মাদক মামলায় জব্দ গাড়ি ব্যবহার করতেন বিচারক

দৈনিকশিক্ষাডটকম ডেস্ক |

১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ জব্দ করা একটি ব্যক্তিগত গাড়ি হবিগঞ্জের এক আদালতের বিচারক নিজেই ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন। এমনকি  তিনি হবিগঞ্জ মালখানার ভারপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে থাকাকালে এক আদেশে নিজেই নিজেকে ওই গাড়ি ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন। এমনকি একপর্যায়ে গাড়িটি নিলামে অন্য এক ব্যক্তির নামে বিক্রি করে আবার নিজে ব্যবহার করতে থাকেন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর অবশ্য ওই বিচারক মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান গাড়িটি ফেরত দেন। এসব তথ্য মিলেছে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের এক আদেশ এবং গাড়ির মালিকের অভিযোগ থেকে।

বর্তমানে মাগুরায় যুগ্ম জেলা জজ হিসেবে কর্মরত আছেন মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান। 

জানা যায়, মালিক মো. আমজাদ আলী শেখ গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিতে হবিগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুবার আবেদন করলেও তা নামঞ্জুর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন। এ ছাড়া আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন এবং বিচার বিভাগের সচিব বরাবর অভিযোগ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে দেওয়া ব্যাখ্যায় ওই বিচারক দাবি করেন, আমজাদ আলী কোনো আদালতেই এমন কোনো কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি, যাতে গাড়ির মালিকানা প্রমাণিত হয়। তাই অভিযোগও সত্য নয়। তবে বিচারক সুলতান উদ্দিন অনুরোধ করেন, তাঁর কোনো পদ্ধতিগত বা অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি হয়ে থাকলে তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে বিবেচনা করতে।

আমজাদ আলী শেখের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার অবশ্য বলেন, ‘যে বিষয়ে বলছেন, তা আমরা জানি না।’

হবিগঞ্জ আদালতের নথি থেকে জানা যায়, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ এপ্রিল হবিগঞ্জের মাধবপুরে ১০০ বোতল ফেনসিডিল পাওয়ায় ওই প্রাইভেট কারটি জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার করা হয় ওই গাড়ির চালক মো. সাইদুর রহমান ও তাঁর সহযোগী মো. আবু সুফিয়ান শেখকে। দুই আসামি জামিন পেলেও গাড়িটি জব্দ রাখা হয়। একপর্যায়ে গাড়ির কোনো বৈধ দাবিদার না থাকা এবং পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকার অজুহাত দেখিয়ে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান গাড়িটি নিজের জিম্মায় নিয়ে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন। গাড়িটি ফিরে পেতে মালিক আমজাদ আলী শেখ ২০২০ সালের ১২ আগস্ট এবং ২০ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করলে দুবারই তা নামঞ্জুর করা হয়। পরে মূল মামলাটি বিচারের জন্য যায় হবিগঞ্জ অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে। আমজাদ গাড়িটি জিম্মায় নিতে সেখানেও আবেদন করেন। সেই আবেদন নামঞ্জুর হলে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হাইকোর্টে মামলা করেন। ২০২৩ সালের ২৫ মে সেই মামলার রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আমজাদকে গাড়ি বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতও এক আদেশে গাড়িটি মালিককে ফেরত দিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু তারপরও গাড়িটি ফেরত পাননি আমজাদ।

আলামতের গাড়ি বিচারকের নিজের জিম্মায় নিয়ে ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন  বলেন, ‘এটা করতে পারেন না। কেউ যদি নিজে নিজে ব্যবহার করেন, সেটা অবশ্যই অন্যায়।’

হবিগঞ্জ জেলা জজকোর্টে আমজাদের পক্ষের আইনজীবী মোজাম্মেল হক রাসেল বলেন, হাইকোর্ট আদেশ দেওয়ার পরও মালিক গাড়িটি ফিরে পাননি। আদালতকে জানানোর পর আদালত গাড়িটি ফেরত বা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দেন। তারপরও গাড়িটি পাওয়া যায়নি।

এদিকে হাইকোর্ট ও অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের নির্দেশের পরও গাড়ি ফিরে না পেয়ে আমজাদ আলী ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ডিসেম্বর আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে অভিযোগ করেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, হাইকোর্ট ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মে গাড়িটি তাঁর জিম্মায় দিতে রায় দেন। কিন্তু গাড়িটি তিনি ফিরে পাননি। সুলতান উদ্দিন প্রধান গাড়িটি নিলামে বিক্রি করে দেন। গাড়িটি নিলামে কেনেন রিপন নামের এক ব্যক্তি। অথচ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুন থেকে গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বিচারক নিজে।

গাড়ির মালিক আমজাদ আলী শেখ  বলেন, ‘বিচারক সুলতান উদ্দিন প্রধান গত ২০ জানুয়ারি গাজীপুরের কাপাসিয়ায় কাগজপত্র করে গাড়িটি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

বিচারাধীন মামলায় জব্দ থাকা আলামত উপযুক্ত আদালতের অনুমতি ছাড়া নিলাম এবং সেই গাড়ি বিচারকের ব্যবহার করার বিষয়ে হবিগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এপিপি ক্ষিতীশ চন্দ্র গোপ বলেন, আইনগতভাবে এটি পারেন না।হবিগঞ্জের তখনকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সুলতান উদ্দিন প্রধান ওই গাড়ি ব্যবহার করেন।  বৈধ দাবিদার না থাকা ও পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে বিচারক গাড়িটি নিজে ব্যবহারের অনুমতি নিজেই দেন।

উপযুক্ত আদালতের অনুমতি ছাড়া অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে গাড়িটি নিলামে বিক্রি করেন অন্যের নামে। জানাজানি হওয়ার পর গাড়ি ফেরত দেওয়া হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা - dainik shiksha পেছালো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষের পরীক্ষা প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ - dainik shiksha প্রশ্নফাঁসের মামলায় ১০ জনের কারাদণ্ড, খালাস ১১৪ শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা - dainik shiksha শিক্ষা ভবনের সেই বিপুলকে বদলি, গ্রেফতার চান এমপিও শিক্ষকরা পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি - dainik shiksha পলাতক ফাহিমার ক্যাশিয়ার কামালকে গ্রেফতারের দাবি দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি - dainik shiksha দীপু মনির ক্যাশিয়ার পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সচিব নাজমাকে বদলি ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস - dainik shiksha ঢাকা কলেজের নতুন অধ্যক্ষ অধ্যাপক ইলিয়াস রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা - dainik shiksha রাষ্ট্র পুনর্গঠনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইলেন প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না - dainik shiksha শিক্ষা কমিশন কেনো হলো না ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে - dainik shiksha ১৫ এলাকায় ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় হতে পারে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ও সবুজায়নের তথ্য আহ্বান please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048990249633789