মা-ছেলে একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

মা ও ছেলে একসঙ্গে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এ খবরে আনন্দে ভাসছেন তাদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা। ইচ্ছে থাকলে যে উপায় হয়, সেটিই আবার প্রমাণ করলেন তিন সন্তানের জননী শেফালী আক্তার (৩৬)। তিনি ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলার শুশুতি বাজারের বই বিক্রেতা নূরুল ইসলামের স্ত্রী।

কৃষক বাবার অভাব-অনটনের সংসারে বড় হন শেফালী আক্তার। তাই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই উপজেলার শিবরামপুর এলাকার নূরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় তাকে। অদম্য ইচ্ছায় ফের শুরু করেন পড়ালেখা, ছেলের সঙ্গে অংশ নেন এবারের এসএসসি পরীক্ষায়। শেষ পর্যন্ত মা-ছেলে দুইজনই সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন। 

শুধু তাই নয়, ফলে ছেলের চেয়ে এগিয়ে আছেন মা। শেফালী আক্তার পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৭৫ এবং তার ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ পেয়েছেন জিপিএ ৪ দশমিক ৩৯। শেফালী আক্তার উপজেলার আছিম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ শুশুতি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। একসঙ্গে পাস করায় মা-ছেলে উভয়ই উচ্ছ্বাসে মেতেছেন। এমন ফলাফলে উচ্ছ্বসিত পরিবারের সদস্যসহ স্থানীয়রাও।

বয়সের বাধাকে উপেক্ষা করে ৩৬ বছর বয়সে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শেফালী আক্তার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা লোকমান আলী পাশের গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে নূরুল ইসলামের সঙ্গে তার বিয়ে দেন। এরপর আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। এরই মধ্যে তিন সন্তানের জননী হন। বড় ছেলে শাকিল হাসান অনার্স শেষ করেছে এবং ছোট মেয়ে নুপুর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে। চলতি বছর ফুলবাড়ীয়া উপজেলার আছিম বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মা এবং ছেলে কেশরগঞ্জ পালাশী হাটা স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেন।

ছেলের চেয়ে ভালো ফল করায় উচ্ছ্বসিত শেফালী আক্তার বলেন, শিক্ষার কোনো বয়স নেই। চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। আমার কষ্ট স্বার্থক হয়েছে। ভবিষ্যতে আমি পড়ালেখা অব্যাহত রাখবো। সবার দোয়া চাই।

ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদ বলেন, আম্মা পাস করায় আমি বেশি খুশি হয়েছি। শত কষ্ট হলেও আমরা পড়াশোনা চালিয়ে যাবো।

নূরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার স্ত্রীকে সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম করতে হয়। এরপরও এই বয়সে ছেলেদের সঙ্গে পড়াশোনা করার সাহস করাটাই অনেক বড় বিষয়। স্ত্রীর ফলে দারুণ খুশি আমি। পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আমি তার পাশে আছি, থাকবো।

প্রতিবেশী ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক হারুন আল মাকসুদ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, শেফালী আক্তার ও তার ছেলে মেহেদী হাসান মিয়াদের ফলে আমরাও আনন্দিত ও গর্বিত। এ বয়সে শেফালী আক্তার অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করেছেন এবং কৃতিত্বের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0045609474182129