নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে মাদকসহ তিন ছাত্রকে আটকের প্রতিবাদে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে পরীক্ষাকেন্দ্র তিন ঘণ্টা ধরে তালা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার দুপুরে ওই প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পর্ব সমাপনী পরীক্ষা ক্যাম্পাসের ভেতরে এ অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এরপরই আটক ওই তিন ছাত্রকে ছেড়ে দেয়ার দাবিতে পরীক্ষাকেন্দ্রের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বুধবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে দ্বিতীয় থেকে অষ্টম পর্বে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের পর্ব সমাপনী ব্যবহারিক পরীক্ষা হয়। কয়েকটি ধাপে এই পরীক্ষায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালে ক্যাম্পাসের ভেতরে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল। সেখানে মাদক সেবনরত অবস্থায় ওই প্রতিষ্ঠানের ডিপ্লোমা ইন সিভিল টেকনোলজির ষষ্ঠ সেমিস্টারের তৌহিদ, মারুফ ও রাসেল নামের তিন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা যায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এ অভিযানের পরই নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদক তানভীর ইসলাম ও সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রধান ফটকে ভেতর থেকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ক্যাম্পাস থেকে আটক ছাত্রদের ছেড়ে দেয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন এবং আগুন জ্বালিয়ে দেন। এতে ক্যাম্পাসে থমথমে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ক্যাম্পাসে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার সময় যেসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন, তাঁদের সবাইকে পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে বের করে ক্যাম্পাসের মূল ফটকের বাইরে বের করে দেয়া হয়। ছাত্রলীগের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে কয়েকজনকে মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক তালাবদ্ধ থাকে।
প্রায় তিন ঘণ্টা পর ক্যাম্পাসে এসে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে শিক্ষার্থীরা আবারও পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আটক ওই তিন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের কর্মী। তবে ছাত্রলীগের দাবি, আটক ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে নওগাঁ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাব্বির রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পরই ক্যাম্পাসে গিয়ে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। আটক ছাত্ররা কেউই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তৌহিদ নামে আটক শিক্ষার্থী ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী। সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। একজন মাদকসেবী কখনোই ছাত্রলীগের বন্ধু হতে পারে না। ছাত্রদল কর্মীকে ছাড়িয়ে আনতে যারা এমন ঘৃণিত কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ আবদুর রকিব বলেন, বহিরাগতরা মূল ফটক তালাবদ্ধ করলে প্রশাসনের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আটক শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা নেই বলে তিনি দাবি করেন। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তাঁদের সাজা হওয়া উচিত।
নওগাঁ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক লোকমান হোসেন বলেন, ‘আটককৃতরা পরীক্ষার্থী হওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে—এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। মাদকাসক্তদের সুস্থ জীবনে ফেরাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আটকদের কারাগারে প্রেরণ না করলেও মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঠানো হতে পারে।’