সঙ্গে দেখা করতেই উনি বললেন ,তুমি যে কবরটি পাকা করতে চাও, সে বিষয়টি আমি তাদের বলেছি। কিন্তু তারা বললেন, আমরাই এই কবরটি ঘেরাও করে দেব যত টাকা লাগে। যে ঠিকাদার পুরো হাসপাতালে রেনোভেশন করছিলেন উনি বললেন, কয়টা ইট বালি সিমেন্ট লাগবে আমরাই এটা করে দেব। আপনাদের কাউকে কিছু করতে হবে না। পরবর্তীতে কবরটি ঘেরাও হয়ে গেল। আমাকে শুধু বললেন, তুমি ঢাকা থেকে তিন জন শহিদের নামের একটি পাথরের ফলক তৈরি করে নিয়ে আসবে। সেই কথামতো আমি ঢাকা থেকে একটি নামফলক লিখে রাখি এবং বড় ভাই বাদলকে সব ঘটনা খুলে বলি। কারণ মা প্রতিবছরই বাবার কবর জিয়ারত করতে আসতে চাইতেন। কিন্তু এই জঙ্গলের মধ্যে তিনজন শহিদ শুয়ে আছেন, সেটি মাকে দেখালে মা কষ্ট পাবেন। তাই মাকে আনা হয়নি। তখনই বড় ভাই বললেন, চল জুলাই মাসে আমরা সব ভাইবোন ভাতিজা ভাতিজি আর ভাগিনা ভাগনি মিলে একসাথে বাবার কবর জিয়ারত করতে যাব।

কবরের জন্য তিন জন শহিদের নামের পাথরের ফলকটি নিয়ে আমি তিন দিন আগে চলে যাই রাজশাহীতে। ফলকটিতে লেখা ছিল, ‘১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল বুধবার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শাহাদাত বরণকারী দেশমাতৃকার জন্য চরম উৎসর্গের সাক্ষ্য হয়ে পরম নিশ্চিন্তে এখানে ঘুমিয়ে আছেন শহিদ আব্দুল বারী হাওলাদার, শহিদ আব্দুল কাইয়ুম, শহিদ মোহাম্মদ সেলিম। তাদের প্রতি সালাম ও শ্রদ্ধার্ঘ্য। এ ফলকটি বসিয়ে একটি গরু, চারটি খাসি এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনা হয়। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ওখানে গরীব এবং বাবার সহকর্মীদের সাথে বসে এক বেলা খাব। ওখানকার হাসপাতালে রান্নাঘরে যত কর্মচারী ছিল তারা বলল আমরা নিজেরাই স্যারের রান্না করে খাওয়াবো। এজন্য ডেকোরেটরের দরকার নেই। আপনি শুধু টাকা দিন আমরাই বাজার করে যা যা লাগে সব করে রাখবো। কথামতো সব ঠিকঠাক করে রাখলো তারা। ঢাকা থেকে পুরো একটি বাস ভর্তি করে আমাদের পুরো পরিবার রাজশাহীতে আসলেন। সেদিন কোরান খতম, মিলাদ পড়ানো হলো। স্মৃতিচারণমূলক কথা বলেলেন বাবার সহকর্মীরা। তারা শোনালেন  কী হয়েছিল সেই দিন, তাদের সহকর্মী হিসেবে কেমন লোক ছিলেন এই তিনজন, তারা বর্ণনা করলো পাক হানাদার বাহিনী কীধরনের নির্যাতন করেছে সাধারণ মানুষের ওপর। আমার সন্তান তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সে জানল তার দাদার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কীভাবে নির্যাতন করে তাকে হত্যা করেছে। এর কিছুদিন পর পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের আমন্ত্রণে আমার পাকিস্তানে ১০ দিনের ভ্রমণে যাওয়ার কথা। তা শুনে আমার মেয়ে আমাদের চেয়ারম্যান সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরীকে ফোন করে বলে, কাকু, ৭১-এ আমার দাদাকে এই পাকিস্তানিরা গুলি করে হত্যা করেছে, বাবাকে পাকিস্তানে পাঠাব না। তার পরিবর্তে অন্য কাউকে পাঠাও। একথাটি আমি জানতে পেরেছি অনেক পরে। কারণ তখন ট্যুর ছিল, ভারত নেপাল পাকিস্তান থাইল্যান্ড। আমার চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম চৌধুরী আমাকে পাকিস্তান না পাঠিয়ে থাইল্যান্ডে পাঠান। থাইল্যান্ডে গিয়ে আমাকে বলে, তোমার যাওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানে তুমি কেন থাইল্যান্ডের আসলা জানো? আমি বললাম, না। উনি বললেন, তোমার মেয়ে তন্বী আমাকে ফোনে বলল, তোমার বাবাকে পাকিস্তানিরা গুলি করে হত্যা করেছে যেটা আমি জানতাম না। ওর অনুরোধে আমি তোমাকে পাকিস্তানি না পাঠিয়ে থাইল্যান্ড-এ পাঠালাম।

যাই হোক আমার বাড়িতে আমার সন্তানরা পাকিস্তানের কোনো ফল, ফুল, কাপড় বা গিফটও ঘরে ঢুকতে দেয় না। পাকিস্তানের কোনো গান বা টিভি চ্যানেল দেখতে দেয় না। আমার সন্তানরা পাকিস্তানকে ঘৃণা করে, তাই আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

লেখক : বুলবুল আহমেদ, ফটো এডিটর, দৈনিক আমাদের বার্তা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066580772399902