মাংস বেচতে নিতে হবে লাইসেন্স

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দেশে এখন থেকে মাংস বিক্রির জন্য বিশেষ ধরনের লাইসেন্স নিতে হবে। এই লাইসেন্স নিতে ব্যবসায়ীদের সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। লাইসেন্স দেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। শুধু মাংস বিক্রি নয়, জবাইখানা ও মাংস প্রক্রিয়াকরণ কারখানা স্থাপন এবং পরিচালনার জন্যও অনুমতিপত্র নিতে হবে। এতে সর্বোচ্চ ৭০ হাজার টাকা খরচ হবে। তবে এ সিদ্ধান্তকে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, এই লাইসেন্স ফি এত টাকা রাখা ঠিক হবে না। এর প্রভাব ক্রেতাদের ওপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।

সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ-সংক্রান্ত এক অফিস আদেশ জারি করেছে। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী লাইসেন্স নিতে হবে। যে ব্যবসায়ীর মাংস প্রক্রিয়াজাত ও বেচাকেনার পরিমাণ যত বেশি তাকে তত বেশি টাকা ফি গুনতে হবে। অধিদপ্তরের আদেশে বলা হয়েছে, যেসব ব্যবসায়ী মাংস বা মাংসজাত পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ প্রতি সপ্তাহে এক টনের কম, তাদের আবেদন ফি হবে এক হাজার টাকা। ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স ফি দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা। এ ধরনের লাইসেন্স নবায়ন করতে ফি লাগবে এক হাজার ৫০০ টাকা। একইভাবে যাদের সপ্তাহে প্রক্রিয়াজাত ও বেচাকেনার পরিমাণ এক টনের বেশি, কিন্তু আট টনের কম, তাদের আবেদন ফি ২ হাজার ও লাইসেন্স ফি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ধরনের লাইসেন্সের নবায়ন ফি ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। আর সপ্তাহে মাংস প্রক্রিয়াজাত ও বেচাকেনার পরিমাণ আট টন বা তার বেশি হলে আবেদন ফি হবে ৩ হাজার টাকা, আর লাইসেন্স ফি ধরা হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। এ ধরনের লাইসেন্স নবায়ন ফি দিতে হবে ১৫ হাজার টাকা।

এতদিন এ ধরনের লাইসেন্স নেওয়ার কোনো নিয়ম ছিল না। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারে মাংস বিক্রেতারা কোনো ধরনের লাইসেন্স ছাড়াই পশু জবাই ও মাংস বিক্রি করে আসছেন। তবে শহরে মাংস বিক্রির জন্য ব্যবসায়ীদের পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। এখন থেকে গ্রাম ও শহরের সব মাংস ব্যবসায়ীকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিতে হবে। এ লাইসেন্স দেবেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পশু চিকিৎসক না হলে জেলা পশু চিকিৎসা কর্মকর্তা লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (লেজিসলেশন, প্রশাসন/নিবন্ধন/সার্টিফিকেশন) ডা. মো. ছরোয়ার হোসেন শিকদার বলেন, পশু জবাই এবং মাংস প্রক্রিয়াজাত ও বেচাকেনা করতে হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে অবশ্যই লাইসেন্স নিতে হবে।  [একই সঙ্গে সিটি করপোরেশন থেকেও ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। গ্রামের মাংস বিক্রেতাদের নিবন্ধনের আওতায় আনার জন্য ও পশুর দেহ থেকে মানব দেহে যাতে কোনো রোগবালাই না ছড়ায় সেজন্য এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় তিন যুগ ধরে মাংসের ব্যবসা করেন বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, যখন মাংস ব্যবসা শুরু করি তখন প্রতি কেজি মাংস ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ টাকা। সিটি করপোরেশনে ট্রেড লাইসেন্সের নবায়ন ফি দিতে হয়। হাট থেকে গরু কিনলে হাজারপ্রতি ৩৫ টাকা হাসিল দিতে হয়। প্রতিটি গরু জবাইয়ের জন্য দিতে হয় ৫০ টাকা।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে, বর্তমানে রাজধানীতে আট হাজার ও সারা দেশে ৮০ হাজারেরও বেশি মাংস ব্যবসায়ী রয়েছেন। জানতে চাইলে সমিতির মহাসচিব মো. রবিউল আলম বলেন, ভারতীয় মাংসে দেশের বাজার সয়লাব। এমন অবস্থায় লাইসেন্সের জন্য যদি কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়, তা ব্যবসায়ীদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়াবে। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের কিছুই জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা কোথায় গরু জবাই করবেন, তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেনি সরকার। ঢাকা সিটি করপোরেশন এখনো কোনো স্থান দিতে পারেনি। কোনো জায়গা না দিয়ে শুধু ১৫ হাজার টাকার লাইসেন্স দিয়ে এ দেশে সমস্যার সমাধান হবে না। এর প্রভাব পড়বে ক্রেতাদের ওপর।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, তিনটি ক্যাটাগরিতে মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স দেওয়া হবে। একজন ব্যবসায়ী যখন লাইসেন্স নেবেন, তখন তিনি কী প্রক্রিয়ায় জবাই করবেন, তা আমাদের জানাবেন। সবাই লাইসেন্সের আওতায় এলে যেখানে সেখানে যত্রতত্র পশু জবাই বন্ধ হবে। এতে সুস্থ পশু জবাই বাড়বে। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে তথ্যভান্ডার থাকবে। জনস্বার্থে সুস্থ পশু জবাই নিশ্চিত করতে অধিদপ্তর দিকনির্দেশনা দিতে পারবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি - dainik shiksha আগের নিয়মে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রন্থাগারিক নিয়োগের দাবি শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ - dainik shiksha শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! - dainik shiksha দীপু মনি-রতন সিন্ডিকেটের ফিরোজই শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ডি! বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড - dainik shiksha বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের হাতাহাতি, সভা পণ্ড শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ - dainik shiksha শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন - dainik shiksha অগ্রসর সমাজ তৈরির লক্ষ্যই বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048470497131348