মহামারিতে নতুন দরিদ্র দেড় কোটি

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দেশে দারিদ্র্যের যে সংখ্যা, তার অর্ধেক করোনাভাইরাস মহামারির সময় নতুন করে দরিদ্র হয়েছেন। চাকরি ও ব্যবসা হারিয়ে তারা এই দুর্গতিতে পড়েছেন বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়। বুধবার রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে সরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত দুই দিনের ‘বিআইডিএস রিসার্চ এলামনাক ২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ তথ্য জানানো হয়। 

সংস্থার মহাপরিচালক বিনায়ক সেন জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ যে দারিদ্র্য হারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক বা ৯ শতাংশের মত নতুন দরিদ্র হয়েছে। এর আগে এরা নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উন্নীত হয়েছিলো। 

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ, অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ মহামারির ধাক্কায় অধোপতিত হয়েছে। করোনাভাইরাস মহামারি না হলে দেশের দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশের আশেপাশে নেমে আসতে পারতো। 

এসব নতুন দরিদ্র মানুষকে আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ রাখেন বিনায়ক। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কর্মসূচি নেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

বিআইডিএস প্রধান বলেন, তাদের সমীক্ষায় দেখা গেছে, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারি চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। 

শিক্ষা ও মানবিক পুঁজির বিকাশের ক্ষেত্রে শহরের দরিদ্র শ্রেণি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানান বিনায়ক। তাদের শিক্ষায় ফেরাতে বিশেষ শিক্ষা পুনরুদ্ধার কর্মসূচি চালু করারও পরামর্শ দেন তিনি। 

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিকমত বাস্তবায়নও দারিদ্র্য কমাতে বিশেষ অবদান রাখে বলে তিনি মনে করেন।

মহামারির সময়ও কমেছে দারিদ্র্য :

মহামারীর সময় দেশে দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল বলে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তার সমালোচনা করেন বিনায়ক সেন। তিনি মনে করেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করেছে তারা। 

তিনি বলেন, আমাদের সমগোত্রীয় (গবেষণা প্রতিষ্ঠান) কেউ কেউ তাদের তখনকার ২০২০ এর কাজের ভিত্তিতে বলেছিল যে, দারিদ্র্য প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে সারা দেশের ৮ বিভাগের ৬৪টি জেলার ৫ হাজার ৫৭৭টি পরিবারের ওপর একটি জরিপ চালিয়ে তখন দেশের দারিদ্র্য হার ৪২ শতাংশ হয়ে যায় বলে দাবি করে। সেটি দেশের সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়। 

সেই প্রসঙ্গ টেনে বিনায়ক বলেন, ফ্যাক্ট অব দ্য মেটার হচ্ছে সেই সময় বাড়লেও সেটা শুধু সাময়িক সময়ের জন্য। এটা ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেড়েছিল। জুনের পর থেকে এটা কমে আসা শুরু হয়েছিল। এরপর কোভিডের ওমিক্রন, ডেল্টা (ধরনের বিস্তার) ইত্যাদি পার হয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম দিক থেকেই দেশের অর্থনীতি স্বাভাবিক প্রবণতায় ফিরে আসতে শুরু করে।

বিনায়ক সেন বলেন, ২০১৯ এবং ২০২২ এর মধ্যে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার ৪ দশমিক ৩ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে। একই সময়ে চরম দরিদ্র পরিবারের অনুপাতও ৩ দশমিক ২ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে।

মহামারির ধাক্কায় অনেক মানুষ আত্মকর্মসংস্থানে ঝুঁকেছে বলেও বিআইডিএস এর সমীক্ষায় উঠে এসেছে। 

বিনায়ক সেন বলেন, কোভিডের আগে থেকে যাদের আর্থিক সমস্যা ছিল এবং যাদের কাছে দুঃসময়ের জন্য অর্থ জমা ছিল, তারাই এই সুবিধাটা নিয়েছেন। ওই সময় বেসরকারি এবং সরকারি, দুই পক্ষই নিজস্ব উদ্যোগে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থায়ন করেছে। এতে তথ্য প্রযুক্তি এবং কৃষি সম্প্রসারণ প্রযুক্তি কাজে দিয়েছে। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পমা মন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কোভিডের সময় নানা প্রতিষ্ঠান নানা রকম তথ্য দিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। তবে বিবিএস এর সর্বশেষ জরিপে যে দারিদ্র্য হার পাওয়া গেল তাতে দেখা যায়, আমরা সঠিক পথেই আছি।
 
মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে বৈষম্য। আমি মনে করি, এই বৈষম্য আমাদেরই সৃষ্টি। তাই আমরা নতুন সম্পদ সৃষ্টি এবং সেই সম্পদ সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ন্যায়ভিত্তিক সুষ্ঠু বণ্টনের মাধ্যমে বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে।

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ভিসি নিয়োগের দাবিতে এবার উত্তরবঙ্গ ব্লকেড বেরোবি শিক্ষার্থীদের দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের - dainik shiksha ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের ‘জাতীয় বীর’ ঘোষণার দাবি জামায়াতের শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা - dainik shiksha শিক্ষক আত্মগোপনে দায়িত্বে ছাত্ররা ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি - dainik shiksha ভারতে পাঠ্যবই ছাপানোর বিপক্ষে ৯২ শতাংশ বাংলাদেশি পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী - dainik shiksha ভয়ংকর বিপদের মধ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002575159072876