সম্প্রতি বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক শিক্ষাডটকমসহ অন্যান্য গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নীতিমালার ব্যপারে শিক্ষকদের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। কারণ, এ নীতিমালায় শিক্ষকদের অনেক যৌক্তিক দাবি পূরণ হয়েছে। যা আগে হয়নি। এর আগে গত ২৩ নভেম্বর মাদরাসার সর্বশেষ এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামো-২০১৮ এর সংশোধনী প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্ত মাদরাসার সে নীতিমালায় মাদরাসা শিক্ষকদের বহুদিনের কিছু দাবি পূরণ হলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক দাবিই পূরণ হয়নি। অধিকন্তু এখন দুই নীতিমালার মাঝে (মাদরাসা ও স্কুল-কলেজ) ব্যাপক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। যা দূর করা সময়ের দাবি। তা না হলে মাদরাসার শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার হবেন। এরকম কিছু অসঙ্গতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’
বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদে পদোন্নতি পেতে এবং ডিগ্রি কলেজে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে ১০০ নম্বরের নয়টি মূল্যায়ন সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে, কিন্তু মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় নির্ধারণ করা হয়নি।
বেসরকারি স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় যেসব প্রভাষকরা ৫০ শতাংশের আওতায় জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেননা তাদেরকে একই পদে চাকরির ১৬ বছর পূর্তিতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় এমনটি রাখা হয়নি।
স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় উচ্চ মাধ্যমিক কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে এমপিওভুক্ত হিসেবে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদে ন্যূনতম ৩ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ১২ বছরের অভিজ্ঞতার শর্তারোপ করা হয়েছে। আর মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ সমপর্যায়ের আলিম মাদরাসায় অধ্যক্ষ হতে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদধারীদের অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র উপাধ্যক্ষ বা সহকারী অধ্যাপক পদধারীদের অভিজ্ঞতার শর্তারোপ করা হয়েছে। আলিম মাদরাসার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতেও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক পদধারীদের অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে শুধুমাত্র সহকারী অধ্যাপক পদধারীদের অভিজ্ঞতা শর্ত দেয়া হয়েছে। যা আলিম স্তরের মাদরাসার প্রভাষকদের জন্য খুবই লজ্জাজনক।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন
স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় স্নাতক (পাস) মহাবিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ পদে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদধারীদেরকে অভিজ্ঞতার শর্তে (উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বা কলেজের অধ্যক্ষ না হয়েও) সরাসরি আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে; অথচ মাদরাসা এমপিও নীতিমালায় স্নাতক (পাস) মহাবিদ্যালয় সমপর্যায়ের ফাযিল স্তরের মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে জ্যেষ্ঠ প্রভাষক বা সহকারী অধ্যাপক পদধারীদেরকে অভিজ্ঞতার শর্তে সরাসরি আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়নি।
স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামোতে উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় বা কলেজে ‘অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর’ পদে দুইজন রাখা হয়েছে। আর মাদরাসা এমপিও নীতিমালায় উচ্চমাধ্যমিক সমপর্যায়ের আলিম স্তরের মাদরাসায় ওই পদে একজন রাখা হয়েছে।
স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় স্কুলের সহকারী শিক্ষকদের জন্য পদোন্নতিযোগ্য ‘সিনিয়র শিক্ষক’ পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। তবে, মাদরাসা এমপিও নীতিমালায় সহকারী শিক্ষকদের জন্য এ ধরনের পদ সৃষ্টি করা হয়নি।
স্কুল-কলেজের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় ‘গ্রন্থাগারিক’ ও ‘সহকারী গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগারদের’ শিক্ষকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাদরাসার এমপিও নীতিমালায় এসব পদধারীদের শিক্ষকের পদমর্যাদা দেয়া হয়নি।
লেখক : মো. নাসরুল্লাহ, প্রভাষক, নাঙ্গুলী নেছারিয়া ফাযিল মাদরাসা, কাউখালী, পিরোজপুর।