গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার ঠুটিয়াপাকুর আলহাজ একরাম উদ্দিন দাখিল মাদরাসার খেলার মাঠে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানের দক্ষিণ পাশে আগে ২০টি দোকানঘর নির্মাণ করা হয়। এখন পূর্বপাশে আরো ১৭টি দোকানঘর নির্মাণকাজ চলছে। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধেক জমি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার হচ্ছে। মাঠের জায়গা কমে যাওয়ায় খেলাধুলার সুযোগ থেকে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে। এ নিয়ে গত ২২ আগস্ট মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি রাশেদ চৌধুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন।
একাধিক শিক্ষার্থী বলে, ‘মাদরাসার দুই পাশে দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে খেলার মাঠ আগের থেকে অনেক ছোট হয়েছে। আমরা খেলাধুলা করতে পারছি না। দোকানঘরগুলোর ছাদ ঢালাই করা হয়েছে। অথচ আমাদের মাদরাসার শ্রেণিকক্ষ সংকট। বৃষ্টির সময় শ্রেণিকক্ষে পানি পড়ে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। শিক্ষক রয়েছেন ২৩ জন। বিজ্ঞান ও মানবিক শাখা মিলে শিক্ষার্থী প্রায় ২৫৯ জন। পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক ঘেঁষে এই মাদরাসা। আগে দক্ষিণ পাশে ২০টি দোকানঘর নির্মাণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানের মূল ফটক ঘেঁষে পূর্বপাশে আরো ১৭টি দোকানঘর নির্মাণের কাজ চলছে। প্রত্যেক দোকানঘর জামানত বাবদ ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। একটি দোকানঘরের মাসিক ভাড়া ২ থেকে ৩ হাজার টাকা।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, গাইবান্ধা-৩ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুমের মনোনীত মাদরাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুস সোবহানের যোগসাজশে এসব কাজ করে আসছেন মাদরাসা সুপার। এসব টাকা তিনি প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে কাজে না লাগিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন।
প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য রাশেদ চৌধুরী বলেন, আইন অনুযায়ী খেলার মাঠ খেলা ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার বা ভাড়া দেওয়া দ-নীয় অপরাধ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় মাদরাসা সুপার আইন অমান্য করে দোকানঘর নির্মাণ করেছেন। প্রতিষ্ঠানটি ৭২ শতক জমির ওপর নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এর প্রায় ৩০ শতক জমিতে দোকানঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দোকানি জানান, মাদরাসা সুপারের কাছে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা জামানত দিয়ে দোকানঘর বরাদ্দ নিয়েছেন তারা। মাসিক ২ থেকে ৩ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হয়।
মাদরাসা সুপার আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দোকানঘর নির্মাণের জন্য মাদরাসা পরিচালনা কমিটির অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। দোকান নির্মাণ করায় খেলাধুলার কোনো অসুবিধা হবে না। দোকানপ্রতি জামানত বাবদ ২ লাখ করে টাকা নেওয়া হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে মার্কেট নির্মাণের কাজ চলছে।’ আর অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, ‘খেলার মাঠ সংকোচন করে দোকানঘর নির্মাণের সুযোগ নেই। এ-সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’